আরিফুর রহমান সেলিম
গঙ্গাবুড়ি ও হাঁসের ছানা
গঙ্গাবুড়ি ভীষণ খুশি। এত দিনে সে দারুণ কিছু বন্ধু খুঁজে পেল। বন্ধুগুলো কে তা তুমি হাজার ভেবেও বলতে পারবে না। তুমি বলবে ওর চাচাতো বোন, মামাতো ভাই কিংবা একমাত্র ভাই শুভ। কিন্তু না না গঙ্গাবুড়ির নতুন বন্ধু হলো ছোট্ট পাঁচটি হাঁসের ছানা। আজকেই এরা ডিম ফুটে পৃথিবীতে এসেছে। কি তুলতুলে হলুদ রঙের হাঁসের ছানা! দেখেই গঙ্গাবুড়ির কোলে নিতে ইচ্ছে করে।
গঙ্গাবুড়ি মাকে জিজ্ঞাসা করে মা হাঁসের বাচ্চাগুলো এত দিন কোথায় ছিল? মা বলেন, এত দিন ডিমের ভেতর ছিল। গঙ্গাবুড়ি আবারও প্রশ্ন করে, ডিমের ভেতর এরা কী করত? আমার মতোই পুতুল খেলত নাকি ফড়িং ধরতে যেত? সেখানে কি ওরা অ আ ক খ পড়ত, নাকি ছড়া পড়ত মা? গঙ্গাবুড়ির কথা শুনে মা খিল খিল করে হাসলেন। হাসতে হাসতে বললেন সেটা হাঁসের ছানার মাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো। বলেই মা অন্য কাজ করতে চলে গেলেন।
এবার গঙ্গাবুড়ি ভাবতে লাগল হাঁসের ছানার মাকে কী কী প্রশ্ন করা যায়। সে সিদ্ধান্ত নিল, হাঁসের মাকে প্রশ্ন করবে বড় হয়ে হাঁসের ছানাগুলো কী হবে? শিক্ষক হবে নাকি ডাক্তার হবে। গঙ্গাবুড়ির ছোট্ট মামা যে একজন শিক্ষক, সে চায় গঙ্গাবুড়ি শিক্ষক হোক কিন্তু গঙ্গাবুড়ির বড় মামা চায় গঙ্গাবুড়ি ডাক্তার হোক। গঙ্গাবুড়ি বুঝতে পারে না বড় হয়ে সে কী হবে। তার শুধু মনে
পড়ে বাবার কথা। বাবা বলেছে,
বড় হয়ে গঙ্গাবুড়ি যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। হাঁসের ছানার
মাও কি বলবে বড় হয়ে হাঁসের ছানাগুলো যেন হাঁসের মতো
হাঁস হয়।
গঙ্গাবুড়ির বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করে। গঙ্গাবুড়ির বড় ভাই শুভ আর ছোট্ট চাচ্চু স্বাধীন বৃষ্টি এলেই ছাদে বৃষ্টিতে ভিজে। নাচানাচি করে। কিন্তু গঙ্গাবুড়ি ভিজতে পারে না। আম্মু দেয় না। কান্না করলেও দেয় না। বৃষ্টিতে ভিজলে নাকি গঙ্গাবুড়ি ঠাণ্ডা লাগবে, সর্দি হবে, কাশি হবে, জ্বর হবে। গঙ্গাবুড়ি মন খারাপ করে মায়ের কোলে বসে বসে বৃষ্টি দেখে।
গঙ্গাবুড়ি ছাতা নিয়ে উঠানে যায়। ওমা উঠানে গিয়ে দেখে তুলতুলে হাঁসের ছানাগুলো মা হাঁসের সঙ্গে দিব্যি বৃষ্টিতে ভিজছে। প্যাক প্যাক করে গান গাইছে। নাচানাচি করছে। ওদের যদি ঠাণ্ডা লাগে এই ভেবে গঙ্গাবুড়ী তার মাথার ছাতাটা হাঁসের ছানাদের ওপরে ধরল। হাঁসের ছানার মা হঠাৎ কথা বলে উঠল, ও খুকি তোমার নাম কি গো? তুমি আমার বাচ্চাদের এত ভালোবাস কেন? এই বৃষ্টিতেও তুমি বাচ্চাদের জন্য ছাতা নিয়ে এলে কেন? গঙ্গাবুড়ি বলল, আমার নাম সামিয়া সুলতানা শুভা। আমার আব্বু আমাকে আদর করে গঙ্গাবুড়ি ডাকে। ছাতা নিয়ে এসেছি, কারণ আম্মু বলেছে বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাণ্ডা ও সর্দি হয়। গঙ্গাবুড়ির কথা শুনে মা হাঁস আর হাঁসের ছানাগুলো প্যাক প্যাক করে হাসতে লাগল। হাসতে সমস্বরে বলল, আমরা হলাম হাঁস। সারা দিন বৃষ্টিতে ভিজলেও আমাদের ঠাণ্ডা, সর্দি হবে না।
গঙ্গাবুড়ি এবার ভাবতে লাগল ইশ আমি যদি হাঁসের ছানা হতাম, তাহলে তো সারা দিন বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম। পানিতে সাঁতার কাটতে পারতাম। প্যাক প্যাক করে ডাকতে পারতাম। কিন্তু একটু পরই মনে হলো গঙ্গাবুড়ি আছি সেটাই ভালো। আমি কত আদর পাই। বাবা-মা-ভাই-দাদা-দাদি ছোট চাচ্চু সবার আদর। মানুষ না হলে এত আদর আমি কোথায় পেতাম।
"