সোলায়মান জয়

  ২৮ মে, ২০২২

আম কুড়ানোর সুখ

গ্রীষ্ম ও ঈদের ছুটি। তালহা বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। এক তো ঈদের আনন্দ, সেই সঙ্গে গ্রীষ্মের পাকা ফলের ঘ্রাণে গ্রাম যেন এখন স্বর্গপুরি। চারদিকে ফুল-ফলের গন্ধ। গাছে গাছে পাকা টকটকে আম, জাম, লিচুসহ কত রকম ফল। তালহাদের দাদুবাড়ির সামনে বিশাল বাগান। বাগানভর্তি বিভিন্ন ফলগাছ। যার প্রায় সব গাছেই এখন ফলের সমারোহ। বাগান দেখাশোনা করার জন্য আছে মজিদ মিয়া। তার এক ছেলের নাম তুহিন। তালহা আর তুহিন প্রায় সমবয়সি। তাই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হতে বেশি সময় লাগেনি।

ঈদের দুদিন পর আকাশ খুব কালো। চারদিক সন্ধ্যার মতো অন্ধকার হয়ে গেছে। তালহা আর তুহিন বাগানে খেলা করছিল। এমন সময় শুরু হয় মেঘের গুড়ুম গুড়ুম ডাক। তালহা যদিও ভয় পেতে থাকে। কিন্তু তুহিনের এ রকম মেঘ, ঝড়-বৃষ্টিতে থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে। গ্রামে যারা থাকে তাদের এ রকম অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা থাকে, যা শহরের মানুষের সঙ্গে না।

- এই তুহিন, দেখ কেমন মেঘ ডাকছে, চল বাড়ি চলে যাই?

- আরে ধুর মেঘ ডাকছে তো কী হইছে? এ রকম মেঘ তো বৈশাখ মাসে প্রায় প্রতিদিনই ডাকে। কিছু হবে না। তার চেয়ে একটু পর ঝড় শুরু হবে। তখন দেখিস গাছ থেকে আম পড়ছে। ঝড়ের মধ্যে আম কুড়ানোর মজাই আলাদা। এই বাগান, তারপর ওই যে শিকদার বাড়ির বাগান, তারপর শিহাবদের বাগান। সব বাগানে যামু আর আম কুড়ামু। সেই আমের সঙ্গে লবণ দিয়ে খেতে যে কি মজা!

তুহিনের কথাগুলো তালহার ভালোও লাগছিল আবার ভয়ও করছিল।

- না তুহিন, আজ থাক, অন্য এক দিন আম কুড়াব। চল আজ বাড়ি চলে যাই।

- আরে নাহ্, ঝড় এলো বলে। আর একটু অপেক্ষা করো।

তালহা আবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলতে যাবে, তখন ঝড় শুরু হতে যাচ্ছে। দ্বীপ্ত আর সুমাইয়া দৌড়ে এলো আম কুড়াতে। ওদের সবাইকে দেখে তালহার একটু সাহস হলো। ধীরে ধীরে ঝড় উঠতে লাগল। চারদিকে অন্ধকার। তার সঙ্গে এলোমেলো বাতাস। প্রচণ্ড বাতাসে একটু পরপর গাছ থেকে কাঁচা আম পড়তে লাগল। যেই একটা আম পড়ে অমনি সবাই কার আগে নেবে ছুটতে থাকে পাল্লাপাল্লি করে। পড়া আম আগে যে ধরবে তার হবে। প্রথম দিকে তালহা ওদের এ রকম কাণ্ডকারখানা দেখছিল আর হাসছিল।

তুহিন ডাক দিল- এই তালহা তুইও আয়। একসঙ্গে আম কুড়াই।

তুহিনের ডাকে তালহা গেল। একটু পরে তালহা আম কুড়ানোর আসল মজা পেয়ে গেল। ঝড়ের গতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর আম তত বেশি পড়তে থাকে। তালহাদের বাগানে আমগাছ বেশি নেই। শিকদার বাগানে সবগুলোই আমগাছ।

তুহিন বলল- চল সবাই শিকদার বাগানে যাই, ওখানে আমগাছ বেশি। আম ধরছেও বেশি। ওখানে বেশি আম পড়বে।

সুমাইয়া বলে উঠল- আরিফ শিকদার যে খারাপ; যদি আমাদের আম কুড়াতে দেখে তবে ধরে মেরেই ফেলবে। এই গ্রামে শিকদার বাড়ির আশপাশে কেউ সহজে যায় না। কারণ ওনারা খুব খারাপ প্রকৃতির মানুষ। কারণে-অকারণে শুধু মানুষের ক্ষতি করে আর ঝগড়া করে।

আকাশ বলে উঠল- ওদের বাড়িতে একটা কুকুরও টিকতে পারে না। যে কিপ্টার কিপ্টা। কুত্তারেও একটা হাড্ডি খাইতে দেয় না। তুহিন ছোট হলেও খুব চালাক। সে বলল- এখন ঝড়ের মধ্যে কি ওরা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে নাকি? আর ওরা জানে ওদের বাগানে কেউ যায় না। তাই পাহারাও দেবে না। চল এই সুযোগে আমরা যাই। আর ওরা দেখার আগে আম কুড়িয়ে নিয়ে চলে আসি।

আকাশ একটু ভিতু। তবে দীপ্ত তুহিনের মতোই চালাক। দ্বীপ্তও বলল- চল যাই, যা আছে কপালে দেখা যাবে।

তালহাও জীবনে প্রথম আম কুড়ানোর মজা পেয়ে রাজি হয়ে গেল। অবশেষে সবাই গেল। এদিকে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি কি আর দস্যি দলের আম কুড়ানো থামাতে পারে? তুহিনের কথায় সত্যি হলো। বাগান পাহারায় কেউ নেই। তবে এতক্ষণের ঝড়ে গাছের নিচে অনেক আম পড়ে আছে। সবাই দৌড়ে শার্ট-প্যান্টের পকেট আমে ভরতে লাগল।

এদিকে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তালহা, তুহিন কেউ বাড়ি ফেরেনি দেখে সবাই চিন্তিত হয়ে গেল। তালহার আব্বু বাগানে গেল খুঁজতে। পেল না। এদিক-ওদিক খুঁজতে থাকে আর ডাকতে থাকে তালহা, তালহা করে। বাড়িতে চিন্তা করছে কি না? এসব তালহার আর মন নেই। আম কুড়ানোর নেশায় মগ্ন সবাই।

এমন সময় কে যেন পেছন থেকে ধমকাচ্ছে- এই কে রে বাগানে কে রে? আম কুড়াচ্ছে কে রে? আকাশ দেখল আরিফ শিকদার! এই দৌড়া দৌড়া, আরিফ শিকদার আসতেছে। শুনে সবাই যার যার মতো দৌড়ে পালিয়ে গেল। অনেক দূরে চলে এসে তুহিন বলছে- আর কয়টা নিয়ে এলে ভালো হতো। আবার কবে ঝড় হবে, তার ঠিক নেই।

তালহা বলছে- আর একটু দেরি করলে আমাদের ধরেই ফেলত।

- ইস্ আমাদের ধরা এত সোজা না। ওই বেটা কি আর আমাগো লগে দৌড়ে পারব? বলতেই সবাই হেসে উঠল।

বৃষ্টিতে সবার জামা-কাপড় ভিজে গেছে। এরই মধ্যে তালহা খক খক করে কাশতে শুরু করেছে। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে এ রকম আম কুড়াতে যে এত মজা। এই অভিজ্ঞ তালহার আজকেই প্রথম।

তুহিন- চল এখন বাড়ি চলে যাই। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

তালহার বাবা-মা হয়তো তালহাকে খুঁজছে। কথা বলতে বলতেই মজিদ মিয়া আর তালহার আব্বু চলে এসেছে। সবার এ অবস্থা দেখে তালহা আর তুহিনের কান ধরে বাড়ি নিয়ে আসে। এই কান ধরাও তালহার কাছে খুব মজার মনে হলো। আর তুহিনের তো এই কান ধরা একটা খেলার মতো মনে হয়। বাবা-মায়ের হাতে কান ধরা খাওয়া তুহিনের নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে গেছে।

আসলে গ্রামে বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ানো। আর আম কুড়ানোর জন্য মায়ের বকা শোনা। বাবার হাতের কানমলা। এগুলো খুবই আনন্দ আর মজার হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close