ননী গোপাল চন্দ্র দাশ
বরাতের প্রতিজ্ঞা

বরাত ক্লাস সেভেনে পড়ে। পড়াশোনায় সে যেমন মেধাবী, ঠিক তেমনই ভদ্র আচরণের জন্য সবার প্রিয়।
বরাত স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। সে শুনেছে তার দাদা ছিল বাংলাদেশের নামকরা কৃষিবিজ্ঞানী। সে বিজ্ঞানী হতে চায়।
কিন্তু কী নিয়ে গবেষণা করবে তা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
বিজ্ঞানের সকাল শাখায় তার মেধা থাকলেও ইচ্ছে কিছু আলাদা, ভিন্ন রকম গবেষণা করার।
এক দিন সে টাইম ট্রাভেল বা সময় যাত্রা সম্পর্কে জানতে পারল। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল সম্ভব একটি বিষয়। বরাত জানতে পারল আমরা যদি সময়কে বশে আনতে পারি তাহলে সহজেই সময়ের আগে অথবা পেছনে যেতে পারব অর্থাৎ সময় যাত্রার মাধ্যমে অতীত ও ভবিষ্যতে যেতে পারব। আলোর গতিতে যেতে পারে এমন ডিভাইস যদি বানানো যায় তবে টাইম ট্রাভেল সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো আলোর গতিতে যেতে পারবে- এমন কোনো দ্রতগামী ডিভাইস এখনো আবিষ্কার হয়নি।
বরাতের বিষটি খুব ভালো লাগল।
সে চিন্তা করল এমন একটি ডিভাইস বানাতে পারলে আমাদের দেশ কত এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে কোনো শত্রু আক্রমণ করছে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে তা সম্পর্কে অবগত হয়ে আগে থেকে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
বরাত পণ করল সে বড় হয়ে সময় যাত্রার ডিভাইস বানাবে।
এরপর সে নিয়মিত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সাত দিন পর এক রাতে তার রুমে কে যেন এসেছে। গভীর রাত। দরজা বন্ধ তবু কার যেন বুটের খট খট আওয়াজ। বরাত পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল। ঠিক তখনই পেছনে এসে কে যেন দাঁড়াল। বরাত ভয় পেয়ে তার দিকে তাকাল কিন্তু বরাত যে ভয় পেয়েছে তা সে প্রকাশ করল না।
লোকটির মাথায় কাঁচা-পাকা চুল আর দাড়িতে ভর্তি। তার চোখ দুটো ছল ছল করছে। বরাত শান্ত গলায় বলল, আপনি কে? দরজা বন্ধ তবে রুমে ঢুকলেন কী করে? কোন দিক দিয়ে এসেছেন? লোকটি কোনো কথা বলছিল না। বরাত বলল, আপনি কে? পরিচয় দিন।
লোকটি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল, আমি তোমার ভবিষ্যৎ। আমি আজকে সময় যাত্রার ডিভাইসটি আবিষ্কার করতে পেরেছি। তাই আমি এক মুহূর্ত দেরি না করে আমার ছেলেবেলা দেখতে এসেছি। তোমাকে জানাতে এসেছি যে তুমি পেরেছো।
বরাত তো আবাক! কি বলে এই পাগল।
কিন্তু বরাতের মনে কৌতূহল হলো সে জিজ্ঞেস করল আপনি তাহলে আমি?
আপনার কত বছর লেগেছে এটি বানাতে?
আর আমি কীভাবে ডিভাইসটি বানালাম?
লোকটি মৃদু হেসে বলল, ত্রিশ বছর। কীভাবে বানালাম তা ভবিষ্যতে নিজেই জানতে পারবে কিন্তু সবার আগে দরকার ছিল দৃঢ় মনোবল আর অক্লান্ত পরিশ্রম। তুমি কী এ বিষয় নিয়ে সিরিয়াস ছিলে না? হ্যাঁ ছিলাম।
লোকটি বলল, এর জন্যই তুমি সাকসেস বরাত। মানুষ যখনই চিন্তা করে কোনো নতুন স্বপ্ন দেখে তখনই তার ভবিষ্যৎ রচনা হয়ে যায়। এ ছাড়া মানুষের দৃঢ়-সংকল্প আর অক্লান্ত পরিশ্রমে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
আজকে কোন দিন? আজকের দিনেই কি তুমি পণ করেছিলে?
বরাত বলল, না আজ থেকে সাত দিন আগে।
ওহ্ আমি তো সেই দিনটায় যেতে চেয়েছিলাম। ভুল করে সাত দিন পরে চলে এসেছি। যাই হোক ভালো থেকো বরাত। আর পড়াশোনা এভাবেই চালিয়ে যাও। আমি যে তোমার ভবিষ্যৎ এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার? ঠিক আছে শোনো, আজ থেকে দুদিন পর তোমার জ্বর হবে।
গুড বাই। এই বলে লোকটি কোথায় যেন ভ্যানিস হয়ে গেল।
বরাত ভাবছে সে কোথায় গেল?
সে কি আবার অতীত দেখতে গেল নাকি ভবিষ্যৎ!
"