অলিউর রহমান ফিরোজ
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি
একসময় গ্রামবাংলায় পালকি ছাড়া বিয়ের কথা চিন্তাই করা যেত না। বিয়েবাড়িতে পালকি আসেনি বলে কত যে বিয়ে ভেঙেছে তার ইয়ত্তা নেই। তখন গ্রামবাংলার জনপদ ছিল কাঁচা এবং মেঠোপথের। কোনো যানবাহনের পথ না থাকায় পালকিই ছিল নতুন বউ তুলে আনার একমাত্র বাহন। তখনকার পালকির বেয়ারা ছিল অনেক জোয়ান, তাগড়দার এবং শক্তিশালী। পালকিতে জামাই-বউ চড়ে বসলে ৪ জন বেয়ারা তা কাঁধে করে মাইলের পর মাইল মেঠোপথ ধরে কখনো বা জমির আইলের ওপর দিয়ে কখনো বা নদীর পাড়ের কাশবনের ভেতর দিয়ে তারা হেলেদুলে নতুন বউ নিয়ে জামাইয়ের বাড়িতে আসত।
পরিশ্রমের কাজ হলেও তাতে নানি-দাদি এবং মুরব্বিদের কাছ থেকে বকশিশও মিলত বেশ ভালো। গ্রামবাংলায় এখন উন্নয়ন ঘটে সড়কপথের বেশির ভাগই এখন পাকা। তাই কেউ আর পালকিতে চড়িয়ে নতুন বউ আনতে যান না। তবে এখন কিছু কিছু এলাকায় শৌখিন পালকি-বেয়ারা রয়েছে। তারাই মূলত এই ঐতিহ্যবাহী পালকির এখন ধারক-বাহক বলা চলে। তাদের কল্যাণেই মানুষ এখনো কিছু পালকির বেয়ারাদের মুখে গ্রামবাংলার গীত শুনতে পান। আগেকার দিনে বিয়ে মানেই ছিল আলাদা একটা আনন্দ উৎসব।
চারদিকে শোরগোল পড়ে যেত। পালকিতে বউ চড়িয়ে মুরব্বিদের হাতে মিষ্টি এবং বউয়ের কাপড়-গহনা নিয়ে জাগড় দিয়ে পথচলা ছিল অসাধারণ। কালের বিবর্তনে তা এখন বিলুপ্তের পথে। আগের পালকি এখন হেলিকপ্টারে রূপ নিয়েছে। আগে ছিল পালকিতে চড়ে নতুন বউ আনার বায়না। এখন তার বিকল্প হয়েছে হেলিকপ্টারে বউ আনা। তবে আগের মতো যেন আবার পালকি ফিরে আসতে পারে। তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আধুনিক যত যানবাহনে বউ আনা হোক না কেন। পালকির মর্যাদা এবং ভাবধারা এখনো কেউ কেড়ে নিতে পারেনি।
"