আবু আফজাল সালেহ

  ০৮ জানুয়ারি, ২০২২

তোমাদের জন্য লেখা

ছোটদের জসীম উদ্‌দীন

‘আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,/রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।/বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,/একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি...’- (আসমানী) অথবা ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা,/ফুল তুলিতে যাই/ফুলের মালা গলায় দিয়ে/মামার বাড়ি যাই... ঝড়ের দিনে মামার দেশে/আম কুড়াতে সুখ/পাকা জামের শাখায় উঠি/রঙিন করি মুখ’- (মামার বাড়ি)- কে মুখে মুখে বলেনি এ দুটি ছড়া-কবিতা! রাখাল ছেলে ও ফুটবল খেলোয়াড় সামাদের কথা আমরা জসীম উদ্‌দীনের কবিতা থেকেই বেশি শুনেছি।

‘হাসু’ ও ‘এক পয়সার বাঁশি’ দুটি শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ। কাব্যগ্রন্থের বেশির ভাগ কবিতায় তোমাদের মতো করে লেখা। একটু না হয় পড়েই দ্যাখো-

(১) ‘এই খুকীটির সঙ্গে আমার আলাপ যদি হয়,/সাগর-পারের ঝিনুক হয়ে ভাসবো সাগরময়;/রঙীন পাখীর পালক হয়ে ঝরবো বালুর চরে,/শঙ্খমোতির মালা হয়ে দুলব ঢেউ-এর পরে।/তবে আমি ছড়ার সুরে ছড়িয়ে যাব বায়,/তবে আমি মালা হয়ে জড়াব তার গায়’- (আলাপ, হাসু)

(২) ‘এই খুকিটির সঙ্গে তোমার আলাপ যদি থাকে,/বলো যেন আসমানীদের বারেক কাছে ডাকে’- (খোসমানী)

(৩) ‘খুকুমণি! লক্ষèীমণি! তোমায় আমি চাঁদ বলিব,/সন্ধ্যা মেঘের টুকরো ছিঁড়ে তোমার দুটো পায় দলিব’- (কবি ও চাষার মেয়ে, এক পয়সার বাঁশী)

(৪) ‘এত হাসি কোথায় পেলে/কথার খলখলানি/কে দিয়েছে মুখটি ভরে/কোন বা গাঙের কলকলানি।/কে দিয়েছে রঙিন ঠোঁটে/কলমী ফুলের গুলগুলানি।/কে দিয়েছে চলন বলন/কোন সে লতার দোল দুলানী।’- (এত হাসি কোথায় পেলে)

(৫) ‘হাসু’ গ্রন্থ থেকে- ‘কমলা লেবুর দেশে থাকে/কমলাবতী মেয়ে/মুখখানি তার অনেক রাঙা/কমলা লেবুর চেয়ে’- (কমলাবতী মেয়ে)

বিন্নি ও শালি ধানের নাম আমরা শুনেছি, তাই না? নবান্নের সময় এসবের কদর ছিল আগেরকার সময়। এসবের খবর কিন্তু কবি জসীম উদ্‌দীনের কবিতা থেকেই বেশি শুনেছি আমরা। আরো শুনেছি মৌরীখেতে লুটপুটি খেলা-

(১) ‘আমার বাড়ি যাইও ভোমর,/বসতে দেব পিঁড়ে,/জলপান যে করতে দেব/শালি ধানের চিঁড়ে।/শালি ধানের চিঁড়ে দেব,/বিন্নি ধানের খই,/বাড়ির গাছের কবরী কলা/গামছাবাঁধা দই’- (আমার বাড়ি)

(২) ‘চির বিরিঞ্চির গাছে রে ভাই লাল টুকটুক টিয়া,/বসে আছে মৌরী-ফুলের ছাতি মাথায় দিয়া’- (আবল-তাবল, এক পয়সার বাঁশী)

কবি জসীম উদ্‌দীনের মানবিক সত্তাও ফুটে উঠেছে শিশুতোষ ছড়া ও কবিতায়। আবার ব্যথাতুর হয়েছে এতিম শিশুর শোকে-

(১) ‘সবার সুখে হাসব আমি/কাঁদব সবার দুখে,/নিজের খাবার বিলিয়ে দেব/অনাহারীর মুখে’- (সবার সুখে)

(২) ‘কোথায় আমার রাজার কুমার, শুয়ে মায়ের কোলে/তোমার কি ঘুম ভাঙবে না এই শিশুর চোখের জলে’- (পূর্ণিমা)। এতিম শিশুর জন্য ব্যথাতুর কবি। হৃদয়ে শোক এনে দাগ কেটে দেয় কবিতাটি।

তোমাদের মতোই ছোট্ট মেয়ে হাসু। এই হাসু নিয়েই কবি লিখলেন ‘হাসু’ কবিতা। ‘হাসু একটি ছোট্ট মেয়ে এদের মতো- তাদের মতো,/হেথায় হোথায় ছড়িয়ে আছে খোকাণ্ডখুকু যেমনি শত।/নয় তো সে চাঁদের চাঁদকুমারী তারার মালা গলায় পরে/চালায় না সে চাঁদের তরী সারাটা রাত গগন ভরে.../তবু তারে ভালোই লাগে চাঁদের দেশের চাঁদের মেয়ে/শঙ্খমালা, কঙ্খমালা, রঙ্গমালা সবার চেয়ে।’

কবি জসীম উদ্‌দীন বলেছেন, শিশুদের চোখে দেখলে সবকিছু সবুজ ও নিষ্পাপ বলে মনে হয়। ‘হাসু’ গ্রন্থের ‘ঠিকানা’ কবিতায় লিখলেন- ‘... আমার ছোট আবাসখানি দেখতে পাবে সেখানটিতে।/সেখানে ভাই সূয্যি ওঠে, রাতের চাঁদের পিদীম জ্বলে,/দেখা সে সব যায় তোমাদের শিশুর চোখের চাউনি হলে।’ আসলেই শিশুরা নিষ্পাপ। তারা ভালোকিছুই দেখে থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close