আহমেদ রউফ
ভোর হলো দোর খোলো

এক দিন এক পরী...
জোছনা রাতের আলোয়!
পায়ে নূপুর...
সাদা সাদা দুটি ডানা।
আর চুলগুলো এলোকেশি...
জোছনা রাতে তারার সঙ্গে উড়ছে, তারারাও রাতের জোছনার আলোয় ঝিলমিল করে হাসছে; রাতজাগা পরীর সঙ্গে। যেন জোছনার আলোয় মিশে যাওয়া জোছনা পরী। ঐশি চেয়ে আছে জানালার ফাঁক দিয়ে। আর ভাবছে; বা! কি সুন্দর জোছনার জলের সঙ্গে সাঁতার কাটছে রাত জাগা পরী। ঐশির ভালো লাগছে পরীকে দেখতে আবার ইচ্ছে করছে পরীর সঙ্গে একটু কথা বলতেও...
পরী ঐশির মনের কথা বুঝতে পেরে, কাছে এলো ঐশির; কি ঐশি তুমি এখনো ঘুমাওনি। কী হয়েছে তোমার? কিছু হয়নি এমনিতেই ঘুম আসছিল না। তাই জোছনা রাতে আকাশের তারাদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করল।
: আর...
: আর...
: তোমাকে দেখে রূপকথা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। আমি দাদির কাছে অনেক পরীর গল্প শুনেছি! কিন্তু কখনো দেখিনি। আজ তোমাকে দেখে তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছিল, আর তা বলার আগেই তুমি নিচে নেমে এলে। আমার সঙ্গে কথা বলতে। আচ্ছা! তুমি কি মানুষের মনের কথা বলতে পারো...
: হ্যাঁ... বলতে পারি! আর বলতে পারি বলেই তো তোমার ইচ্ছের কথা বুঝতে পেরে তোমার সঙ্গে কথা বলতে এলাম। তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। তুমি তো গল্প শুনতে ভালোবাসো! তোমার দাদিমা তোমকে পরীর গল্প শোনাত; তাই তোমাকে দেখে দূরে থাকতে পারলাম না। আজ আমি তোমাকে একটা গল্প শোনাব। এক রাজপুত্রের গল্প।
: সত্যি!
: সত্যি...
: তাহলে তুমি ভেতরে আমার কাছে এসে বসো।
: আমি! না...না! জোছনা রাতে জোছনার আলোয় আমাদের থাকতে হয়। আমি এখান থেকেই তোমাকে গল্প শোনাব। জোছনার মতো উজ্জ্বল নক্ষত্রের এক গল্প। এক কবির জীবন আদর্শ...
তুমি তাকে চেনো! তোমাদের বইয়ে তার অনেক কবিতা আছে; তুমি তা পড়েছো। শিল্পীর আঁকা তার ছবি দেখেছে। সে ভালোবাসতো সবুজ মাঠ, পাখির কলকাকলি আর মুয়াজ্জিনের আজান। তাই সে লেখেছিল, ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই। যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।’ সে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ছোটবেলায় তাকে সবাই দুখু বলে ডাকত...
: হ্যাঁ...! আমি তার কবিতা পড়েছি;
ভোর হলো দোর খোলো
খুকুমণি ওঠো রে
ঐ ডাকে যুঁইশাঁখে
ফুল-খুকি ছোট রে।
খুলি হাল তুলি পাল
ঐ তরী চলল
এইবার এইবার
খুকু চোখ খুলল।
আলসে নয় সে
উঠে রোজ সকালে
রোজ তাই চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
: আমি তার কথাই বলছি। তুমি কি জানো কবির বেড়ে ওঠা ও তার জন্ম কোথায়?
: তা তো জানি না! তুমি কি আমাকে বলবে তার কথা।
: অবশ্যই বলবো...শুনো!
কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে, বাংলা ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারত বর্ষের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জাম্বুরিয়া থানার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম কাজী ফকির আহমদ ও পিতামহের নাম কাজী আমিনউল্লাহ। তার মায়ের নাম জাহেদা খাতুন ও মাতামহের নাম মুন্শী তোফায়েল আলী। একে একে চার ভাইয়ের জন্ম হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চার ভাইয়ের মৃত্যুর পর কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম; তাই তার নাম রাখা হয় দুখু মিয়া। নিম্নমধ্যবিত্ত অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা নজরুল মাত্র আট বছর বয়সে পিতৃহীন হন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে পিতার ইন্তেকালের সময় গ্রামের মক্তবে পড়তেন নজরুল। বাবার মৃত্যুর পর আর্থিক অনটনে নজরুল লেখাপড়া ভালোভাবে শেষ করতে পারেননি। অনেক দুঃখণ্ডকষ্ট সহ্য করে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে নিম্ন প্রাইমারি পরীক্ষায় পাস করে, সেই মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। পাশাপাশি হাজি পালোয়ানের মাজার ও পীর পুকুর মসজিদের খেদমতের কাজ নেন। তাতেও তার আর্থিক সংকট মেটেনি। শুধু তা-ই নয়; তার জীবন কাহিনি যদি সম্পূর্ণভাবে বলতে যাই, তাহলে হয়তো এ রকম কয়েকটি রাত পার হয়ে যাবে। তবু শেষ হবে না। তুমি একটি বুদ্ধিমতি মেয়ে তুমিও এক দিন বড় হবে এবং বিষদভাবে জানতে পারবে আমাদের এই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা। তখন তুমি এই পরীর কথা মনে করে বলবে। জোছনার আলোয় এক পরীর সঙ্গে রাজপুত্রের গল্প...
হঠাৎ ঐশির ঘুম ভেঙে যায়, জানালার দিকে তাকাতেই দেখে সকাল হয়ে গেছে, গাছে গাছে পাখিদের কিচিরমিচির কণ্ঠে মনটা ভরে যায় ঐশির। কিন্তু এতক্ষণ যে ঐশি গল্প শুনছিল জোছনা পরীর কাছে, সেই পরীকে আর দেখা যাচ্ছে না। ঠিক ঐশি বুঝতে পারল সে স্বপ্ন দেখছিল...
"