প্রণব মজুমদার

  ০৮ জানুয়ারি, ২০২২

অল্পে গল্পে ঘুম

জয়িতার ঠাকুরমা বেড়াতে এসেছেন। তবে তিনি থাকেন চাঁদপুরে মেজো জেঠুর কাছে। প্রতি মাসে বাবা ঠাকুরমাকে নানা জিনিস ও ওষুধপত্র নিয়ে দেখতে যান জেঠুর বাড়িতে। ঠাকুরমাকে বাবা নিয়েই এলেন ঢাকায়। ঠাকুর মা অনেক দিন থাকবেন। বড় পিসিমণির মেয়ে অন্তু দিদির বিয়ে, মেজো পিসির বাসায় বেড়ানো ও স্নায়ুরোগের চিকিৎসক দেখাবেন। সেজন্য ঠাকুরমার ঢাকায় আসা। গল্প শুনিয়ে এবং মাথায় বিলি কেটে জয়িতাকে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাসটা বাবাই করেছেন! মহাবিদ্যালয়ে অঙ্কের শিক্ষক বাবার যুক্তি হলো গল্পে গল্পে অল্পে শিশুর আদর্শগত বিকশিত করা। বাবা ভাবলেন ভালোই হলো জয়িতার নাম দাতা ঠাকুরমা ওকে রাতে গল্পে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন। আর এ সময় বাবা বইপাঠে মনোনিবেশ করতে পারবেন।

মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে জয়িতার বিদ্যালয়ে প্রবেশ। ওর পীড়াপীড়িতে বাবা গোপীবাগের একটি শিশু বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন ওকে। চটপটে ও মিশুক জয়িতা। শিক্ষিকাকেও প্রশ্ন করে সে। শিক্ষকরা জয়িতাকে ভারি পছন্দ করেন! তাতে মা সবচেয়ে খুশি হন। বেশির ভাগ সময় ব্যাংকার মা ওকে বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া করেন। শ্রেণিবন্ধু আঁচল এবং ইভান ওর পাশে প্রায় সময়ই বসে। ইভান ওকে সহযোগিতা করলেও আঁচল ওর পেছনে লেগেই থাকে। কদিন আগে আঁচল ওর ছোট একটি রাবার জয়িতার ডান কানে ঢুকিয়ে দেয়। ক্লাস ম্যাম ছাত্রছাত্রীদের রোল কল করছিলেন। জয়িতা ভয়ে কাঁপছিল। ইভান তা দেখতে পায়। নাম ডাকা শেষ হলে ম্যামকে ইভান বিষয়টি জানায়। গোটা বিদ্যালয়ের সবাই এ ঘটনায় ভয় পেয়ে যায়! প্রায় সবাই জয়িতাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ম্যাম আয়ার মাধ্যমে মাকে জানান। তারপর মা-বাবাকে খবর দেন। দুজনে মিলে রামকৃষ্ণ মিশন চিকিৎসালয়ে যান। জয়িতার কান থেকে বের হয় রাবার। ঘটনাটি ঠাকুরমাকে জানায় জয়িতা। শুনে তো ওনার চক্ষু চড়কগাছ! জিহ্বা বের করে তাতে দাঁত রেখে শুধু বলেন, এটা কী হলো দাদুভাই! বোকাদের সঙ্গে কখনোই মেশবে না। তাতে বুদ্ধি নাশ হয়!

বাবা টিউশনি শেষে রাতে বাসায় ফিরেছেন। হাত-মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসেছেন। মা বাবাকে খাবার দিচ্ছেন।

- মা খেয়েছে?

- হ! দুধ রুটি ও সন্দেশ।

- জয়িতা কি খেলো?

- নুডলস।

- ওরা কী করে?

- আর কি! ঠাকুরমার কাছে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনছে। তোমার মতো মা ওকে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছেন। বাবা-মার খাটে জয়িতা ও ঠাকুরমা। তিনি এন্ট্রান্স পাস। জীবনে প্রচুর বই পড়েছেন। এখনো সে অভ্যাস যায়নি। এ বাসায়ও ওনার দৈনিক খবরের কাগজ আদি অন্ত পাঠ করা চাই। জয়িতা ঠাকুরমাকে ফের গল্প শোনানোর অনুরোধ করে।

- ঠাকুমা, ও ঠাকুমা! আরেকটা গল্প বলো না?

তন্দ্রাচ্ছন্ন ঠাকুরমা নড়ে ওঠেন! আর বলব না আজ! এটাই শেষ কিন্তু দাদুভাই। ঠিক আছে?

- আচ্ছা! অল্পে গল্পে দিবো ঘুম!

- শোন তাহলে! রাজা মহাশয় প্রতিদিন দিবনিদ্রা যান।

- দিবনিদ্রা মানে?

- দিনে ঘুম।

- আচ্ছা বলো!

- রাজার বন্ধু বানর। রাজা তাকে বললেন- বন্ধু আমার নিরাপদ ঘুম প্রয়োজন। আমি ঘুমিয়ে পড়লে তুমি দেখো, কেউ যেন আমাকে বিরক্ত না করে! রাজা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নাক ডাকছেন তিনি। এমন সময় একটি মাছি রাজা মহাশয়ের আশপাশে উড়তে লাগল। মাছিটা বিরক্ত করছে রাজাকে। কখনো তার ভুঁড়িতে বসছে। কখনো উড়ে গিয়ে বসছে রাজার হাতে। বানর বন্ধু প্রাণপণভাবে মাছি তাড়াতে লাগল। বন্ধু রাজার নিরাপদ ঘুম বলে কথা! কিন্তু বন্ধু ব্যর্থ। বানর খেয়াল করল, মাছিটা এবার রাজার কপালে বসেছে। বানর আস্তে আস্তে গেল দরজার সামনে। কোণে ছিল দরজা বন্ধ করার লাঠি। সেই ডাসা দিয়ে দিল রাজার কপালে বাড়ি! আঘাতে জেগে ওঠেন বন্ধু রাজা। জোরে চিৎকার করে উঠলেন তিনি! ‘এ কী করলে বন্ধু তুমি? কপালে হাত রাখলেন রাজা। দেখলেন মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। হতভম্ব বানর!

- গল্পে কী বুঝলে দাদুভাই?

- বোকা ও হাঁদারামের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নেই!

- ঠিক। বোকা বানরটা ঠিক তোমার বন্ধু আঁচলের মতো!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close