মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

  ১৪ মে, ২০২২

সোহম ও রাইয়ের গল্প

বাবা-মায়ের আদরের সন্তান সোহম ও রাই। বাবা-মা দুজনই শিক্ষক। মা প্রাইমারি স্কুলে, বাবা কলেজের। এক দিন ছুটির দিনে তারা ঘরোয়াভাবে একটা ছোট্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করল। সেই প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু অনেকগুলো কাগজে লেখা। সেই কাগজের টোকেনগুলো একটা কৌটায় থাকবে। সেখানে যে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা থাকবে প্রত্যেকের মনের মতো করে সে বিষয়ের ওপর উপস্থিত বক্তব্য রাখতে হবে। তাতে যে যেত নিখুঁতভাবে উপস্থাপনা করতে পারবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।

প্রথমে ছোট মেয়ে রাই টোকেন হাতে নিল। তাতে লেখা ছিল ফুল আমাদের পরিবেশে কী ধরনের উপকারে আসে?

রাই বলতে লাগল, ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক, ফুল ছোট-বড় সব মানুষ ভালোবাসে। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া বিরল! ফুল পবিত্র, আমরা যেমন একটা ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থাকলে, খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকি। তেমনি যখনই আমরা চোখের সামনে ফুল দেখি নিজেকে খুব স্নিগ্ধ ও পবিত্র মনে হয়। আমরা বাবা-মায়ের, ভাই-বোনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে ফুল ব্যবহার করি। প্রত্যেক ভালো কাজে ফুল ব্যবহার করার কারণ হলো যাতে ফুলের মতো কোমল ও নিষ্পাপ হওয়া যায়। এই মনোবল জোগাতে স্কুল-কলেজের প্রাঙ্গণেও নানা ধরনের ফুলগাছ লাগানো হয়।

এ ছাড়া ফুলের মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণে, মানুষের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে উদ্দীপনা জোগায়। ফুলের ঘ্রাণে প্রজাপতিরা ভিড় করে, যা পরিবেশে আলাদা সৌন্দর্য দান করে। মৌমাছিরা মধু আহরণ করে মৌচাকে জমিয়ে রাখে। মৌয়ালরা সেই চাক ভেঙে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে।

শেষে রাই ছন্দে ছন্দে বলল-

ফুলের পাপড়ি ছোট্ট শিশুর

মায়ের কোমল কোল;

এই কোলেতে বিঁধে না

কখনো যে হুল।

মা যেমনটা আগলে রাখে

দুঃখ কষ্ট ভুলে;

ফুলও পরিবেশকে

ঘ্রাণে মাতিয়ে তুলে।

ছোট মেয়ে রাইয়ের দারুণ উপস্থাপনায় বাবা-মা অনেক খুশি হয়ে হাত তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাল।

তারপর সোহম একটা টোকেন তুলল, তাতে লেখা অসুখী এবং সুখী মানুষ কারা?

সোহম খুব বুদ্ধিমান ছেলে, সে বলতে শুরু করল, প্রকৃতপক্ষে সুখী মানুষ হলো যাদের বাবা-মা এখনো বেঁচে আছে। বাবা-মাহীন এই পৃথিবী মরুভূমির বালির মতো।

আমার অনেক সহপাঠীর বাবা-মা নেই। তারা অনাদরে বড় হচ্ছে। বাবা-মায়ের আদর-স্নেহ কেমন হয়। সেটা তাদের কাছে অজানা। সেই অর্থে বলা যায় সে অসুখী মানুষ।

এদিক দিয়ে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ। কারণ আমার বাবা-মা এখনো বেঁচে আছেন। যাদের দেখে প্রতিদিন সকালটা আমার শুরু হয়। আমার মতো ভাগ্যবান ছেলে পৃথিবীতে খুব কম হয়। যদিও বই পুস্তকে আছে, যার কিছু নেই সে সুখী মানুষ। কিন্ত আমার কাছে যাদের এখনো বাবা-মা আছে তারাই সুখী মানুষ।

তা ছাড়া আমাদের সমাজের অনেক শ্রেণির মানুষ আছে। তাদের মধ্যে অনেকের বাবা-মা, থেকেও নেই। তারা রাস্তাঘাটে দিনের পরে দিন কাটায় কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। আমাদের সমাজ তাদের নাম দিয়েছে পথশিশু। অনেকে আবার টোকাই বলে গালমন্দ করে। তাদের আমরা অসুখী মানুষ বলতে পারি!

এবার সোহম ছন্দে ছন্দে বলল-

আমরা তো ভাই সবার সেরা

গেছো এটা ভুলে?

মানুষ ফেলে কুকুর বিড়াল

রাখো কোলে তুলে

এমন মানুষ এই সমাজে

আকাশছোঁয়া আজ;

ওদের কাণ্ডে বন প্রাণীরা

পাচ্ছে ভীষণ লাজ।

সোহমের এমন নিখুঁত চিন্তাচেতনার জন্য ওর বাবা-মা অনেক আপ্লুত হয়েছে। তার উপস্থাপনার মাধ্যমেই প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটে। এখন বিজয়ী ঘোষণার পালা। হঠাৎ সোহমের মা বলল যদিও আমরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় একটা স্থান বলে দাবি করি। তার পরও আজকের প্রতিযোগিতায় এই নিয়ম মেনে না নিয়ে দুজনকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। তাতে সোহম ও রাই অনেক আনন্দিত।

পরিশেষে সোহম বাবা রঞ্জিত বাবু বলেন, এ রকম ছোট্ট আয়োজনের মাধমে কোমলমতি শিশুদের চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানো যায়। তাদের মন কী চায়, আর কী কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়। সেই সম্পর্কে জানতে পারা যায়। তাতে আমাদের সন্তান যেদিক দিয়ে বেশি দক্ষ সেদিকে আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পারি এবং আমাদের সন্তানের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের ওপর জোর করে, আমরা আমাদের স্বপ্ন ছাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারব। প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত এভাবে সন্তানের ভালোমন্দ যাচাই করে কোমল মনে সাহস জাগানো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close