মো. আবদুর রহমান

  ০৬ আগস্ট, ২০২২

আচার ও আমসত্ত্ব

চালের ওপর ঢাপুস-ঢুপুস আমপড়া শব্দে, ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল আপন-স্বপন দুই যমজ ভাই। ওরা দুজনেই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। লেখাপড়ায় দুজনেই সমানে সমান। আপনের এক আর স্বপনের দুই। খেলাধুলাতেও দুজন মিলে স্কুল, মাঠ, বাড়ি একদম মাতিয়ে রাখে। একজন মেসি আর একজন রোনালদো! একজনকে ছাড়া আর একজন খায় না, পড়ে না এমনকি ঘুমায়ওনা। টানাটানি ও গলাগলি করে কেটে যায় দুই চড়ুই পাখির দিন। ঠিক এখনো একসঙ্গে কই মাছের মতো ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল।

ছুটির দিনে ঝটপট দরজা খুলে বাইরে এলো। ওমা অনেকগুলো লাল টুকটুকে পাকা আম সারা উঠোনে ছড়িয়ে আছে। অবশ্য এর মধ্যে কিছু কাঁচা আমও রয়েছে। কোনো কথা নেই, দুই ভাই মিলে এক বালতি আম কুড়িয়ে মাকে তাক লাগিয়ে দিল!

মা দুঃখ করে বলল, আহারে এতগুলো আম নষ্ট হবে! আপন বলল, না মা একটি আমও নষ্ট হবে না। মা অবাক হয়ে তাকাল! তাহলে এত আম কে খাবে শুনি? শোন মা, এই পাকা আমগুলো দিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করে নাও মা। আমরা সারা বছর স্কুলে গিয়ে বাজারের জিনিস না খেয়ে, কামড়িয়ে-চুসে এই মিষ্টি আমসত্ত্বগুলো মজা করে খাব।

এবার স্বপন বলল, মা আর কাঁচা আমগুলো দিয়ে আচার বানিয়ে রাখো মা। বিভিন্ন মসলা মেখে আর খাঁটি সরিষার তেলে ভিজিয়ে কত্ত সুন্দর আচার হবে! আমরা হাতের তালুতে নিয়ে চেটেচেটে খাব। কি মজাটাইনা হবে।

এর মাঝেই ওদের বাবাও বলল, হ্যাঁগো, আপন-স্বপন ঠিক বলেছে। আমগুলো নষ্ট না করে, আমসত্ত্ব আর আচার বানানোর বুদ্ধিটা মোটেও মন্দ নয়। আর আচার দিয়েতো সামনের বর্ষায় খিচুড়ি দিয়ে খাওয়া যাবে। কি বলো তোমরা? আপন বলল, ও মা শুধু কি তাই, বাবা বিরিয়ানির সঙ্গেও চলবে! স্বপন লাফিয়ে বলল, বাবা গরম ভাত এবং ডালের সঙ্গে আরো জমবে! এবার সবাই খুশিতে হাতে তালি দিয়ে উঠল।

তিন বাপ-বেটার হই-হুল্লোড় দেখে মা বলল, আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তোমাদের সবার প্রস্তাব মেনে নিলাম। তবে আমাকে এগুলো বানানোর জন্য তোমাদের বাবাকে মসলা, খাঁটি সরিষার তেল এনে দিতে হবে। আর তোমাদের দুই ভাইকেও কিন্তু আমাকে আজ সহযোগিতা করতে হবে। কি রাজি? বাবা বলল আমরা সবাই রাজি। কারণ এক দিন কষ্ট করব আর সারা বছর মজা করে খাব। কি তোমরা কি বল? অবশ্যই বাবা আমরাও এক কোটিবার রাজি।

আপন বলল, তবে মা আমার একটি পরামর্শ আছে। মাঝে মাঝে আচারগুলোকে রোদ্রে দিয়ে গরম করতে হবে। আর স্বপন বলল, একদম ঠিক বলেছে আমার ভাইটা। মা, সব সময় আচার তোলার সময় চামচ ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আর নষ্ট হবে না। সোনার টুকরোদের মুখে এমন সচেতনতামূলক পরামর্শ শুনে বাবা-মা দুজনেই খুব খুশি হলো!

ওদের বাবা বাজারে গেল। ওরা দুই ভাই মায়ের সঙ্গে আম কুটতে লেগে গেল। কি সুন্দর আচার ও আমসত্ত্ব তৈরি হয়ে গেল। এখন ওরা সারা বছর ইচ্ছেমতো খাবে-দাবে আর ফুর্তি করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close