আশরাফ আলী চারু
নিরু মামার জাদুর চশমা
নিরু মামা মাঝে মাঝে এমন কিছু করেন যা দেখতে পাড়ার ছেলেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কদিন আগে কি যেন এনেছেন, যা দেখতে মরিয়া হয়ে ছুটছে সবাই। কিন্তু দেখার ভাগ্য হচ্ছে না কারোরই। চারদিকে শুধু নানা রকমের কথা উড়ছে। মামার ভাষ্য অনুযায়ী এটা দ্বারা না-কি সবকিছুই করা যায়!
সাকিবের বন্ধুরা, নিরু মামার সেই বিখ্যাত জিনিসটা সম্পর্কে সাকিবের কাছে বারবার জানতে চাইছে। এখনো পর্যন্ত সাকিবের সেটা দেখা হয়নি বলেই জানাতে হচ্ছে। নিরু মামাকে নিয়ে যতসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সাকিবকে। কেমন মামা! ভাগিনাকে শেয়ার করে না।
এসব নিয়ে বন্ধুদের মাঝে আলাপ হচ্ছিল। এমন সময় নিরু মামা মুখ ভরা হাসি নিয়ে হাজির। নিজের কৃতকর্ম প্রকাশের আগে তিনি প্রতিবারই এভাবেই হাসেন। হাসতে হাসতে বললেন, মামারা নিশ্চয় আমার কথাই বলাবলি করছিলে? তোমরা এই মামাকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে পারও। তোমাদের নিরু মামা কিন্তু যেনতেন মামা নয়! বলতে পারও দুনিয়ার সেরা মামা। এবার তোমাদের এমন কারিশমা দেখাব যা জীবনেও দেখনি। বলো তো কী হতে পারে সেটা? হুম, জানি বলতে পারবে না।
একনাগাড়ে নিরু মামার মুখের এতগুলো কথা শোনার পর সাকিবদের আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। সাকিব মামাকে উদ্দেশ করে বলে, মামা, তোমার আশ্চর্যজনক সেই জিনিসটা কী? আমাকে একবারও দেখাওনি অথচ সবাই আমার কাছে জানতে চাইছে! আমি তো বলতে পারছি না। এবার নিজের মুখে বলে আমাকে মুক্ত করো মামা।
- বলব না, সরাসরি দেখাব। সন্ধ্যার পর আমতলাতে চোখ রাখলেই দেখতে পারবে সেই কারিশমা।
কী আর করার একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। ব্যাকুল আগ্রহটাকে সন্ধ্যা নাগাদ অপেক্ষার দড়িতে ঝুলিয়ে দিল ওরা। বাড়িতে চলে গেল সবাই।
সন্ধ্যার পর সাকিবরা আমতলায় হাজির। নিরু মামার হদিস নেই। নিরু মামা আসবে কি আসবে না এই নিয়ে যখন সবার দুর্ভাবনা তখনই ঘটে গেল ঘটনাটা। আবছা আঁধারে দেখা গেল একটা মানুষের দেহ। তার চোখ থেকে বেরোলো প্রচণ্ড আলো। এমন আলো যে সাকিবদের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। সাকিব চেঁচিয়ে উঠল- ভূওওওত,,,,। সাকিবের চিৎকারে ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো সবারই।
নিরু মামা উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলল- ভয় পেয়ো না আমি তোমাদের নিরু মামা। বলেছিলাম না কারিশমা দেখাব, দেখলে তো,, হা হা হা। নিরু মামার উচ্চ হাসি। কাছে এসে নিরু মামা অত্যন্ত উৎসাহী মনে আরো বলল, কি মামারা এবার দেখলে তো নিরু মামা কি জিনিস?
- কিন্তু মামা, ওটা কী ছিল, যেটা দিয়ে আলো বের হলো?
- ওটাই তো আসল জিনিস!
- জিনিসটা কী? নামটা তো বলো?
- এই দেখ। বলে একটা চশমা দেখাল নিরু মামা। সবাই আরো কৌতূহলী হয়ে উঠল। চশমা থেকে আলো বেরোয় না-কি। অনেকেই তো চশমা পরেন তাদের চশমা থেকে তো আলো বেরোয় না!
- মামা, চশমা তো দেখছি ঠিকই কিন্তু চোখ ধাঁধানো আলোটা? আলো কোথা থেকে এলো? সাকিবদের মধ্য থেকে কেউ একজন জানতে চাইল।
- ওটাই তো কারিশমা। এই চশমার বিশেষত্ব হলো এটা দ্বারা অনেক কিছুই করা যায়।
- কী করা যায়?
- যেমন ধরো কোনো কিছু চাইতে পারো। যখন যা চাইবে তা-ই পাবে।
দলের ভেতর থেকে আওয়াজ এলো- কী বলছো? আমরা যদি সন্দেশ পেতে চাই?
- বিষয়ই না চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাবে।
- তবে দাও তো?
আবার একটা আলোর ঝলক দেখা গেল। ফ্লাশলাইটের কারণে সবার চোখেই নেমে এলো অন্ধকার। এই ফাঁকে নিরু মামা সবার হাতে পৌঁছে দিল সন্দেশ। কি আশ্চর্য কথা! এই চশমা এবং চশমা থেকে নির্গত আলোর সঙ্গে সন্দেশের সম্পর্ক কী? নিরু মামার তো আর আগে থেকে জানা নেই যে তারা সন্দেশ চাইবে। জানলে না হয় সন্দেশ সঙ্গে এনে রাখবে! সবাই রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে গেল। আবার কিছু চাইবে বলে কেউ বলল। মামা বলল, এর আরেকটা বিশেষত্ব হলো এটা দিনে একবারই চাওয়া পূরণ করে। সুতরাং আগামীকাল আবার এসো। অন্ধকারেই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে সন্দেশ খেতে খেতে সবাই বাড়ি ফিরল।
পরের দিন। আরো নতুন কিছু বন্ধু জুটেছে সাকিবদের দলে। সবাই আমতলায় এসে অপেক্ষা করছে। নিরু মামা আজও ইচ্ছে করেই দেরিতে এলো। সবাই মামার প্রতি বিরক্ত। মামা বলল, পথে আটকে গিয়েছিলাম। আমাকে যে সবার আব্দারই রক্ষা করতে হয়। আচ্ছা যা হোক এবার শুরু হবে। প্রথমবার যে যা-ই চাইবে তা-ই পাবে। দ্বিতীয়বার চাওয়ার সুযোগ নেই। তোমরা রাজি তো?
- হ্যাঁ হ্যাঁ মামা আমরা রাজি।
নিরু মামা চশমা চোখে লাগাতেই ফ্লাশলাইট। অত্যন্ত কড়া আলো। সবাই যেন আলোকধাঁধায় পড়ে চোখ ধরে বসে পড়ল। সাকিবদের দল থেকে আওয়াজ ভেসে এলো- মামা, তোমার চশমা তো সবই পারে জেনেছি। কাল সন্দেশ খাইয়েছো। আমতলায় যেহেতু আছি আজ আমাদের আমই খাওয়াও।
এমন কথায় সবারই মনে হতে লাগল আজ বেকায়দায় পড়ে যাবে নিরু মামার চশমা। কেননা এখন তো আমের মৌসুম শেষ। হয়তো শহরের ফলের দোকানগুলোতে চাঁপাই থেকে আনা কিছু কিছু আম থাকতে পারে। কিন্তু শহর তো অনেক দূরে মামার চশমা কী করবে এখন? সবাই যখন এমন ভাবনায় মশগুল। মামা তখন প্রত্যেকের হাতে হাতে আম পৌঁছাতে লাগল। সবারই তো পাগল হওয়ার মতো অবস্থা। কীভাবে সম্ভব!
সবাই নিরু মামাকে ঘিরে ধরল। বলতে লাগল সত্যিই তুমি জিনিয়াস মামা। তোমার চশমাও।
নিরু মামা একগাল হেসে সবাইকে বাড়ি ফিরে যেতে বলল। সবাই আম খেতে খেতে বাড়ির পথ ধরল। নিরু মামা একগাল হাসল নিজের কৃতিত্ব নিয়ে।
আসলে সেটা ছিল নিরু মামার দুটি প্রযুক্তি দিয়ে চালাকির কাণ্ড। চশমা মূলত চশমার জায়গাতেই থাকত। চশমার নামে মামার পকেটে থাকা ফ্লাশলাইটযুক্ত ক্যামেরার কাজটাই ছিল আসল কারিশমা। অন্ধকারে চশমাটা দেখালেও ক্যামেরাটা আড়ালে রাখত সে। আর সবাই যখন ফ্লাশলাইটে পড়ে চোখ বন্ধ করত তখন মামা ম্যাজিক ভয়েস স্পিকার রাখত ওদের দলের কাছাকাছি। যেটাতে আগে থেকেই সেট করা থাকত কী চাইবে এই কথাগুলোর ভয়েস। যেহেতু একজনই চাইতে পারবে তাই স্পিকার থেকে কথা বেরোলে আর কারোরই কথা বলার সুযোগ নেই। শুধু কি তাই! কে কথা বলল সেটা দেখারও তো সুযোগ নেই ফ্লাশলাইটের আলোয় চোখ বন্ধ থাকায়। সুতরাং আসল কাজ হয় ক্যামেরা আর স্পিকার দিয়ে। আর নিরু মামা কৃতিত্ব প্রচার করে তার চশমার। নিরু মামা আগেও যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে! নিরু মামা বদলাবে কবে, কে জানে?
"