সুলতান মাহমুদ

  ০১ অক্টোবর, ২০২২

ধারাবাহিক গল্প * আজ চতুর্থ পর্ব

মায়ের সেবা

আরো কিছুদূর যাওয়ার পরে দুই পাশে লতাপাতায় ভরা ছোট্ট একটা খাল দেখতে পেল। খালভর্তি ছোট ছোট লতার পাতায়, গাছের ডালে, সব জায়গায় অসংখ্য সাপ দেখতে পেল। খালের আশপাশের ঝোপের ভেতরে একটু দূরে দূরেই অতি উজ্জ্বল আলো ঝলমল করছিল। এত উজ্জ্বল আলো চাঁদকুমার আগে কখনো দেখেনি। চাঁদকুমারের তখন মনে পড়ল সাপের অতি মূল্যবান মণির কথা। সাপের এক একটা মণি নাকি সাত রাজার ধন! এখানে যেন সাপের মণির আড়ত! সাপের মণির অতি উজ্জ্বল আলোয় পুরো এলাকাটা আলোকিত হয়ে আছে। বুঝতে পারল, এই মাণিক্যের জন্যই হয়তো এই খালের নাম হয়েছে মাণিক্য নদী। কিন্তু চাঁদকুমারের মনে সাপের মণির প্রতি কোনো লোভ নেই। একটা মরা স্যাঁতসেঁতে কাঠের ওপরে বসে শুধু খালটি কীভাবে পার হওয়া যায় তার উপায় নিয়ে ভাবতে লাগল। আচমকা খুব জোরে ফোঁস করে শব্দ হতেই চাঁদকুমার পেছনে ফিরে তাকাল। পেছনে তাকিয়ে তো চাঁদকুমারের পিলে চমকে যাওয়ার মতো অবস্থা! একটা বিশাল বড় গোখরা সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে রাজকুমারের শরীরের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে গেল। ভালোভাবে খেয়াল করে দেখল, তার চারপাশে শুধু সাপ আর সাপ। বিষধর সাপগুলো কেমন কিলবিল করছে। চাঁদকুমার বসে থাকা মরা কাঠটাও নড়েচড়ে উঠল। নিচে ভালোভাবে পরখ দেখল, সে একটা জ্যান্ত অজগরকে কাঠ ভেবে তার ওপরে বসে আছে। তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। চাঁদকুমার শুনেছিল, কেউ সাপের ক্ষতি না করলে সাপও কারো ক্ষতি করে না। তাই সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। গোখরা সাপটি বলল, ‘হে যুবক তুমি কে? কেন এসেছো এই নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে?’ সাপের কথা শুনে চাঁদকুমার ভয়ে ভয়ে বিস্তারিত খুলে বলল। সাপদের কান নেই তাই জিহ্বা বেড় করে চাঁদকুমারের কথা শুনল। গোখরা সাপটি নিজেকে সর্পরাজ পরিচয় দিয়ে বলল, ‘এখানে যারাই আসে তারাই আমাদের মণি নিতে আসে। আমরা খেয়াল করে দেখলাম, তোমার মাঝে আমাদের পরম যত্নে রাখা মণিরত্নের প্রতি কোনো লোভ নেই। আবার তোমার কথা শুনে বুঝতে পারলাম তোমার উদ্দেশ্যও মহৎ। তাই আমরা কেউ তোমার ক্ষতি করব না। আমরা কখনো ভালো মানুষের ক্ষতি করি না। তোমার উদ্দেশ্য সফল করতে এই খালটি পার হতে হবে। খালটি পার হতেও তোমাকে সাহায্য করব।’ এর মধ্যে সেই ছোট সাপটি সবার মাঝ থেকে মাথা উঁচু করে বলল, ‘রাজা মশাই, এই লোকটি খুব ভালো, পরোপকারী। আমাকে আজ বেজির হাত থেকে রক্ষা করেছে। লোকটিকে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।’ ছোট সাপটির কথা শুনে সমস্ত সাপ সমস্বরে বলে উঠল, অবশ্যই সাহায্য করব। তখন সর্পরাজের নির্দেশে বিশাল এক অজগর খালের এক পাশ থেকে আরেক পাশে সেতুর মতো হয়ে শুয়ে পড়ল। চাঁদকুমার অজগরের পিঠের ওপর ভর দিয়ে সহজেই সাপে ভরা ভয়াবহ মাণিক্য নদী পার হয়ে গেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close