মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান
বাদুড় মশাই
এখন গ্রীষ্মকাল। কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম পড়ছে। গাছে গাছে ফল পাকানোর সময়। যেমন- আম, কাঁঠাল, লিচু...ইত্যাদি। তমালের মন ভালো নেই। সে ভাবতে থাকে- গরমের চেয়ে শীতকাল অনেক ভালো। যাই হোক, সেদিন দুপুর বেলার কথা। বাড়ির উঠানের ধারে ছিল একটা মস্ত বড় লিচুগাছ। তমাল তাকিয়ে দেখে- লিচুর গায়ে শুধু আবছা আবছা হলুদ আর লাল বরণ ধরেছে। বেশ ভালো লাগল তার। এবার শুধু অপেক্ষা গাছের মিষ্টি পাকা লিচু খাওয়ার ধুম।
দেখতে দেখতে কয়েক দিন কেটে গেল। লিচুগুলো পাকতে আর দেরি হলো না। হঠাৎ তার নজরে পড়ল গাছতলায় কয়েকটা লিচু পড়ে আছে। ব্যাপার কী? তমাল লকলকিয়ে গাছে উঠল। ওপরের ডালে একটু লক্ষ করল- সর্বনাশ! এ তো দুষ্টু বাদুড় মশাইয়ের কাণ্ড? বেশির ভাগ লিচুর গায়ে অর্ধেক করে কামড় বসিয়ে দিয়েছে। রাগে অভিমানে কিছুটা আগুন হলো। গাছ থেকে নেমে এসে বাবার কাছে নালিশ করল। বাবার বিষয়টা বুঝতে দেরি হলো না। মনে মনে একটা ফন্দি করল। কীভাবে দুষ্টু বাদুড় মশাইকে সায়েস্তা করা যায়। যেই কথা, সেই কাজ। গাছের যে ডালে বেশি লিচু ধরেছে সেখানে একটা পাতলা জালের ফাঁদ আটকে দেওয়া হলো।
এদিকে তমাল অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগল। কবে বাদুড় মশাই ধরা পড়ে। এবার তাকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে। কিন্তু ঘটনা এখানে শেষ নয়। প্রথম দিন... দ্বিতীয় দিন... পেরিয়ে গেল। বাদুড় মশাই ফাঁদে আর পা দিল না। ঠিক তৃতীয় দিন রাতের বেলায় একজোড়া বাদুড় ধরা পড়ল। তমালের আনন্দের বাঁধ ভেঙে গেল। তার খুশি দেখে প্রতিবেশীরা ছুটে এলো। ব্যাপার কী? তখন সবাই ঘটনা জানতে পারল। বাবা বললেন, বাদুড় দুটোকে খাঁচায় বন্দি করা হোক। অবশেষে তাই করা হলো। তবে পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তারা একটুও কষ্ট না পায়।
কিন্তু বন্দি খাঁচায় কে আর থাকতে চায়? রাতের বেলায় ঘটল আরেক কাণ্ড। খাঁচার ভেতর বাদুড় দুটো ডানা ঝাপটাচ্ছে, শুরু হলো প্রচণ্ড চেঁচামেচি। আমাদের রাতের ঘুম হারাম হলো। বাবা আমাকে সান্ত¡না দিয়ে বললেন, এবার বোধ হয় উচিত শিক্ষা হয়েছে। তাই বাদুড় দুটো চেঁচামেচি আর কাতরাচ্ছে। রাত তখন পৌনে দুইটা ছুঁই ছুঁই। আমি বাবার কথা শুনে বাদুড় দুটোকে মুক্ত করে দিলাম। ক্ষণিকের মধ্যে অন্ধকারে হারিয়ে গেল। শুনেছি তারা নাকি রাতের প্রহরী।
"