শাকিব হুসাইন

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নীল পরী কাশফুল হয়েছিল

প্রকৃতিতে ঋতু রানি শরৎকাল এসেছে। আকাশজুড়ে মেঘেদের ছোটাছুটি খেলা চলছে। বাতাসের দোলায় নদীর তীরের কাশফুলগুলো দুলছে। বাতাসে শিউলি ফুলের মিষ্টি সুবাস দূর দিগন্ত থেকে ভেসে আসছে। এমন দিনে ঘরে কি আর মন থাকে। সবার ইচ্ছা জাগে মাঠে ছুটতে। আজ বিকালে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে আশিকও মাঠে খেলতে গেল। আকাশে মেঘেদের ছোটাছুটি দেখে আশিকেরও মেঘ হতে ইচ্ছা করে। আশিকের মাথায় নানা রকম কল্পনার জন্ম নেয়। কখনো ভাবে প্রজাপতি হতে, কখনো ভাবে পাখি হতে, আরো নানা রকম ভাবনা আবিষ্কার করে আশিক। হঠাৎ করে রাতুলের ডাকে তার ঘোর ভেঙে যায়। পেছন থেকে রাতুল ডাকে, ‘এই আশিক এদিকে আয়। আমাদের দল বাছাবাছি হয়ে গেল তো।’

রাতুলের ডাকে আশিক তাদের কাছে গেল। সবাই দুই দল হয়ে খেলা শুরু করল। খেলার শেষে সবাই বাড়ির পথ ধরল। কেবল আশিকই মাঠে থেকে গেল। হঠাৎ আশিকের চোখ গেল একটা কাশফুলের দিকে। কী অদ্ভুত কাশফুলটা। একাই এক জায়গায় আছে। আপন মনে বাতাসের দোলায় দুলছে। আশিক কাশফুলটার কাছে গেল। কিছু সময় কাশফুলটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। তারপর কী যেন ভেবে কাশফুলটা ছিড়ে ফেলল। কাশফুলটা ছেড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য জায়গায় উড়ে গিয়ে একটা সুন্দরী পরীতে রূপ নিল। এরকম দৃশ্য দেখে আশিক খুব ভয় পেয়ে গেল। নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল সেখানে। তখনই পরী বলে উঠল, ‘তুমি কি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো? তোমার কোনো ভয় নেই। আমি কোনো ভূতটুত না। আমি হলাম নীল পরী। আজ তোমার জন্য আমি মুক্তি পেলাম কাশফুলের রূপ থেকে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

এবার আশিকের ভয় চলে গেল।

আশিক বলল, ‘নীল পরী তুমি কাশফুল হয়েছিলে কীভাবে?’ নীল পরী বলল, ‘সে এক করুণ ইতিহাস। আমি হলাম নীল পরীলোকের একমাত্র রাজকন্যা। আমার গায়ের রং নীল বলে সবাই আমাকে নীল পরী বলেই ডাকত। কিন্তু এক দৈত্য আমাকে মারার জন্য নানা রকম বুদ্ধি করত। প্রতিবারে সে আমাকে মারতে এসে বিফল হতো।’ এক শরৎকালে দৈত্য আমার মায়ের রূপ ধরে এসে বলে, ‘চল নীল পরী পৃথিবী থেকে ঘুরে আসি। আমি মায়ের কথা অমান্য করতাম না। মা মনে করে তার সঙ্গে পৃথিবীতে চলে আসি। পৃথিবীতে চলে এলে দৈত্যের আসল রূপ বেড়িয়ে আসে। সে আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করল কিন্তু মারতে পারল না। কারণ আমার প্রাণ নীল পরীলোকে লুকানো ছিল। তারপর সে আমাকে কাশফুল করে দিল।’ আর যাওয়ার সময় বলে গেল, ‘যদি কোনো মানব শিশু এই কাশফুলকে ছিড়ে ফেলে তাহলেই তুই এখান থেকে মুক্তি পাবি।’

এই বলে সে চলে গেল। তারপর থেকে আমি কাশফুল হয়ে এখানে পড়ে রইলাম। শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনতাম কখন আমি মুক্তি পাব। আর আজ তার প্রহর শেষ হলো। তুমি এসে কাশফুলকে ছিড়লে আর আমি মুক্তি পেলাম। এই হলো আমার কাহিনি। তোমার প্রতি আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আশিক বলল, ‘তোমার কথা শুনে আমারও খুব খারাপ লাগছে। এবার তুমি তোমার মায়ের কাছে যাও নীল পরী।’ নীল পরী বলল, ‘তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসা বন্ধু।’ এই বলে নীল পরী নীল পরীলোকে ফিরে গেল। এখন তারা খুব ভালো বন্ধু। প্রতিদিন রাতে নীল পরী আশিকের কাছে আসে। অনেক অনেক গল্প করে আবার নীল পরী পরীলোকে ফিরে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close