আরিফুর রহমান সেলিম

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

ব্যাঙের বন্ধু ইঁদুর

এক ছিল ব্যাঙ। সে নদীর পাড়ে ছোট্ট পাহাড়ে একটা ঝোপে বাস করত। তার ছিল দুই ছেলেমেয়ে। মায়ের খুব ইচ্ছে ছেলেমেয়ে দুটোকে শিক্ষিত করবে, ব্যাঙের মতো ব্যাঙ যেন হতে পারে। সে জন্য মা প্রতিদিন সকালে-বিকেলে ছেলেমেয়েদের পড়তে বসায়।

ছেলেটার নাম টিয়াং আর মেয়েটার নাম পিয়াং। টিয়াং আর পিয়াং যেমন দেখতে মিষ্টি তেমনি দুষ্টু। সারাক্ষণ একজন আরেকজনের পেছনে লেগেই থাকে। যখন নদীতে গোসল করতে যায় তখন শুরু হয় এদের লুটিপুটি। একজন আরেকজনের মাথায় উঠে পানিতে লাফ দেয়। ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ পানিতে থাকে। গোল্লাছোট বউচি খেলায়।

সকালে উঠে আজ মা পিয়াংকে বলল ‘বল তো মা কীভাবে বর্ষা এলে গান গাইতে হয়?’ পিয়াং বলল ‘ক্যাকর ক্যাং ক্যাকর ক্যাং।’ এই গান শুনে মায়ের চোখে জল চলে এলো। এত্ত কষ্ট করে মা চাচ্ছে বাচ্চাগুলো ব্যাঙের মতো ব্যাঙ বানাতে আর বাচ্চাগুলো কি না এখনো বর্ষা এলে কীভাবে গান গাইতে হয় সেটাই জানে না।

পিয়াং আর টিয়াং ব্যাঙের গান শিখতে মোটেই আগ্রহী নয়। দুই ভাই-বোন সেদিন গিয়োছিল এক কনসার্ট দেখতে। আয়োজন করেছিল বানর ভাইয়া। ধবধবে ফরসা এক বানর ইংরেজিতে গান গেয়েছিল সে কনসার্টে। পিয়াং আর টিয়াং শুনেছে এই ধবধবে ফরসা ইংরেজ বানরটিকে বানররা আমন্ত্রণ করেছিল শীতপ্রধান দেশ থেকে। সেখানে বানরগুলো ইংরেজিতে গান গায়। বানরের গান পিয়াং আর টিয়াং খুব ভালোবাসে আর সারাক্ষণ ঘুন ঘুন করে গায়।

মা এক দিন শুনতে পেল টিয়াং ঘুন ঘুন করে একটা ইংরেজি গান গাইছে... এ লিটল ক্রিয়েচার ভেরি বিউটিফুল। সি হেজ থিফট মাই হার্ট। আই লাভ হার। এ গান শুনে মার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ছেলেমেয়েগুলো কি বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ডুবে যাচ্ছে। এমন হলে তো এরা ওদের নিজস্ব সংস্কৃতিকেই ভুলে যাবে। মায়ের মনে পড়ল মেয়েটা সেদিন ঠিকমতো বর্ষার গানটাও গাইতে পারেনি।

ব্যাঙ মা ভেবে ভেবে ক্লান্ত। কীভাবে ছেলেমেয়ে দুটোকে ভদ্র, মার্জিত, শিক্ষিত ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করা যায়। রাতে শুয়ে শুয়ে মা বাচ্চাদের কবিতা গল্প গান শোনায়।

মা সকালে পাঠাল বাচ্চা দুটোকে হিসাব গণনা শেখার জন্য। ঝোপের পাশে ছোট্ট পেয়ারা গাছে নিচের ডান ডালে কয়টা পাতা আছে তা গুনতে পাঠিয়েছেন মা। মায়ের চেষ্টা আর দুশ্চিন্তা দেখে পিয়াং আর টিয়াং ও ভেবেছে তারা ভালো হয়ে যাবে। আর কখনো দুষ্টমি করবে না।

দৌড়ে পিয়াং আর টিয়াং পেয়ারা গাছে লাফিয়ে উঠল। কিন্তু ওপরে উঠেই দেখল একটা ইঁদুর সেখানে বসে আছে। ইঁদুরটিকে দেখেই ব্যাঙছানা দুটো কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে ফিরে এলো। বলল মা জানো ‘পেয়ারা গাছে একটি ইঁদুর। কি ভয়ানক চোখে আমাদের দিকে তাকাল।’ আমরা ভয় চলে এসেছি।

কথা শুনে মা ছোটলো পেয়ার গাছে দিকে। সেখানে গিয়ে সে দেখল গাছে সত্যি একটা ইঁদুর। বাচ্চারা সত্যি কথা বলেছে সে জন্য মা খুব আনন্দিত হলো। গর্বে তার বুকটা ফোলে উঠল। সে চুপিচুপি গাছের ডালে উঠেই ইঁদুর টিকে ধরতে গেল। তখন ইঁদুরটি আসলে খেলছিল। ব্যাঙের আসার ব্যাপারটি সে খেয়াল করেনি। ব্যাঙ যে হাঁ করে ইঁদুরটিকে ধরতে যাবে তখন ভয়ে ইঁদুরটি চোখ বন্ধ করে ফেলল।

ব্যাঙ মা দেখল এলে এটি বড় ইঁদুর না। ছোট্ট একটা তুলতুলে ইঁদুরছানা। ছানাটিকে দেখে ব্যাঙের মায়া হলো। মুখে নিতে গিয়েও ইঁদুর ছানাটিকে মুখে নেয়নি। ইঁদুরছানাটি তখন চোখ খুলে ব্যাঙের মহানুভবতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল।

ইঁদুরছানাটি ব্যাঙের কাছে এসে ব্যাঙটাকে জড়িয়ে ধরল। একটি ছোট্ট চুমু খেল। ইঁদুরছানার ব্যবহারে ব্যাঙ মা খুব খুশি হলো।

ইদুরছানাটিকে ব্যাঙমা জিজ্ঞাসা করল তুমি এখানে এসেছো কেন? ইঁদুর আধো আধো কণ্ঠে বলল, ‘আমি এখানে এসেছি দুটো সুন্দর ব্যাঙছানার খেলা দেখতে। তাদের কথা শুনতে। আমার কোনো বন্ধু নেই। তাই তাদের সঙ্গে খেলা করতেই এসেছিলাম।’

ব্যাঙ মা তখন ইঁদুরছানাটিকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি এলো। পিয়াং আর ইয়াংয়ের ভয় দূর হয়ে গেল। ইঁদুরছানাটিকে তাদের বন্ধু করে নিল। পিয়াং আর ইয়াং দুজনে মিলে ব্যাঙদের জাতীয় সংগীত... ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ গেয়ে শোনাল। শুদ্ধ সুরে বাচ্চাদের কণ্ঠে ব্যাঙদের জাতীয় সংগীত শুনে মা আনন্দে কেঁদে ফেলল। এভাবে এক দিন পিয়াং আর ইয়াং ব্যাঙের মতো ব্যাঙ হয়ে উঠল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close