মিরাজ রহমান

  ০৬ আগস্ট, ২০২২

মহররম ও আশুরা নিয়ে যা না জানলেই নয়

বছর ঘুরে আবার এসেছে মহররম মাস। শুরু হলো নতুন হিজরি বছর-১৪৪৪। ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। মহররম মাস ও পবিত্র আশুরা দিনের পরিচয় এবং এ দিনে রোজা পালনের ফজিলত-বিধান এবং করণীয়-বর্জনীয় কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। মহররম মাস ও পবিত্র আশুরা নিয়ে যেসব বিষয় না জানলেই নয়

মহররম মাসের পরিচয় : ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। মহররম শব্দটি আরবি, যার অর্থ- পবিত্র, সম্মানিত। প্রাচীনকাল থেকে মহররম মাসটি পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য। চারটি পবিত্রতম মাসের মধ্যে এটি একটি। এ মাসের দশম দিনকে আশুরার দিন বলা হয়। আল্লাহ মহান পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি। এগুলোর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করো না। (সুরা : তওবা, আয়াত : ৩৬)

হজরত আবু বাকরাহ (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি। তার মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। তিনটি পরপর লাগোয়া, সেগুলো হলো- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম আর চতুর্থটি হলো রজব। (সহিহ্ বুখারি, হাদিস নম্বর ২৯৫৮)

পবিত্র আশুরার দিবস পরিচিতি : ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস- পবিত্র আশুরা। ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন এই আশুরা। আশুরা শব্দটি আরবি শব্দ ‘আশারা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ ১০। মহররম মাসের দশম দিন হওয়ার একে আশুরা বলা হয় বলে অনেক ইসলামি স্কলার মন্তব্য করেছেন।

এই দিনে কী কী ঘটেছিল? পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই এই দিনে সংঘটিত হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা। বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে পাওয়া সেই ঘটনাগুলো হলো- ১. আল্লাহতায়ালা এই দিনেই আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন। ২. পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টিও হয়েছে এই দিনে। ৩. এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়াকে (আ.) দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়। ৪. মহাপ্লাবন শেষ হওয়ার পর হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা এই দিনেই পর্বতে গিয়ে ঠেকেছিল। ৫. হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের আল্লাহতায়ালা এই দিনে ফিরাউনের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং এই দিনেই লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায় ফিরাউন। ৬. এই দিনেই হজরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য অসুখ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন। ৭. হজরত ঈসাকে (আ.) এই দিনেই ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন আল্লাহতায়ালা। ৮. হজরত ইউনুস (আ.) এই দিনে মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন। ৯. এই দিনেই হজরত ইউসুফ (আ.) ও তার পিতা হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর সাক্ষাৎ হয়। ১০. কারবালার ময়দানে এই দিনে হজরত হোসাইন (রা.) তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন।

এই দিনে কী কী ঘটবে? ১. এই দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত হবে মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিন শুক্রবার এবং তা হবে মাগরিবের সময়। ২. কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে এই দিনে। ৩. এই দিনেই দাজ্জালের আবির্ভাগ ঘটবে। ৪. ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন ঘটবে এই দিনে। ৫. ইসলামি স্কলারদের মতে, এই দিনে হজরত ঈসা (আ.)-এর পুনরায় আগমন ঘটবে।

আশুরার দিনে সংঘটিত ঘটনা এবং সংঘটিতব্য বিষয়াবলি সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল জাওজি (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মাওজুআতু ইবনে জাওজি’-তে বলেন, আশুরার দিনে সংঘটিত ঘটনাবলি এবং সংঘটিতব্য বিষয়াবলির আলোচনা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তা সত্ত্বেও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এসব ঘটনার আবেদন ও গুরুত্ব কম নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close