সুলতান মাহমুদ

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ধারাবাহিক গল্প * আজ তৃতীয় পর্ব

মায়ের সেবা

দৈত্যটি রাগান্বিত স্বরে বলল, ‘আমি এই ভুতুগাছি জঙ্গলের সব দৈত্য-দানবের রাজা কৈলান দৈত্য। এতক্ষণ আমার ১০০১ এবং ২০১৯ নম্বর সন্তান মৈলান দৈত্যে আর চৈলান দৈত্যের সঙ্গে তুমি লড়াই করছিলে। ওদের তুমি হারিয়ে দিয়েছো। তোমার সাহস আর মনোবল দেখে আমি অবাক হয়েছি। এখন বলো হে বীর, তুমি কেন এই মৃত্যুপুরী ভয়ংকর ভুতুগাছি জঙ্গলে এসেছো? তুমি কী জানো এই জঙ্গলে ভয়ংকর সব দৈত্য দানবের বসবাস?’ এটা তো ভূতের জঙ্গল বলে জানতাম, চাঁদকুমারের এমন কথায় দৈত্যটা আরো রেগে বলল, ‘আরে বোকা এটা আগে ভূতের জঙ্গল ছিল কিন্তু এখন আমরা দৈত্য-দানবরা দখল করেছি।’ চাঁদকুমার এবার বিনয়ের সঙ্গে নিজের উদ্দেশ্য খুলে বলতেই কৈলান দৈত্য একটু শান্ত হয়ে নরম সুরে বলল, ‘তোমার উদ্দেশ্য মহৎ। তোমার অসীম সাহস। যারা আমাদের মতো ভয়ংকর দৈত্য-দানবকেও ভয় পায় না, তাদের ক্ষতি করা আমাদের নীতিবর্জিত কাজ। নিজের জীবন বাজি রেখে মায়ের সেবা করার উদ্দেশ্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তুমি এখন কোথায় যেতে চাও আমাকে বলো।’

চাঁদকুমার লাটিম পাহাড়ের পাদদেশে মাণিক্য নদী পার হয়ে পুষ্পরানির ফুলের বাগানের কথা বলতেই কৈলান দৈত্য আশ্চর্য হয়ে ভাবল, লাটিম পাহাড় অনেক দূর। তারপর হাতের ইশারায় একটা কালো ছায়া এনে সামনে হাজির করল। চাঁদকুমারকে বলল, ‘আমাদের বার্তাদূত রামভূতের ছায়ায় মিশে লাটিম পাহাড়ের পাদদেশে চলে যাও। সকালের মধ্যেই তুমি পৌঁছে যাবে। হেঁটে যেতে চাইলে তোমার আরো সাত দিন সময় লাগবে। আর বিষধর সাপে ভরা মাণিক্য নদী আমরা পাড়ি দিতে পারি না। তাই তোমাকে লাটিম পাহাড় থেকে একা যেতে হবে পুষ্পরানির ফুলের বাগানে’। কৈলান দৈত্যের সাহায্যের কথা শুনে চাঁদকুমার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর কৈলান দৈত্যকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিশ্চিন্তে ছায়ার মধ্যে প্রবেশ করল। ছায়ার ভেতর কেমন যেন একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘোরের মধ্যে চাঁদকুমারের সময় কাটতে লাগল। তন্দ্রা কেটে যেতেই দেখতে পেল, ভোরের লাল টকটকে আলোক প্রভায় বিশাল লাটিম পাহাড়ের পাদদেশে তারা পৌঁছে গেছে।

লাটিম পাহাড়টা ঠিক লাটিমের মতোই নিচের দিকে সরু আর ওপরের দিকে প্রশস্ত হয়ে যেন আকাশ ছুঁয়ে আছে। অতি বিশাল পাহাড়ের পাদদেশে কোনদিকে যাবে কিছুই বুঝতে পারল না। সবদিকে একই রকম মনে হতে লাগল। অবশেষে পাহাড়ের চারপাশে লাটিম ঘোরানোর ন্যায় দুদিন ঘোরার পর চাঁদকুমার তার কাঙ্ক্ষিত মাণিক্য নদীর পথ খুঁজে পেল। মাণিক্য নদীর দিকে যেতে যেতে ছোট-বড় নানা ধরনের লতাপাতার জঙ্গল পড়তে লাগল। যেতে যেতে দেখল, একটা খোলা মাঠের ভেতর একটি বাচ্চা সাপ আর বেজির মধ্যে তুমুল ঝগড়া হচ্ছে। বেজির আক্রমণে বাচ্চা সাপের হেরে যাওয়ার মতো অবস্থা! চাঁদকুমার বেজিটাকে তাড়িয়ে দিয়ে বাচ্চা সাপটিকে মুক্ত করে দিল। বাচ্চা সাপটি চিরশত্রু বেজির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে চাঁদকুমারের দিকে এক পলক তাকিয়েই দৌড়ে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেল। চাঁদকুমার যতই সামনে হাঁটতে লাগল জঙ্গলের ভয়াবহ নীরবতা ততই বাড়তে লাগল। চারদিক থেকে কেমন যেন ফোঁসফোঁস শব্দ ভেসে আসতে লাগল!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close