ইমতিয়াজ সুলতান ইমরান

  ২১ মে, ২০২২

আদরি

আদরি কচুখেতে নামবেই। কচুর লতি তুলবে সে। আমার নিষেধ মানতে চাইছে না। মানতে চাইবেই বা কেন? কচুর লতি না নিয়ে বাসায় গেলে তাকে সৎমার বকুনি আর পিটুনি খেতে হবে। আমি বললাম, কচুর লতি তোলে পাঠাব তাও মানতে পারছে না। খালি হাতে বাসায় গেলে তার বিপদ হবে। আদরিকে বললাম, কচুখেতে আমি তোমাকে নামতে দিচ্ছি না কেন জানো? ওখানে প্রচুর জোঁক আছে। সাপও থাকতে পারে। তুমি এখন বাসায় চলে যাও। আমি কচুর লতি তোলে তোমাদের বাসায় পাঠাব। ‘না আংকেল খালি হাতে গেলে আম্মু আমাকে মারবেন। বেশি মারবেন। এই সকালেই যদি কচুর লতি না নিয়ে খালি হাতে ফিরে যাই তাহলে আজ সারা দিন আমাকে অনেক মার খেতে হবে।’

আমার নিষেধ না মেনে আদরি কচুখেতে নেমে গেল। মিষ্টি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনি ভয় পাবেন না আংকেল। আমাকে সাপে কামড় দেবে না। আর কামড় দিলেই বা কী? আপনি আছেন না? আপনি তো ডাক্তার!’

আমার মাথায় তখনো কিলবিল করছিল কবিতার যথার্থ শব্দগুলো। আবার কবিতা লেখায় মগ্ন হয়ে গেলাম। শব্দের সঙ্গে শব্দ গেঁথে যাচ্ছিলাম কবিতার প্রেমে। হঠাৎ আদরির চিৎকার! ‘ও মাগো! সা-প! আংকেল...! সা-প!... ’

আমি দ্রুত ছুটে গেলাম কচুখেতের দিকে। আদরি দৌড়ে এসে আমাকে ঝড়িয়ে ধরে! ভয়ে কাঁপতে থাকে! আমি ওকে বুকে জড়িয়ে বললাম, কী হয়েছে মা? আদরি ভয়ের চোটে কাঁপা গলায় বলল, ‘সা-প!... ’ তোমাকে কামড় দিয়েছে নাকি? ভয়ে কেঁপে কেঁপে বলল, ‘না!’ আমি আদরিকে সাহস দেওয়ার জন্য ওকে নিয়ে কচুখেতের দিকে এগিয়ে বললাম, কোথায় সাপ? তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? কচুখেতের দিকে তাকাতেই দেখি, একটি সাপ গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে! আদরিও সাপটি দেখিয়ে কাঁপা গলায় বলল, ‘ওই দেখুন আংকেল! ওই সাপটি আমার পায়ের কাছে ছিল!’ আমি হেসে বললাম, এটা লাউডগা সাপ। এই সাপে কামড় দিলেও কিছু হয় না। লাউডগা সাপে বিষ নেই। তুমি ভয় পেও না।

আদরিকে সাহস দিলাম। লাউডগা সাপ নাকি অন্য কোনো সাপ কে জানে? আদরির ভাগ্য ভালো। ভাগ্য ভালো আমারও। আদরিকে সাপে কাটার প্রাথমিক চিকিৎসা বা মেডিকেলে পাঠানোর ঝামেলায় পড়তে হলো না। (চলবে)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close