নূর মোহাম্মদ দীন

  ২৭ মে, ২০২৩

হাতির পরিণতি

বনটি ছিল অনেক সুন্দর। শান্ত ও নিরিবিলি। সেই বনে অন্য পশুপখিদের সঙ্গে হাতিও বাস করত। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, হাতির পা গাছের মতো। কান কুলোর মতো। দাঁত মুলোর মতো। হাতির শুঁড় লম্বা। বিশাল তার দেহ। কিন্তু হাতির লেজটি ছোট। হাতি থপাস থপাস করে হাঁটে।

‘একটি হাতি ছিল খুব অহংকারী। এক দিন এই হাতিটির কি হলো জানো?’

‘কী হলো?’

আচ্ছা শোনো তাহলে...

এক দিন বনে সব পশুপাখির মিলনমেলার আয়োজন হলো। হাতিকে বিশেষ অতিথি করা হলো। বাঘ, ভালুক, সিংহ, জিরাফ, শেয়াল, হরিণ, বানর, টুনটুনি, শালিক, টিয়ে সবাই এলো। সবাই অনেক মজা করল। অনেক ভোজ হলো। এর মধ্যে হাতি লক্ষ করল, পশুপাখিদের মধ্যে সে-ই আকারে সবচেয়ে বড়সড়। অনেক শক্তিশালীও। অন্য পশুপাখিকে তার কাছে ক্ষুদ্র মনে হলো। তুচ্ছ মনে হলো। হাতি মনে মনে নিজেকে রাজা বলে ভাবল। হাতি বনের রাজা হতে চাইল। কিন্তু কেউ তাকে রাজা হিসেবে মানল না। তবুও হাতি নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা দিল।

হাতি বলল, ‘আমি বনের সব পশুর থেকে সবচেয়ে বড়। বিশাল দেহের অধিকারী আমি। আর আমি অনেক শক্তিশালীও। আমি আমার শুঁড় দিয়ে অনেক কঠিন কাজ করতে পারি। আবার ধ্বংসও করতে পারি। যে আমাকে রাজা বলে মানবে না তাকে কঠিন শাস্তি দেব।’

হাতি তার বিশাল দেহ আর শক্তি নিয়ে অহংকার করত। কিন্তু হাতি যে তার এই বিশাল দেহ নিয়ে ঠিকমতো হাঁটতে পারত না, তা কখনো স্বীকার করত না।

এক দিন হাতি টুনটুনিকে দেখে বলল, ‘এই টুনটুনি, আমাকে কি তুই রাজা বলে মানিস?’

টুনটুনি কিছু না বলেই ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল। হাতি রেগে গেল। টুনটুনির বাসা ভেঙে দিল হাতি।

আরেক দিন জিরাফকে বলল, ‘জিরাফ, তোমার তো দেখি খুব অহংকার। সব সময় মাথা উঁচু করে চলো। নিচে মাটি-ঘাসের দিকেও তো একটু তাকাও না।’

জিরাফের গলা লম্বা বলে হাতি ঠাট্টা করল। জিরাফ হাতির কথায় কষ্ট পেল।

তারপর এক দিন শেয়ালকে বলল, ‘তোমাদের তো আর খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই। রাত হলেই হুক্কা হুয়া শুরু করে দাও। শুধু শুধু আমার ঘুম নষ্ট করো। আমাকে রাজা না মানলে রাতে কেউ আর হুক্কা হুয়া ডাকতে পারবে না। নয় তো শুঁড় দিয়ে ধরে একটা করে আছাড় দেব।’

এভাবে হাতি বনের পশুপাখিদের নানা কটুকথা বলে তিরস্কার করতে লাগল। ঠাট্টা করতে লাগল। বনে অশান্তি তৈরি হলো।

এক দিন হাতি গেল সিংহের ডেরায়। সিংহ হাতির সব কথা শুনল।

সিংহ হাতিকে বলল, ‘তোমাকে আমরা রাজা মানব। তার আগে আমাদের একটি উপকার করতে হবে। আমাদের রাস্তা দখল করেছে পিঁপড়ের দল। রাস্তা থেকে পিঁপড়ের দল সরাতে হবে।’

‘কোনো সমস্যা নেই। এক ফুঁ দিয়ে সব পিঁপড়ে উড়িয়ে দেব। কাল দেখবে সব পরিষ্কার।’ বলল হাতি।

সিংহ পিঁপড়েদের সব পরিকল্পনা বলে রাখল।

পরদিন হাতি গেল পিঁপড়ের বাসা উচ্ছেদ করেতে। হাতি পিঁপড়ের বাসায় শুঁড় দিয়ে গুঁতো দিল। আর অমনি সব পিঁপড়ে হাতির শুঁড়, পা, সারা শরীরে কামড় বসিয়ে দিল। হাতির কানের ভেতর পর্যন্ত ঢুকে গেল পিঁপড়ে। হাতি যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। মাটিতে গড়াগড়ি দিল। শেষমেশ পানিতে ঝাঁপ দিল। পানিতে ছিল বড় বড় কুমির। চার-পাঁচটি কুমির হাতিকে খুবলিয়ে ধরল। হাতিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল গভীর জলে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close