মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

লাল ফড়িংয়ের বিয়ে

বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে লাল ফড়িং। সারা দিন শুধু ঘুরে বেড়ায়। খুব ডানপিটে স্বভাবের। মা ফড়িংটা ভাবে, ফড়িং ছেলেটার বিয়ে দেওয়া দরকার। ফড়িংয়ের বাবার কাছে কথাটা বলতেই বাবা ফড়িংটা খুশি হয়ে বলল, হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছো। আমার ফড়িং ছেলেটার উড়নচণ্ডী স্বভাব। তার বিয়ে দিয়ে সংসারী করা হলে সে যদি ঘরমুখো হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। মৌমাছি ও প্রজাপতিকে খবর দেওয়া হলো। ঘটক হিসেবে এলাকায় তাদের খুব সুনাম। তা ছাড়া তারা ফুলে ফুলে গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। তাদের দুজনের কাছে খবর যাওয়া মাত্র তারা উড়ে এলো লাল ফড়িংয়ের বাড়ি। মা ফড়িং ওদের বলল, আমাদের একমাত্র ছেলে লাল ফড়িংয়ের বয়স তো কম হলো না। ওকে বিয়ে করানো প্রয়োজন। ওর জন্য তোমরা ভালো একটা কনে দেখো। মৌমাছি ও প্রজাপতি বলে উঠল, ফড়িং মাসি আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, ওকে তো আমরা চিনি। দেখতে খুবই সুন্দর। যেমন টকটকে লাল, তেমনি নাদুস-নুদুস। ওর মতো পাত্র আমাদের এলাকায় কমই আছে। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। ওর জন্য ঠিকই সুন্দরী পাত্রী খুঁজে বের করব। এ কথা বলেই দুজনে ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে গেল।

মৌমাছি ও প্রজাপতি পাড়ায় পাড়ায় ঘোরে। গ্রামে গ্রামে যায়। লাল ফড়িংয়ের কনের জন্য তারা পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এক দিন ঘন সবুজ বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ পেছন থেকে ওদের বয়স্ক এক ঝিঁঝি ডাক দেয়। তোমরা এমন ব্যতিব্যস্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছো?

প্রজাপতি বলে ওঠে, জানো তো ঘটকালি করেই আমাদের জীবন চলে। লাল ফড়িংয়ের জন্য কনের খোঁজে বেরিয়েছি। ঝিঁঝি বলে, তা কোথাও কি কনের দেখা পেলে? মৌমাছি বলে, এখন পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পেলাম না। ঝিঁঝি বলে, এত খোঁজাখুঁজির দরকার কী। আমার নাতনিকে তোমরা নিতে পারো। লাল ফড়িংকে আমি চিনি। ওরা রাজি থাকলে আমার নাতনিকে বিয়ে দিতে পারি। আমার নাতনিও বেশ সুন্দরী।

মৌমাছি ও প্রজাপতি মা ফড়িংটার কাছে ঝিঁঝির কথা বলে। বাবা ফড়িং ও মা ফড়িং দুজন মিলে আলোচনা করে তাদের জানিয়ে দেয়- এ বিয়ে হবে। তোমরা বিয়ের আয়োজন করো। মৌমাছি ও প্রজাপতি সুসংবাদ দিতে হাজির হয় ঝিঁঝিদের বাড়ি। সামনের পূর্ণিমার রাতে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।

লাল ফড়িংয়ের বিয়ে উপলক্ষে দুই বাড়িতেই সাজসাজ রব। ফুল পাখিদের মধ্যেও ফড়িংয়ের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ততা। কে দাওয়াতের কাজে থাকবে, কে প্যান্ডেল তৈরি করবে, কে রান্নাবান্নার দায়িত্বে থাকবে, কাজিকে কে খবর দেবে, কে সাক্ষী হবে, কতজন বরযাত্রী সঙ্গে থাকবে, কবে বৌভাত হবে। সবকিছু ঠিকঠাক করা হলো।

শুধু তা-ই নয়, কীটপতঙ্গের মধ্যেও খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। রেশম পোকা বলে, বিয়েতে আমি কনেকে রেশমি চাদর, রেশমি শাড়ি উপহার দেব। বিয়ে উপলক্ষে লজ্জাবতী পাতারাও লজ্জা ভুলে পাতা মেলে হাসছে। অবশেষে ঘনিয়ে এলো সেই শুভক্ষণ, বরযাত্রী হিসেবে ঘাসফড়িং, গঙ্গাফড়িং, দোয়েল, টুনটুনি, আরো আসছে নূপুর পায়ে ময়ূর। সবাই বরযাত্রী হিসেবে একসঙ্গে রওনা হলো। লাল ফড়িংকেও বর হিসেবে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। বরযাত্রীরা পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল বর দেখার জন্য। লাল টুকটুকে মিষ্টি ফড়িং, ডানা দুটোও রঙিন আর ফুরফুরে। মাথায় শুকনো ঘাসের তৈরি পাগড়ি পরানো হয়েছে। গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে বানানো শেরওয়ানি পরানো হয়েছে। বরকে দেখে সবাই মুগ্ধ। বাঁশের পাতা দিয়ে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। বরযাত্রীদের বসতে দেওয়া হয়েছে পাথরকুচি ও তেলাকুচোর পাতায়।

বরযাত্রী পৌঁছার পরপরই তাদের শিশিরের চা দেওয়া হলো হাসনাহেনা পাতার ঠোঙায়।

বরযাত্রীরা চা খাওয়ার পরপরই ছুটল বউ দেখতে। মাকড়সা জালের মিহি সুতোয় তৈরি শাড়িতে ঝিঁঝিকে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে। লাল গোলাপের রসে তৈরি লিপস্টিক লাগানো হয়েছে ঠোঁটে। রংধনু থেকে রং এনে মেহেদি পরানো হয়েছে।

ফিঙে ও টিয়ের সাক্ষীতে কাজী কাকাতুয়া বিয়ে পড়াল। বিয়ে পড়ানোর পর খাবার পরিবেশন করা হলো। শর্ষে ফুলের মধু দিয়ে পিঁপড়ের ডিম ভুনা, ঘাসের বিচির পোলাও, উইপোকার রোস্ট। সবশেষে দেওয়া হলো দণ্ডকলসের ফুলের মধু দিয়ে তৈরি পায়েস।

খাবার খেয়ে সবাই ভীষণ খুশি। এমন খাবার নাকি এই এলাকায় আগে কেউ কখনো খায়নি।

পূর্ণিমা রাতে রং-বেরঙের প্রজাপতি, মৌমাছি, দোয়েল, টিয়ে, ফিঙে, ময়নার উপস্থিতিতে বিয়ে বাড়ি সরগরম। খাওয়া শেষে শুরু হলো গানের আসর। একে একে গাইল মশা, দোয়েল, ময়না, কোকিল। সবশেষে যখন ঝিঁঝিরা গান ধরেছে, ঠিক তখনই চাঁদ ঢাকা পড়ে যায় মেঘের আড়ালে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে জোনাকিরা সবাই আলো জ্বালিয়ে দিল। চারদিকে আলো দিয়ে উড়তে লাগল। এ যেন এক মনোরম পরিবেশ। যেন কীটপতঙ্গের কনসার্ট। ঝিঁঝিরা যখন গান শুরু করল তখন কনে ঝিঁঝি মনে মনে ভাবল, আগে ঝোপের ঝাড়ে কত গান গেয়েছি। আজ বউ হওয়ার কারণে তার চুপ করে বসে থাকতে হচ্ছে। সবাই খুব প্রাণ ভরে গান-বাজনা উপভোগ করল। মধ্যরাতে বর ও কনে এবং আত্মীয়- স্বজন লাল ফড়িংয়ের বাড়ির পথে রওনা হলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close