তারিকুল ইসলাম লিমন

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

শিয়ালের বুদ্ধির খেলা

বনের রাজা সিংহ এক দিন এক বড় গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সে গাছের মগডালে বসে ফল ছিঁড়ে খাচ্ছিল এক বানর। হঠাৎ একটা ফল নিচে বসে থাকা সিংহের মাথায় পড়ল। সিংহ রেগে গিয়ে বলল, এই বানর, তুই নিচে নেমে আয়, তোকে এখনই হত্যা করব।

বানর বলল, ভুল হয়ে গেছে রাজামশাই। ক্ষমা করে দিন।

অনেক মিনতি করার পর সিংহ বলল, ঠিক আছে। কিন্তু তুই এই জঙ্গল থেকে চিরদিনের জন্য চলে যাবি।

বানর বলল, কিন্তু কেন?

সিংহ বলল, আমি এই বনের রাজা। আমি নির্দেশ দিচ্ছি তাই তোকে তা মানতে হবে। তোকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।

বানর তার পরিবার নিয়ে দুঃখী মনে জঙ্গল থেকে চলে যাচ্ছিল। পথে অন্য প্রাণীদের সঙ্গে দেখা হলো। তারা জিজ্ঞেস করতে বানর সবকিছু খুলে বলল।

বন মহিষ বলল, রাজা মশাইয়ের অত্যাচার দিন দিন বেড়ে চলেছে। সে প্রতিদিন তৃণভোজী প্রাণীদের ধরে ধরে খাচ্ছে। অন্য প্রাণীরা কেউ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না।

সবাই বলল, ঠিক ঠিক।

হরিণ বলল, রাজা বদলাতে হবে।

সবাই বলল, ঠিক ঠিক।

জিরাফ বলল, কিন্তু কীভাবে?

বন মহিষ বলল, ভোটের মাধ্যমে।

সবাই মিলে সিংহের কাছে গেল। সিংহ সব শুনে বলল, তোমরা আমাকে রাজা মানতে চাও না, তাইতো। আমি ছাড়া কে রাজা হবে?

ময়ূর বলল, বানর।

সিংহ হাসতে হাসতে বলল, তোমরা কি পাগল হয়ে গেলে? রাজা হয় বংশপরম্পরায়। রাজার ছেলে অর্থাৎ সিংহের ছেলেই রাজা হবে। আর রাজা হতে হয় শক্তিশালী কাউকে। বানর রাজা হলে তাকে কেউ ভয় পাবে না। জঙ্গল অরক্ষিত হবে।

বন মহিষ বলল, আপনি প্রাণী হত্যা করেন। তাই মাংসাশী নয় এমন কেউ রাজা হবে। বানর বুদ্ধিমান। কাউকে হত্যা করে না আর ওদের শারীরিক গঠনও মানুষের মতন। তাই বানরকেই আমরা রাজা হিসেবে চাই।

সিংহ বলল, তোমরা কি জানো না বনে রাজতন্ত্র চলে। হুট করে একজনকে রাজা বানাবে কীভাবে?

বন মহিষ বলল, ভোটের মাধ্যমে। আপনি যদি সবার ভালো চান তবে বানরের সঙ্গে ভোটে দাঁড়াবেন। যে জিতবে সে-ই রাজা হবে।

সবার চাপের মুখে সিংহ রাজি হলো। কিন্তু সে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে জানে কেউ তাকে ভোট দেবে না। তাকে এত দিনের রাজত্ব হারাতে হবে। সে গেল মাস্টার মশাই অর্থাৎ শিয়ালের কাছে একটা পরামর্শের জন্য।

শিয়াল সব শুনে বলল, আমি আপনাকে পুনরায় রাজা বানাতে পারি। কিন্তু তাতে আমার কী লাভ হবে, সেটা আগে বলুন।

সিংহ বলল, আমি রাজা হলে তোমায় বনের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর আসনে বসাব। তোমায় আমার মন্ত্রী বানাব।

শিয়াল প্রস্তাব শুনে রাজি হয়ে গেল। সে পাশের জঙ্গলে গিয়ে বাঘ, হায়েনা সব হিংস্র প্রাণীকে বলে এলো, তোমাদের এখানে তো খাদ্যের অনেক অভাব। তোমরা কেন আমাদের জঙ্গলে আসো না? আমাদের রাজামশাই তোমাদের দাওয়াত করেছেন। ওখানে শিকারের কোনো অভাব নেই।

সবাই শিয়ালের কথামতো এই জঙ্গলে এসে তৃণভোজী প্রাণী শিকার করতে লাগল। বনের তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এলো। সবাই কোনো উপায় না দেখে প্রাণ বাঁচাতে রাজামশাইয়ের কাছে ছুটে গেল।

সবাই বলল, আপনি আমাদের বাঁচান। বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আমাদের কারোরই নেই। আপনিই একমাত্র শক্তিধর যে তাদের সঙ্গে লড়াই করে জিততে পারবেন।

সিংহ বলল, তোমরা তো আমাকে রাজা মানো না। তোমরা অন্য কাউকে রাজা বানাতে চাও। আমি তোমাদের বিপদে কেন সাহায্য করব? কেন তোমাদের বাঁচাব?

সবাই সমস্বরে বলে উঠল, আপনিই আমাদের রাজা ছিলেন, আপনিই আমাদের রাজা থাকবেন। আমরা নতুন রাজা চাই না।

সিংহ বলল, ঠিক আছে, আমি দেখছি কী করা যায়।

সিংহ হুংকার দিয়ে অন্য জঙ্গল থেকে আগত হিংস্র প্রাণীদের দিকে তেড়ে গেল। বাঘ, হায়েনা সবে ভয়ে পিছপা হয়ে নিজেদের জঙ্গলে ফিরে গেল। সবাই আগের মতো শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

এবার শিয়াল সিংহের কাছে গিয়ে বলল, বনের সব প্রাণীর ডেকে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিন। সবাইকে বলুন, আমি আপনার রাজ্যের মন্ত্রী।

সিংহ ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে বলল, তোকে মন্ত্রী বানাব। হা হা। বনের রাজা, মন্ত্রী, উজির, নাজির সবাই হবে সিংহের বংশধর। যা ভাগ এখান থেকে।

শিয়াল ভাঙা মন নিয়ে ফিরে এলো। কিন্তু সে-ও ছাড়ার পাত্র নয়, রাগে, ক্ষোভে জ্বলতে লাগল। শিয়াল মনে মনে ফন্দি আঁটল। সে পাশের গ্রামে গিয়ে হাঁস-মুরগি ধরে ধরে খেতে লাগল। গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। এমন কি শিয়াল গ্রামের লোকদের দেখিয়ে দেখিয়ে দিনের বেলাও হাঁস, মুরগি, কবুতর ধরে খেত। যেই না লোকজন তেড়ে আসত, অমনি শিয়াল দৌড়ে বনের দিকে ছুটে পালাত।

এক দিন গ্রামবাসী শিয়ালকে তাড়া করে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। শিয়াল দৌড়াতে দৌড়াতে সিংহের কাছে এসে ঝোপের পেছনে লুকিয়ে পড়ল। গ্রামবাসী ছুটতে ছুটতে এসে সামনে একটা সিংহ দেখে আঁতকে উঠল। সবাই লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সিংহকে হত্যা করল।

গ্রামবাসী চলে যাওয়ার পর শিয়াল ঝোপ থেকে বের হয়ে মৃত সিংহের কাছে এসে দাঁড়াল। মৃত সিংহকে উদ্দেশ করে বলল, রাজা হতে চাইলে শুধু শক্তিধর হলে চলে না, বুদ্ধিমানও হতে হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close