আহমেদ রউফ

  ২২ জুন, ২০২৪

বাবা ও কাঁঠাল

পৃথিবীর বুকে বাবা হলো সবচেয়ে বড় উপহার, আর সেই বাবাকে আমরা অবজ্ঞা করি, ভুল বুঝি। মা গর্ভে ধারণ করেন আর বাবা সব সময় সন্তানকে মাথায় করে রাখেন। সন্তানের চাওয়া-পাওয়া সবকিছুতেই মূল্যায়ন করেন বাবা। সেই বাবাকেই আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না। অনেক সময় বাবাকে পরিচয় করিয়েও দিই না বন্ধুদের সঙ্গে। তখন কত কষ্ট পান বাবা একবারও বুঝতে চাই না। আজ একটি গল্প বলি-

রহিম মিয়ার দুই ছেলেমেয়ে। এখন আমণ্ডকাঁঠালের মৌসুম। আশপাশের বন্ধুদের বাবারা আমণ্ডকাঁঠাল নিয়ে আসেন তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য। সেগুলোই দেখে রহিম মিয়ার ছেলেমেয়ে। তাই বাবাকে এক দিন মেয়েটা বলে-

বাবা আজ কিন্তু তুমি একটা কাঁঠাল নিয়ে আসবা। আমরা কাঁঠাল খাব। রহিম মিয়া মনে মনে ভাবে; একবেলার খাবার জোগার করতে পারি না সারাদিন ভ্যান চালিয়ে। ভ্যান ভাড়া দিয়ে যে কয় টাকা থাকে, সে টাকা দিয়ে খাবার জোগার করতে আমার জান যায়! তবুও ছেলেমেয়েকে সান্ত¡না দিয়ে বলে- ঠিক আছে মা নিয়ে আসমু।

এই বলে রহিম মিয়া গ্যারেজে গিয়ে ভ্যান নিয়ে বের হয়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত। এখনো মহাজনের জমার টাকাও কামাতে পারেনি। ...ওদিকে ছেলেমেয়ের আবদার। ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারে সারাদিনের না খাওয়া পেট কেমন যেন আওরাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল নেই... ভাবে-

না দেখি আর একটা খ্যাপ মারতে পারলে কিছু বাজার-সদায় বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব।

রহিম মিয়ার চিন্তার কোনো শেষ নেই। ভাতের চিন্তা, ঘরের চিন্তা, ছেলেমেয়েদের চিন্তা। এমন চিন্তা সব বাবারই। কেমন করে পরিবারকে সবকিছু মিটিয়ে সুখে রাখা যায় সেই চিন্তাই সবার। কেউ পারে, আবার কেউ জীবনযুদ্ধ করে চলে রহিম মিয়ার মতো...।

এদিকে রাত প্রায় এগারটা বাজে। রহিম মিয়া কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছে। একটা দোকানে গিয়ে ছেলেটার জন্য একটা রুটি নিল। মনে পড়লো মেয়েটার কথা। ভ্যান নিয়ে আস্তে আস্তে সামনের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর দুটো কাঁঠাল পড়ে আছে। রহিম মিয়া ভ্যান থামিয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখে কাঁঠাল ঠিকই, কিন্তু পচা। তবুও কাঁঠাল দুটি ব্যাগে ভরে ভ্যানে উঠিয়ে যেতে লাগল। এমন সময় সামনে টহল পুলিশ, বস্তাবন্দি লম্বা কিছু একটা দেখে ভ্যান থামাল এবং বলল-

- বস্তায় কী?

রহিম মিয়া বলল-

- স্যার কাঁঠাল!

- কোমরে উঁচু এটা কী?

- স্যার একটা পাওরুটি আমার ছোট বাচ্চাটার জন্য নিচি।

এটা দেখে পুলিশের যেন গলা শুকিয়ে গেল; অনেকক্ষণ পর বলল... ও। এই দেখ তো বস্তায় কী। বস্তা খোলে দেখে দুইটা পঁচা কাঁঠাল, গন্ধ বের হচ্ছে। পুলিশ আবারও রহিম মিয়াকে বলল-

- এই পচা কাঁঠাল দিয়ে কী হবে, এগুলো তো খাওয়া যাবে না!

রহিম মিয়া বলল-

- স্যার আপনারা তো স্যার মানুষ। গরিবের ক্ষুদার কষ্ট কী বুঝবেন! আমার মেয়েটা কাঁঠাল খেতে বলছিল। আমার কাছে তো কাঁঠাল কেনার পয়সা নেই, আসার পথে দেখি রাস্তার ওপর কাঁঠাল দুইটা পইড়া রইছে। তাই নিয়া নিছি। তবুও মেয়েটার কাছে কইতে পারমু মারে তোর জন্য কাঁঠাল নিয়া আইছি। আমার মুকটা তো থাকব মেয়েডার কাছে। হের লাইগা...

পুলিশ বলল-

এই কাঁঠাল দুইটা ফেলে দাও তো।

রহিম মিয়া কয়-

স্যার গরিবের পেটে লাতি দিয়েন না।

- না না তুমি দাঁড়াও তোমার ব্যবস্থা হচ্ছে। টহল পুলিশ তার মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বলল, এই টাকাটা রাখো আজ তোমার মেয়েটার জন্য সুন্দর দেখে এবং মিষ্টি একটা কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাবা...

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close