মো. আবদুর রহমান

  ২১ মে, ২০২২

রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি

ঈদের চার দিন পর গালটা ফুলিয়ে, মাথাটা ঘুরিয়ে হিজলগাছের দিকে চড়ুই পাখি ওড়াউড়ি দেখছে টুকটুকি। মনে তার বড্ড কষ্ট। দাদু তাকে একদম ফাঁকি দিয়েছে। কুষ্টিয়ায় আসার আগে দাদু ফোনে বলেছিল, ‘ঈদে গ্রামে আসো দাদু তোমাকে এক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাব।’ ঈদ এলো আবার চলেও গেল কিন্তু দাদু কিছুই বলছে না!

হঠাৎ দাদু বলল, ‘চলো আজ আমরা বিশ্বকবির কুঠিবাড়ি দেখতে শিলাইদহ যাব।’ এবার তো নেচে, গেয়ে, দাদুর কোলে বেয়ে পুরো বাড়ি হাসিয়ে একাকার করল মিষ্টি টুকটুকি! কারণ সে তো শুধু বইতে পড়েছে, তবে চোখে কখনো দেখেনি। যাক এবার সে আশা পূরণ হতে চলেছে। তাই আর কোনো কথা নয়, দাদুর সঙ্গে চলে গেল কুমারখালী উপজেলার বিখ্যাত শিলাইদহ গ্রামে।

গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই দেখল আমগাছ, কাঁঠালগাছসহ আরো বিভিন্ন সবুজগাছে পরিবেষ্টিত একটি বিশাল বাড়ি। দাদুকে জিজ্ঞেস করল, দাদু এত বড় বাড়ি? ‘হ্যাঁ, দিদি ভাই জানো এই বাড়িটা ১১ একর জমির ওপর অবস্থিত। চলো প্রথমেই ওই দোতলা বাড়িটা দেখে আসি।’

জানো দিদি ভাই আজ সাত মে। কবিগুরুর জন্মদিন। ওমা... তাই দাদু? হ্যাঁ, দেখছো না কত লোকের সমাগম। তাহলে তো আমরা খুব ভালো দিনে এসেছি! আচ্ছা দাদু তিনি কবে এখানে এসেছিলেন? একটু খুলে বলো না দাদু। আচ্ছা ঠিক আছে বলছি শোনো। উনার দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠকুর ১৮০৭ সালে এই অঞ্চলের জমিদারি পান। ১৮৮৯ সালে নভেম্বর মাসে বিশ্বকবি এখানে প্রথম জমিদার হিসেবে অবস্থান করেন। এই যে ঘরটা দেখতে পারছো, এটা বর্তমানে সরকার কবির স্মৃতিচারণে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করেছে। দেখো কবির ব্যবহৃত আলমারি, পালকি, খাট, খাজনা আদায়ের চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। আর এই দেখো কবির হাতের লেখা ইংরেজি চিঠি। এখানে আছে কবির এবং নিজের পরিবারবর্গের ছবিসমূহ। উনি এখানে বসে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গানসহ বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করেছেন।

উনি কি গানও লিখেছেন দাদুভাই? কেন দিদিভাই! তিনি তো একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, শিল্পী, অভিনেতা এমনকি শেষ জীবনে এসে অনেক দুর্লভ ছবিও অঙ্কন করেছেন। এবার চলো বাইরে যাই।

দেখেছো বাড়ির মধ্যে কত সুন্দর ফুলের বাগান। পাখিগুলো কিচিরমিচির করে গান গাইছে, একদম আমার মিষ্টি টুকটুকি দিদি ভাইয়ের মতো। দাদু! দেখো পুকুরটায় একটি নৌকা! হ্যাঁ, দাদু এটি কবির বোট। কবি এটি ব্যবহার করতেন। এমন আরো একটি পুকুর আছে। এখানে আছে পদ্মা নদী। তোমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়নি দিদি ভাই। কী কথা দাদু? ১৯১৩ সালে বিশ্বকবি যে নোভেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেই বিশ্ববিখ্যাত গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ এই শিলাইদহ গ্রামে বসে কবিশুরু করেছিলেন। তাই নাকি দাদু ভাই! তাহলে শিলাইদহ তো আমাদের বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক স্থান। একদম ঠিক বলেছো।

আচ্ছা দাদু এই জায়গার নাম শিলাইদহ হলো কেন? খুব সুন্দর কথা। এই জায়গার পূর্বনাম ছিল খোরশেদপুর। এখানে একটি নীলকুঠি ছিল। শেলী নামের একজন নীলকর এটি স্থাপন করেন। গড়াই এবং পদ্মা নদীর প্রবাহের ফলে সৃষ্ট একটি ‘দহ’ অর্থাৎ, ঘূর্ণিস্রোত থেকে এই গ্রামের নাম হয়ে যায় শেলী-দহ। আর পরে শেলী-দহ থেকে শিলাইদহ নাম হয়। দাদু আমি এখন থেকে প্রতি বছর এখানে আসব দাদুভাই। অবশ্যই আসবে। এখন আসো দিদি ভাই তোমাকে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা এবং কুলফি খাওয়াব। আর ওই খেলনার দোকানগুলো থেকে খেলনা কিনে দেব। টুকটুকি নাচতে নাচতে বলল, কী মজা! কী মজা!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close