সোলায়মান জয়

  ০৩ জুন, ২০২৩

আম কুড়ানো

বৈশাখ মাস শেষ শেষ। গাছে গাছে আমে রং এসেছে। অনেক আম পেকেছে। প্রচণ্ড রোদে অনেক আমে রং এসেছে সময়ের আগেই। ধান কাটা শেষের দিকে। বাড়ি বাড়ি ধান কাটার আমেজ। সেই সঙ্গে গ্রীষ্মের খরতাপ। তালহা বাবা-মায়ের সঙ্গে দাদুর বাড়ি এসেছে। স্কুল ছুটি। সেই সঙ্গে গ্রামে ধানের কাজে দাদুকে সাহায্য করতে এসেছে।

দাদুবাড়ি অনেক আম, কাঁঠাল ও লিচুগাছ আছে। গ্রামের চাচাতো ভাই মঈন। বাবার সঙ্গে গ্রামেই থাকে ওরা। সমবয়সি হওয়ায় তালহা আর মঈন খুব ভালো বন্ধু। গ্রামের ছেলে হওয়ায় মঈন একটু বেশি চঞ্চল। গাছে ওঠে আমপাড়া। পানিতে ডুব-সাঁতার খেলা বা বৃষ্টিতে ভেজা। এগুলা মঈনের নৃত্যদিনের কাজ।

তবে এসবে তালহার অভ্যাস নেই। সেই সঙ্গে আছে কৌতূহল। আজ ধান কাটা শেষ। এখন শুধু ধানের খড় শুকিয়ে পালা দেওয়ার সময়। মাঠে মাঠে খড় শুকাতে দিয়েছে। সেই খড়ের ওপর তালহা আর মঈন খেলা করছিল। ক্ষণেই আকাশ কালো হয়ে এলো। সবাই ব্যস্ত খড়গুলো গুছাতে। যেন বৃষ্টির জলে আবার ভিজে না যায়।

এদিকে তালহা আর মঈন চলে গেল। বাগানে লাল টকটকে আমগাছে ঝুলছে। আকাশে অনেক মেঘ। সেই সঙ্গে গুড়ুম গুড়ুম ডাক। এই ঝড় এলো বলে। তালহা ভয় পাচ্ছে। কিন্তু মঈন অভয় দিয়ে বলছে। ভয়ের কিছু নেই। ঝড় এলে ওই পাকা পাকা আম পড়বে। তখন আমরা আম কুড়াবো আর মজা করে খাব। তালহার কিছুটা ভয় করলেও আনন্দও হচ্ছে।

আগে কখনো ঝড়ের মাঝে আম কুড়ায়নি। ঝড় শুরু হয়ে গেল। সেই সঙ্গে বাগানে এলো আরো গ্রামের কিছু ছেলেমেয়ে। আকাশ, শিলা, শিমুল এসেছে আম কুড়াতে। গ্রামে ঝড়ের মাঝে আম কুড়ানোর আসল মজা পাচ্ছে তালহা। ঝড় শুরু হলো। এলোমেলো দমকা বাতাস। ধুলো এসে চোখেমুখে লাগছে। এসবে কোনো পাত্তা নেই কারো। একটু পর পর ঠুসঠাস আম পড়ছে আর সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে ধরতে।

গাছ তালহাদের হলেও। ঝরে পড়া আম আগে যে ধরতে পারবে আম তার। এই নিয়মটাও তালহার খুব ভালো লাগল। এতটা আনন্দ তালহা আগে কখনো পায়নি। আম কুড়াতে কুড়াতে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। তালহা বাড়ি যেতে চাইলেও মঈন আটকালো।

- এখনই তো আসল মজা! বৃষ্টি ভিজে ভিজে আম কুড়াবো। তারপর পুকুরে গিয়ে গোসল করব।

আকাশ বলল, চলো আমাদের কাকাদের বাগানে যাই। ওখানেও হয়তো অনেক আম পড়েছে। কাকাদের ধানের কাজ চলছে, তাই কেউ আজ বাগানের দিকে আসবে না। যেই কথা সেই কাজ। সবাই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এ বাগান থেকে ও বাগানে চলে গেল। অনেক আম পড়ে আছে। কিন্তু এত আম নেবে কীভাবে? সবাই নিজেদের গায়ের জামা খুলে সেই জামাতে করে আম নিতে থাকল।

বৃষ্টি কমে আসছে। সবাই ভিজে জবজব অবস্থা। তালহার কাশি শুরু হয়ে গেছে।

ওদিকে খড় তুলে সবাই যখন হাফ ছেড়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। তখন হঠাৎ ছেলেদের কথা মনে হলো। তালহা আর মঈন কোথায়? বাড়িতে তো নেই। খুঁজতে বের হবে এমন সময় তালহা আর মঈন বাড়িতে এসে হাজির। ওদের এ অবস্থা দেখে তালহার বাবা রাগারাগি শুরু করল। এমন সময় দাদু নুরুল সাহেব এসে ছেলেকে থামিয়ে বলল? ওর এই বয়সে তো তুমি নিজের পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় চলে যেতে আম কুড়াতে। আমি নিজেও এই বয়সে আম কুড়িয়েছি।

বৃষ্টি ভিজে কত ঠাণ্ডা জ্বর এসেছে। আম কুড়ানো যে কি আনন্দ আমার এখনো মনে পড়ে। বাবার কথায় তালহার বাবাও চুপ হয়ে গেল। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। সত্যিই ছোটবেলায় আম কুড়াতে কতই না আনন্দ ছিল!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close