আবদুস সালাম

  ১৬ অক্টোবর, ২০২১

ইঁদুর ও বোকা বিড়াল

এক গেরস্থের বাড়িতে বেশ কিছু ইঁদুর ছিল। ইঁদুরগুলো খুব চালাক ছিল। ইঁদুরগুলো গেরস্থের বাড়িতে আরাম-আয়েশে বাস করত। কোনো উৎপাত করত না। মালিকের ফেলে দেওয়া খাবারগুলো খেত। এ ছাড়া মাঝে মাঝে ইঁদুরগুলো বাইরে থেকে খেয়ে আসত। তাই মালিক কোনোদিন ইঁদুরের অস্তিত্ব টের পায়নি। কিন্তু হঠাৎ এই বাড়িতে বাইরে থেকে একটা ধেড়ে ইঁদুর এসে জুটল। সেই ধেড়ে ইঁদুরটি গেরস্থের বাড়িতে বেশ উৎপাত শুরু করল। ইঁদুরটি খাবার নষ্ট করত, জামা কাটত এবং যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করত। গৃহস্থ ভাবল এই বাড়িতে এত দিন কোনো ইঁদুর ছিল না। বেশ কিছুদিন ধরে এ বাড়িতে ইঁদুরে উৎপাত শুরু করেছে। তাই ওই গেরস্থ ইঁদুরগুলো মেরে ফেলার জন্য বাড়িতে একটি বিড়াল এনে পোষা শুরু করল।

এদিকে ইঁদুরগুলো বেশ বিপদে পড়ে গেল। তারা যখন-তখন বাইরে যেতে পারছে না। খাবার খেতে পারছে না। আর ভালো ভালো খাবার খেয়ে বিড়ালটি সব সময় ঘর পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু এর পরও ইঁদুরের অত্যাচার বন্ধ হয়নি। তাই গেরস্থ সিদ্ধান্ত নিলেন এই বিড়ালকে বিদায় দিয়ে অন্য একটি বিড়াল এনে পুষবেন। বিষয়টি জানার পর বিড়ালটি বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে অনেক চেষ্ট করেও ইঁদুরগুলোকে ধরতে পারেনি।

বিড়ালের এ রকম দুশ্চিন্তা দেখা একটা ভালো ইঁদুর বিড়ালকে দূর থেকে ডেকে বলল, শোনো বিড়াল তুমি আমাদের সাথে সন্ধি করো। তাহলে তোমারও ভালো হবে, আমাদেরও ভালো হবে। বিড়াল সন্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ইঁদুরটি বলল, আমাদের এখানে একটি দুষ্ট ইঁদুর আছে। ওই ইঁদুরটিই এই বাড়িতে উৎপাত শুরু করেছে। আমরা তো এখানে অনেক দিন ধরে আছি, আমরা মালিকের কোনো ক্ষতি করি না। তুমি চাইলে ওই ইঁদুরকে মারতে পারবে। আমরা না হয় ওই দুষ্ট ধেড়ে ইঁদুরকে মারার জন্য তোমাকে সাহায্য করব। বিড়ালটি ইঁদুরের এসব কথা শুনে রাজি হয়ে গেল। তারপর এক দিন সুযোগমতো ভালো ইঁদুরগুলোর সাহায্য নিয়ে বিড়ালটি দুষ্ট ইঁদুরটিকে হত্যা করল।

বর্তমানে ইঁদুরের কোনো উৎপাত না থাকায় গেরস্থ বিড়ালের প্রতি খুব খুশি হলো। এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে বিড়াল এবং ইঁদুরগুলোর ভালোভাবেই দিন কাটতে থাকল। হঠাৎ বিড়ালটির মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো। সে ভাবল ইঁদুরগুলোকে বাড়িছাড়া করবে। তাই বিড়ালটি এক দিন একটা ভালো ইঁদুরকে হত্যা করল। তা ছাড়া অন্য ইঁদুরগুলোকে সুযোগ পেলেই তাড়া করে বেড়ায়। এতে ইঁদুরগুলো বিড়ালের প্রতি ভীষণ রেগে গেল এবং এর প্রতিবাদ করল। কিন্তু বিড়াল এতে কোনো কর্ণপাতই করল না।

এদিকে ইঁদুরগুলোও বিড়ালকে বাড়িছাড়া করার জন্য ফন্দি আঁটল। এক দিন দূর থেকে একটা ইঁদুর বিড়ালকে বলল, জানো দুদিন পরেই গেরস্থের মেয়ের বিয়ে। এ উপলক্ষে অনেক খাবার রান্না করা হবে। কিন্তু একটা সমস্যা হলো কি জানো? এ ধরনের অনুষ্ঠানের আগে এলাকায় আমাদের মতো একটা ছোট অদ্ভুত প্রাণীর আবির্ভাব হয়। তারা সুযোগমতো ঘরের মধ্যে ঢুকে লুকিয়ে থাকে। সেই প্রাণীটা বিড়ালকে মোটেও সহ্য করতে পারে না। বিড়াল দেখলেই গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর সুযোগমতো কামড় বসিয়ে তাকে হত্যা করে। আমরা তোমার ভালো চাই বলেই তোমাকে সাবধান করে দিলাম। খবরদার বিষয়টি ভুলে যেও না। যেকোনো সময়ই বিপদ আসতে পারে। সব সময় সাবধান থাকবে। বিড়ালটি ইঁদুরের সব কথা বিশ্বাস করল। এসব কথা মনে পড়লেই বিড়ালটি বেশ ভয় পায়। ওই প্রাণীটির দুশ্চিন্তায় বিড়ালের আর মোটেও ঘুম আসছে না। সব সময় তার একই চিন্তা।

দুদিন পরেই সেই বিয়ের অনুষ্ঠানটি শুরু হলো। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে অনেক লোকজনও এসেছে। ভালো ভালো খাবারও রান্না হচ্ছে। আর রান্নাঘরের এসব খাবার পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে বিড়ালের ওপর। ঠিক বিয়ের আগের দিন ভালো ভালো অনেক খাবার রান্না করা হয়েছে। এসব খাবার পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব আগের মতো বিড়ালের ওপরেই রয়েছে। কিন্তু বিড়াল সেই অদ্ভুত প্রাণীটির কথা মোটেও ভুলতে পারছে না।

গভীর রাতে একটা ইঁদুর মুখোশ পরে চুপিচুপি রান্নাঘরে ঢুকে পড়ল। বিড়ালটি মোটেও টের পেল না। সুযোগমতো ইঁদুরটি বিড়ালের গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। বিড়ালটি ভয় পেয়ে রান্নাঘরের মধ্যে ছোটাছুটি করতে লাগল। কিন্তু ইঁদুরটি মোটেও ক্ষান্ত হলো না। সেও বিড়ালকে তাড়া করতে থাকল। আর বিড়ালটি প্রাণের ভয়ে রান্নাঘরে লাফালাফি করতে করতে সব খাবার নষ্ট করে ফেলল। আর এই সুযোগে ইঁদুরটিও লুকিয়ে পড়ল।

সকালবেলায় বাড়ির মালিক ঘুম থেকে উঠে বিড়ালের কাণ্ড-করাখানা দেখে ভীষণ রেগে গেল। তারপর বিড়ালকে আচ্ছামতো পিটুনি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল। এ ঘটনার পর থেকে কখনো মালিক বাড়িতে কোনো বিড়াল পোষেনি। অবশেষে ইঁদুরগুলো আবার আগের মতো এই বাড়িতে ভালোভাবে বসবাস করতে থাকল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close