মাহমুদুল হাসান মুন্না

  ২২ জানুয়ারি, ২০২২

বোকামির দণ্ড

ঝিলের পাশেই আমগাছ। মগডালে বকের বাসা। বকটির পালকগুলো কাশফুলের মতো ধবধবে সাদা। বকটি সারা দিন ঝিলের পানিতে থাকে। ছোট ছোট মাছ ধরে গপাগপ গিলে ফেলে। পেট ভরে গেলে গাছের ডালে জিরিয়ে নেয়। খিদে লাগলে ফের পানিতে নামে। বকটি বেশ সুখী ছিল। কারণ ঝিলটি মাছে ভরপুর ছিল। কখনো অনাহারে থাকতে হয়নি। তাই বকটি হৃষ্টপুষ্ট ছিল।

ঝিলে একঝাঁক চুনোপুঁটি ছিল। তারা দল বেঁধে চলাফেরা করত। তবু সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকত। রাক্ষুসে বকটি যখন-তখন হানা দেয়। বকটি হাঁটুপানিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মাছের ঝাঁক সামনে এলে গপ করে ধরে ফেলে। তারপর পেটে চালান করে দেয়।

সেদিন বকটির পেট ভরা ছিল। তখন একটি চুনোপুঁটি ভুল করে তার সামনে চলে এলো। সে এখন পুঁটিকে খাবে না। পরে কীভাবে খাওয়া যায় তা ভাবতে থাকল। মনে মনে একটি ফন্দি আঁটল।

বকটি বলল, ‘কিরে পুঁটি, ভরদুপুরে কই যাস?’ পুঁটি থতমত খেল। ভীত গলায় পুঁটি বলল, ‘আজ শুক্রবার। স্কুল বন্ধ। তাই ঘুরতে বের হলাম। গান গাইতে গাইতে সাঁতার কাটছিলাম।’ বকটি বলল, ‘ছুটির দিনে ঘুরবি, আনন্দ করবি। তাই বলে আমার এলাকায় ঢুকে পড়বি?’

এ কথা শুনে পুঁটির বুক কেঁপে উঠল। হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। কাকুতি-মিনতি করে বলল, ‘প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন। জীবন ভিক্ষা দিন।’ বকটি ভালো সাজার চেষ্টা করল। পুঁটিকে বোকা বানাতে হবে। মিষ্টি কথায় মন ভোলাতে হবে। বকটি বলল, ‘তোর কোনো ভয় নেই। আমি চুনোপুঁটি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমি পুঁটিদের খুব ভালোবাসি।’

পুঁটি তো মহাখুশি। যেন মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে ফিরল। আরেকটু হলে ভয়ে মরে যেত। পুঁটি বকটির কথাগুলো বিশ্বাস করল। পুঁটি বলল, ‘বক ভায়া! আপনি যেমন সুন্দর, আপনার মনও তেমন সুন্দর। আপনি অনেক অনেক ভালো।’

বকটি মনে মনে হাসল। এখন পুঁটির সঙ্গে ভাব জমাতে হবে। তাই পুঁটিকে মজার মজার গল্প বলতে শুরু করল। পুঁটিও বকের সঙ্গে কথা বলে আনন্দ পেল। বকটি বলল, ‘অনেক সময় হয়ে গেল। তোর মা দুশ্চিন্তা করবে। আজ বাড়ি ফিরে যা। কালকে আবার আসিস।’ পুঁটি বিদায় জানিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেল। বকটিও নীড়ে ফিরে গেল।

পরদিন দুপুরবেলায় কাঠফাটা রোদ ছিল। ঝিলের পানি উষ্ণ হয়ে গেল। সব মাছ গভীর পানিতে চলে গেল। বকটি উপোস দাঁড়িয়ে ছিল। খিদের জ্বালায় পেট চোঁ চোঁ করছে। চোখেও ঝাপসা দেখছে। একটি চুনোপুঁটি খেতে পারলে মন্দ হতো না। অন্তত খিদে কিছুটা কমত। বকটি চুনোপুঁটির কথা ভাবছিল। বোকা পুঁটিটা যদি এখন আসত। তাহলে মজা করে খাওয়া যেত। তখন চুনোপুঁটি একা একা ঘুরছিল। বকের কাছে গল্প শুনতে সেদিকে যাচ্ছিল। একটি খলশে পুঁটিকে দেখতে পেল। সবাই গভীর পানিতে যাচ্ছে, কিন্তু পুঁটি কেন উল্টোদিকে যাচ্ছে? খলশে ঠিক বুঝতে পারল না। খলশে বলল, ‘কিরে পুঁটি, কই যাস?’ বক ভায়ার কাছে গল্প শুনতে যাই। অনেক মজার গল্প বলে। শুনলে আমার সঙ্গে চলো। এ কথা শুনে খলশে অবাক হলো। পুঁটি পাগল হয়ে গেল না কি? এসব কী বলে? বকের কাছে গল্প শুনবে! পুঁটি খলশের মনের অবস্থা বুঝতে পারল। পুঁটি বলল, ‘বক ভায়াটি অনেক ভালো। পুঁটি মাছ খায় না। গতকাল আমার সঙ্গে অনেক গল্প করল।’

খলশে বুঝল দুষ্ট বক পুঁটিকে বোকা বানিয়েছে। নিশ্চয় কোনো ফাঁদ পেতেছে। যেভাবে হোক পুঁটিকে বাঁচাতে হবে। খলশে বলল, ‘দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় গলে যাস না। ওরা ছলচাতুরীতে পাকা। মুখে মধু থাকলেও অন্তরে বিষ। দুষ্ট লোককে বিশ্বাস করতে নেই। ফিরে চল।’

চুনোপুঁটি খলশের কথায় কান দিল না। নাচতে নাচতে বকটির কাছে গেল। পুঁটিকে দেখে বকটির চোখ চকচক করে উঠল। বকটি পুঁটির খোঁজখবর নিল। পুঁটি গল্প শোনাতে বলল। তখন বকটি অট্টহাসি হাসল। পুঁটি তখনো কিছু বুঝল না। বকটি বলল, ‘আজ কোনো গল্প হবে না। আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত। তোকে তৃপ্তি করে খাবো।’ পুঁটি খুব ভয় পেল। পালিয়ে যাওয়াও অসম্ভব। পালানোর আগেই বকটি তাকে ধরে ফেলবে। পুঁটির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ভয়ে একদম বোবা হয়ে গেল। প্রতিবাদও করতে পারল না। বোকা পুঁটি ধোঁকা খেলো। ততক্ষণে বকটি পুঁটিকে গপ করে ধরে ফেলল। বকের ঠোঁটে আবদ্ধ হয়ে অসহায় পুঁটি ছটফট করতে থাকল। তখন খলশে বন্ধুর কথাগুলো মনে পড়ল। দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথাও বিশ্বাস করতে নেই। খলশের কথা না শুনে বোকামি করেছে। এখন বোকামির দণ্ড দিচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close