শাহানারা স্বপ্না
দুই বন্ধু
আজ তোমাদের বলব এক কাক আর টডি বেড়ালের গল্প। ও! টডি বেড়ালকে চেনো না? এদের খাটাশ বা গন্ধগোকুলও বলা হয়। এরা বড় বড় গাছঘেরা ঘন বনের মধ্যে থাকে।
অনেক দিন আগে নিবিড় গাছপালার সুন্দর একটা বন ছিল। বনের যত পাখি আর নানা রকম পশু সেখানে বাস করত। তাদের সবাই ছিল হাসিখুশি ও সুখী। কারণ সে বনে পানি আর খাবারের কোনোই অভাব ছিল না। বনের পাশে ছিল নদী ও শাখা নদী। বৃষ্টি পড়ে তৈরি হতো অনেক নালা। নালায় পানি অল্প থাকে। সেখানে গোসলের কাজ সেরে নেয় অনেকে।
তেমনি একটা ছোট নালার পাড়ে মস্ত কাঠবাদাম গাছ। সে গাছের গুঁড়ির ওপর বসে গল্প করতে ভালোবাসে কাক আর টডি বেড়াল। তারা অনেক দিনের বন্ধু। মনোরম ঠাণ্ডা ছায়ায় দুজনে বনের ভেতর ঘুরে ঘুরে খেলে বেড়ায়, খাবার খায়, তারপর এখানে বসে বিশ্রাম করে।
এক দিন দুবন্ধু গল্প করছিল। হঠাৎ এ সময় শুনতে পেল বাঘের ভয়ানক গর্জন। ভীষণ ভয় পেল তারা। কাক উড়ে গিয়ে গাছের একদম ওপরের ডালে বসল। কিন্তু টডি বেড়ালটি কোথায় পালাবে! সে কাতর গলায় বন্ধুকে বলল-
‘আমি কী করব বন্ধু? আমাকে কি তুমি কোনো সাহায্য করবে না?’
‘নিশ্চয়! তুমি একটু অপেক্ষা করো!’ এই বলে কাকটা খুব সাহসের সঙ্গে দ্রুত উড়ে গেল। মনে মনে সে একটা উপায় খুঁজতে লাগল বন্ধুকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য।
কিছু দূর গিয়ে সে দেখতে পেল একটা ভেড়ার পাল। সেখানে বেশ বড় কয়েকটা কুকুরও চলছে ভেড়াদের সঙ্গে। তখন কাকের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে নিচু হয়ে উড়ে গিয়ে কুকুরগুলোর মাথায় ঠোকর দিতে লাগল। ঠোকর মেরে উড়ে যায় আবার আসে। যাতে কুকুররা তাকে কামড়াতে না পারে। কুকুররা ঘেউ ঘেউ চিৎকার করে ছুটতে লাগল। কাক যেদিকে ওড়ে তারাও সেদিকে ছোটে। এভাবে বনের ভেতর চলে এলো।
এদিকে কুকুর দলের চিৎকারে সারা বন কেঁপে উঠল। বাঘটা ভয়ে কান খাড়া করে শুনল। তারপর পালিয়ে গেল।
বন্ধুর কাছে ফিরে এসে কাকটা হাঁফাতে লাগল। টডি বেড়াল তাড়াতাড়ি নালা থেকে পানি এনে কাকের মুখে দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
‘বন্ধু, তুমি জীবন বাজি রেখে আমাকে বাঁচালে। তোমার বিপদে আমিও থাকব। সারাজীবন আমরা একে অপরের জন্য কাজ করব।’
"