মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান
খোকা ও কোলা ব্যাঙ
জ্যৈষ্ঠ মাস প্রায় শেষ। চারদিকে আষাঢ়ের আনাগোনা। নীলাকাশে কালো মেঘের ছোটাছুটি। কখনো কখনো মেঘের গুড়ুম গুড়ুম ডাক। আর কালবৈশাখী বয়ে আনে মুষলধারায় বৃষ্টি। সামান্য পানিতে খাল-বিল ভরে যায়। তখন কোলা ব্যাঙের ডাকাডাকি শুরু হয়। আর দুষ্ট খোকা ঘরে বা থাকবে কীসের জন্য?
এক দিন খোকা কোলা ব্যাঙের ডাক শুনে বলে, অ্যায় ব্যাঙ, আমার কি বন্ধু হবে? আমি তোমার বন্ধু হতে চাই! তখন কোলা ব্যাঙ মুচকি হেসে বলে, ঠিক আছে, তুমি ডাঙায় থাকবে, আর আমি জলে থাকব। কিন্তু বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হবে! আমায় কখনো ঢিল ছুড়তে পারবে না। দুজনে সহমত। দিন আসে, দিন যায়...! খোকা আর কোলা ব্যাঙের বন্ধুত্ব গভীর হয়ে উঠতে লাগল। এক দিন খোকা বন্ধুকে বলল, আচ্ছা বন্ধু, তোমরা নাক উঁচিয়ে ঘ্যানোর ঘ্যানোর কর কেন? তখন কোলা ব্যাঙ জবাব দেয়, আমরা ছ’মাস মাটির তলে বাস করি। তারপর কালবৈশাখীর তাণ্ডব ঝড়ে জেগে উঠি। জলের তৃষ্ণা নিবারণ করি। সব বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠি। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে...!
তখন খোকা সবকিছু বুঝতে পারল। কয়েক দিন যাওয়ার পর খাল-বিলের জল কমতে লাগল। কোলা ব্যাঙের ডাকাডাকি বন্ধ হলো। কোথাও কোনো সাড়া নেই। যেন হারিয়ে গেল, আর দেখা মেলে না।
খোকা কিন্তু এবার একটু হতাশ হলো। কারণ বন্ধুকে হারানোর ব্যথা! তা সহজে কি ভোলা যায়? খোকা মনে মনে ভাবতে লাগল, একবার মুষলধারে দুষ্ট কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে আসুক। ঘটনাক্রমে এক দিন তাই হলো। আবারও খাল-বিল পানিতে থই-থই করছে। সেই হারিয়ে যাওয়া কোলা ব্যাঙের ডাক শোনা গেল। খোকা কিন্তু বুঝতে পারল, এটা বন্ধুর গলার সুর। আবার দুজনে দেখা হলো। খোকা মনের দুঃখ সব খুলে বলল। বন্ধুর কথা শুনে কোলা ব্যাঙ একটু দুঃখ পেল। খোকাকে সান্ত¡না দিয়ে বলে, আমি তোমার পাশে আছি বন্ধু! আমার জন্য চিন্তা করো না। জেনে রেখো, ভালো বন্ধুত্ব কখনো হারিয়ে যায় না। আবার আগের মতো বেড়ে গেল তাদের ভালোবাসা।
"