সুলতান মাহমুদ
ধারাবাহিক গল্প * আজ পঞ্চম পর্ব
মায়ের সেবা

যেতে যেতে আরো অনেক দূর যাওয়ার পরে দেখা পেল সেই পুষ্পরানীর অতি দৃষ্টিনন্দন বাহারি ফুলের বাগান। বাগানের পাহারায় বসা এক ডানাকাটা পরীর কাছে বিস্তারিত ব্যাপারটা খুলে বলে ভেতরে যাওয়ার সাহায্য চাইল। বাগানের গেটে পাহারারত ডানাকাটা পরীটা চাঁদকুমারকে পুষ্পরানীর কাছে যেতে বলল। চাঁদকুমার মণ্ডম সুরভিত ঘ্রাণে সোনায় মোড়ানো পুষ্পরানীর ঘরে গিয়ে বাগানের সবচেয়ে বড় শটি ফুলের মধু আহরণের জন্য ফুলের বাগানে প্রবেশের অনুমতি চাইল।
পুষ্পরানী বিস্তারিত ব্যাপারটা জেনে চাঁদকুমারকে বলল, ‘ফুল বাগানে কোনো যুবক বা পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। শটি ফুলের মধু নিতে হলে অবশ্যই একজন অবিবাহিত যুবতী মেয়ে লাগবে’। চাঁদকুমার খুব চিন্তায় পড়ে গেল। জনমানবহীন এই নির্জন জায়গায় অবিবাহিত যুবতী মেয়ে সে কোথায় পাবে? পুষ্পরানীর কাছে করুণ সুরে অনুনয় বিনয় করে বারবার অনুরোধ করতে লাগল তাকে বাগানের ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু পুষ্পরানীর এক কথা, অবিবাহিত যুবতী মেয়ে ছাড়া ফুলের বাগানে কোনো পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। উপায় না পেয়ে ফুল বাগানের বাইরে বসে নীরবে কাঁদতে লাগল আর সৃষ্টিকর্তার কাছে মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে লাগল। মনে মনে বদ্যির ওপরে রাগ হতে লাগল, বদ্যি যদি পুষ্পরানীর এই কঠিন শর্তের কথা আগেই জানাত তবে কুমারী কাউকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারত। এদিক-সেদিক তাকাতেই হঠাৎ করে বাগানের বাইরে একটা অনিন্দ্য সুন্দর অচেনা ফুল দেখতে পেল। রাজকন্যা ফুলকুমারী হারিয়ে যাওয়ার পরে কয়েকবার স্বপ্নে সে এই ফুল দেখেছে।
কিন্তু তখন সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বা স্বপ্নের মর্মার্থ কিছুই বুঝতে পারেনি। স্বপ্নে দেখা সেই ফুলটি যেন চাঁদকুমারকে দেখে আরো উৎফুল্ল হয়ে হাসছে আর বাতাসের সঙ্গে হেলেদুলে ইশারায় কাছে ডাকছে। স্বপ্নে দেখা ফুলটিকে বাস্তবে দেখতে পেয়ে চাঁদকুমার খুশিতে ফুলটির কাছে গেল। ফুলটিকে বুকে জড়িয়ে কান্না ভেজা চোখে নিজের স্বপ্নের কথা বলতে লাগল। ফুলটিও যেন নিজের নরম স্পর্শ দিয়ে চাঁদকুমারকে আরো কাছে টেনে আপন করে নিতে চাইল। হঠাৎ চাঁদকুমারের চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে ফুলটির পাপড়িতে গিয়ে পড়ল। চাঁদকুমারের অশ্রুর ছোঁয়ায় ফুলটি ধীরে ধীরে কেমন যেন নড়েচড়ে বড় হতে লাগল। চাঁদকুমার অবাক হয়ে ফুলটির দিকে তাকিয়ে রইল। অচেনা ফুলটি ধীরে ধীরে জীবন্ত হয়ে একজন যুবতী মেয়ের রূপ ধারণ করল। ফুলটি অচেনা হলেও মেয়েটিকে চাঁদকুমার ঠিকই চিনতে পারল। পরীর মতো সুন্দর মেয়েটি আর কেউ নয়, কিছুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া হবু বউ সেই রাজকন্যা ফুলকুমারী। চাঁদকুমার আকাশের চাঁদটা হাতে পাওয়ার চেয়ে বেশি খুশিতে ফুলকুমারীকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কান্না করতে লাগল। চাঁদকুমার একটু শান্ত হলে ফুলকুমারী ধীরে ধীরে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা খুলে বলল, ‘দুষ্ট জিন তাকে উঠিয়ে এনে ফুল বানিয়ে এখানে রেখেছিল। সামনের পূর্ণিমায় জীবন্ত করে বিয়ে করতে চেয়েছিল। জিনটা ফুলকুমারীকে জাদু করে বলেছিল, কোনো যুবক এসে জড়িয়ে ধরে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিলেই শুধু আবার মানুষ হতে পারব। মানুষ হতে না পারলে জিনেরে আজ্ঞাবহ হয়ে সারাজীবন কাটাতে হতো। বিধির ইচ্ছায় আজ আবার নতুন করে জীবন ফিরে পেলাম।’
তারপর চাঁদকুমার তার জীবনের বিস্তারিত ঘটনা বলে ফুলকুমারীকে নিয়ে পুষ্পরানীর কাছে গেল। এবার ফুলকুমারীকে বাগানে ঢোকার অনুমতি দিয়ে পুষ্পরানী বলল, ‘যে মেয়ে ওই শটি ফুলের মধু আহরণ করবে সে কখনো কথা বলতে পারবে না। তার বাকশক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।’
"