হোসাইন আল-নাহিদ
রাফি যখন ম্যাজিশিয়ান
স্কুলের পাশে এক জাদুকর জাদু দেখাচ্ছেন। সেখানে ছেলে-বুড়ো অনেক লোকের ভিড়। সবাই অবাক হয়ে দেখছে জাদুকরের কলাকৌশল। তিনি এটা-সেটা দেখাচ্ছেন আর নানাজনকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন। বলছেন, এটা একদমই আসল জাদু। কোনো চালাকি বা কৌশল নেই। কেউ যদি ভুল ধরতে পারেন তাকে পাঁচ শ টাকা পুরস্কার দেব। অনেকেই এটা-সেটা বলছেন, কিন্তু কেউ তার কৌশল ধরতে পারেননি। সিফাত, রাফি, মায়া, সায়ান ও শাফি ওরা সবাই সেগুলো দেখছিল। হঠাৎ লোকটিকে উদ্দেশ্য করে রাফি বলে ওঠে, এগুলো সব কৌশলের খেলা। জাদু বলে কিছুই নেই। কৌশল জানলে এটা যে কেউ করতে পারবে। সবাই রাফির দিকে তাকিয়ে থাকে। বড়রাও যেখানে কিছু ধরতে পারছে না সেখানে ছোট্ট ছেলিটির মুখে এমন কথা! অবাক হওয়ারই কথা।
জাদুকর লোকটি মানতেই নারাজ। রাফিকে চ্যালেঞ্জ করে বসে, তুমি বলছো এগুলো কৌশল। যদি তাই হয়, আচ্ছা তুমিও করে দেখাও। যদি আমার মতো ম্যাজিক দেখাতে পারো, তাহলে পাঁচ শ টাকা পুরস্কার দেব। রাফি মনে মনে বলে এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই তো ছিলাম। দাঁড়াও তোমার জাদুর বড়াই বের করছি! রাফি বলে, আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাজি। অপেক্ষা করুন আর দেখুন। এই বলে পকেট থেকে এক শ টাকার একটি নোট বের করে। তারপর এটা সবার উদ্দেশে দেখায়। বলতে থাকে, এই এক শ টাকার নোটটি আমি এখন আগুনে পোড়াব। টাকা আগুনে জ্বলবে কিন্তু টাকা পুড়ে ছাই হবে না। যেমন আছে এমনই থাকবে! সবার মনোযোগ এবার রাফির দিকে। সবার চোখে-মুখে প্রশ্ন, ছেলেটি পাগল হয়েছে নাকি? টাকা পোড়ালে আবার সেই টাকা পুড়বে না! এটাও সম্ভব?
রাফি আবার বলে, কেউ শব্দ বা নড়চড় করবেন না। শুধু দেখবেন কী হয়। এই বলে বিড়বিড় করে কিছু একটা মন্ত্র পড়ে টাকাটিতে কয়েকটি ফুঁ দেয়। যেমনটা জাদুকর লোকটি করেন। এরপর এক শ টাকার নোটটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগুন জ্বলার পর আপনা-আপনি আগুন নিভে যায়। অবাক করার বিষয় হলো সত্যি সত্যি জাদু হয়ে গেছে! টাকাটি একদমই অক্ষত আছে। চারদিক থেকে সবাই হাততালি দিতে লাগল। সবার মনে তখন আবারও প্রশ্ন, এই ছেলেটি কি আসলেই জাদু জানে? কেউ কেউ প্রশ্নও করে কীভাবে করলে এটি? রাফি বলতে থাকে, এটি কোনো জাদু নয়। সম্পূর্ণটাই বুদ্ধির কৌশল। এটা চাইলে যে কেউই করতে পারবেন। রাফির সমবয়সি একটি ছেলে প্রশ্ন করে, তাহলে তুমি যে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ছিলে ওটা কী?
রাফি মুচকি মুচকি হাসে আর বলে, এটা সবার বিশ্বাস ধরানোর একটা কৌশল। যাতে সবাই মনে করে আসলেই আমি জাদু জানি! ছেলেটি আবার প্রশ্ন করে, আমরা কীভাবে করব এটি? আমাদেরও বিস্তারিত বলে দাও। রাফি বলে, শোনো তাহলে, আমি এখানে আসার আগে আগে এই টাকাটি ভিজিয়ে নিয়ে এসেছি। শুধু পানি দিয়ে নয়, পানির সমপরিমাণ অ্যালকোহল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে ভিজিয়ে এনেছি। সেই ভেজা টাকাটাই এখানে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছি। তাতেই এমন হয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো, অ্যালকোহল একটি উচ্চ উদ্বায়ী তরল পদার্থ। ফলে সাধারণ তাপমাত্রাতেই এটির বাষ্পীভবন ঘটে। অ্যালকোহল বাষ্পের জ্বলন অঙ্ক খুবই কম। এর ফলে বাষ্পটিতে খুব সহজেই আগুন ধরে যায়। এদিকে পানির মিশ্রণ থাকায় এক শ টাকার নোটটি না পুড়ে অ্যালকোহলই পুড়তে থাকে। পানির মিশ্রণটি এক প্রকার নোটটির জন্য দেয়াল বা জ্যাকেটের কাজ করে। ফলে আগুনের তাপ টাকায় লাগতে পারে না। যার কারণে অ্যালকোহল পোড়া শেষ হলেই আগুন আপনা থেকে নিভে যায়। এটাই হলো ম্যাজিকের গোপন রহস্য। রাফির মুখে এমন সোজা ব্যাখ্যা শুনে উপস্থিত, ছোট-বড় সবাই হাততালি দিতে থাকেন।
রাফির বিজ্ঞান স্যারও সেখানেই ছিলেন। উনিও বিষয়টি দেখছিলেন। রাফির কথা শেষ হলে উনি সামনে আসেন। তারপর রাফির উদ্দেশে বলেন, রাফি, আমি তোমার পারফরম্যান্সে খুবই খুশি হয়েছি। আমার পক্ষ থেকে পুরস্কার পাওনা রইলে। তুমি শিগগিরই আমার চেম্বারে এসে নিয়ে যেয়ো।
এদিকে জাদুকর লোকটির মুখটা হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে! আজকে তার চাপাবাজির ব্যবসা সব ভেস্তে গেল! কথামতো পাঁচ শ টাকা পুরস্কার দিতে বাধ্য হলো! রাফি টাকাটা নিয়ে হাসতে হাসতে চলে এলো। সিফাত, মায়া, সায়ান, শাফি ওরাও মুচকি মুচকি হাসে। কেননা সবাই মিলেই এই প্ল্যানটি করেছে। গতকালই কেরামত আলী দাদুর ল্যাবরেটরিতে গিয়ে এই ম্যাজিকটি দেখেছিল। অবশেষে ম্যাজিশিয়ান দাদুর ম্যাজিক কাজে লেগেছে! উপহারের পাঁচ শ টাকা দিয়ে পাঁচজনে পাঁচটি বই কেনে। বুঝতে কি পারছো, ওরা কী বই কিনতে পারে? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো, বিজ্ঞানের নতুন বই।
"