মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

  ২২ জানুয়ারি, ২০২২

আবিরের সফলতা

আয়মান তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র, সে ক্লাসের ফার্স্টবয়। তার আদব-কায়দা এবং কথা বলার স্টাইল অনেকের চেয়ে উত্তম। এজন্য স্কুলের সবাই আয়মানকে অনেক স্নেহ ও ভালোবাসে। আয়মানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু শাওন, তাসিন ও জহির তারা তিনজন। এজন্য সে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পছন্দ করে। তারা সব সময় স্যারদের পড়া শিখে আসে, তাই সব স্যার তাদের নামে প্রশংসা করে। ওদের প্রশংসার কথা শুনে আবির রেগেমেগে লাল হয়ে নিজের সিটে চুপটি করে বসে বসে কি জানি বিড়বিড় করে ভাবছে।

ছুটির ঘণ্টা দেওয়া মাত্র সবাই তড়িঘড়ি করে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেল। দপ্তরি ক্লাস রুমে তালা দিতে এসে দেখল আবির ক্লাসে বসে আছে। দপ্তরি আবিরকে বলল, ‘আরে আবির তুমি এখনো ক্লাস রুমে বসে আছো? তোমার সব বন্ধুরা তো বাসায় চলে যাচ্ছে! তুমি যাও না কেন? তাণ্ডনা হলে তোমার বাবা-মা তোমার জন্য চিন্তা করবে। আবির কেঁদে কেঁদে বলল আংকেল, আমাকে কেউ ভালোবাসে না কেন? দপ্তরি তাকে বললেন, ‘আবির হঠাৎ এমন কথা বলছো কেন বাবা?’ তোমাকে তো সবাই স্নেহ ও ভালোবাসে। তোমার বাবা-মাসহ আমরা সবাই তোমাকে খুব স্নেহ ও ভালোবাসি।

আবির বলল, ‘আংকেল আব্বু-আম্মু আর আপনি ছাড়া আমাকে কেউ স্নেহ ও ভালোবাসে না। দপ্তরি সজীব সাহেব বললেন, ‘তোমার এমনটা মনে হচ্ছে কেন? আবির বলল, ‘আংকেল, আয়মান, শাওন, তাসিন, জহির ভালো ছাত্র বলে আমার সঙ্গে মেলামেশা করে না এবং স্যাররা শুধু ওদের স্নেহ করে আর প্রশংসা করে! সজীব সাহেব বললেন, ‘বোকা ছেলে এটা ব্যাপার না, শুনো তুমি যদি মনোযোগ দিয়ে রেগুলার ক্লাসের পড়া শিখে আসো। তাহলে এক দিন তুমিও ওদের মতো ভালো ছাত্র হয়ে উঠবে।

আরেকটা কথা শুনো বাবা, ‘কখনো কারো প্রশংসা সরাসরি করতে নেই। করলে চিত্তে অহংকারের বিস্তার লাভ করে। একসময় দেখা যাবে সে তার অহংকারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ঝরে যায়। তাই কখনো অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে উৎফুল্ল হওয়া উচিত নয়। এখন তুমি প্রতিজ্ঞা কর নিয়মিত ক্লাসের পড়া শিখে আসবে। তাহলে তুমি সবার চোখের মধ্যমণি হয়ে উঠতে পারবে। দপ্তরির মুখে এসব কথা শুনে আবির একটু বল পেল। সে বলল, ‘আংকেল আজ থেকে আমি প্রতিদিনের পড়া প্রতিটি কমপ্লিট করব। এখন থেকে আর ফাঁকি দেব না।’

এই বলে দপ্তরি থেকে বিদায় নিয়ে আবির বাড়িতে চলে এলো। সন্ধ্যায় আবিরকে তার বাবা-মা, বলার আগেই সে পড়ার টেবিল গিয়ে নিজের পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তা, দেখে তার বাবা-মা দুজন অনেক খুশি হয়েছে। এখন থেকে আবির প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শিখে স্কুলে যায়। আবিরের এমন পরিবর্তন দেখে স্যাররা তার প্রতি অনেক খুশি হয়েছে। এখন স্যাররা আবিরকেও আয়মান, শাওন, তাসিন, জহিরের মতো আদর স্নেহ করে। এখন আয়মান, শাওন তাসিন, জহির তারাও আবিরের সঙ্গে মেলামেশা এবং খেলা করে।

দেখতে দেখতে আবিরদের বার্ষিক পরীক্ষা চলে আসল। এক এক করে পরীক্ষাগুলোও শেষ হয়ে গেল। পনেরো দিন পরে বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হলো। একপর্যায়ে আবিরের রেজাল্ট দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে গেল। কারণ আবির ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৮৫ পেয়ে ক্লাসের ফার্স্টবয় হয়ে গেল। স্যারের ঘোষণা শুনে আবির নিজের কানকেও বিশ্বাস করাতে পারল না।

দপ্তরি, আবিরের কাঁধে হাত দিয়ে বলে শাবাশ। তুমি পেরেছো, তোমার জন্য আরো ভালো কিছু সামনে অপেক্ষা করছে। আবির তাকে সালাম করে বলল, আংকেল আমার এই অর্জনের পেছনে আপনার অবদান। সে বলে, ‘ফোকাস যদি ঠিক থাকে তাহলে কেউ তোমাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করাতে পারবে না, এটা মনে রেখো। তোমার ফোকাস ঠিক ছিল বলেই তুমি সব বাঁধা ডিঙিয়ে বিজয়ের চূড়ায় পৌঁছাতে পেরেছো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close