মুহাম্মদ বরকত আলী

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্বপন-বুড়োর দেশে

আজ তোমাদের সত্যিকারের একটা গল্প শোনাব। কারো কাছ থেকে শোনা গল্প নয়। এটা আমার নিজের গল্প। আমি তখন তোমাদের মতো ছোট ছিলাম। পড়াশোনা করতাম। আব্বু-আম্মুর কথা শুনতাম। একা বাড়ির বাইরে যেতাম না। মা বারণ করেছিল। একা গেলে যদি হারিয়ে যাই তাহলে আব্বু-আম্মু কাঁদবে। বিকাল হলে আমাদের ছাদ বাগানে গিয়ে গাছ, ফুল আর পাখির সঙ্গে খেলা করতাম।

প্রতিদিনের মতো সেদিনও বিকালে ছাদ বাগানে খেলা করছি। হঠাৎ কোথা থেকে এক বুড়ো এসে হাজির। কখন এসেছে তাও জানি না। বুড়োর গায়ে জমকালো রং বাহারি পোশাক। ইয়া লম্বা সাদা দাড়ি। মাথার সাদা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। বুড়ো বলল, ‘ভয় পেয়ো না মিরা। আমি স্বপন-বুড়ো।’ ‘তুমি আমার নাম জানলে কী করে?’ আমি বললাম। বুড়ো এক গাল হেসে বলল, ‘আমি সবার নাম জানি।’ ‘তুমি এখানে কেন এসেছ? আমার সঙ্গে খেলবে?’ আমি বললাম। ‘হ্যাঁ খেলব। তবে এখানে না। আমার দেশে গিয়ে খেলব। চলো তোমাকে নিতে এসেছি।’ ‘তোমার দেশ কোথায়?’ ‘আমার দেশের নাম, সব পেয়েছির দেশ। সেখানে তুমি যা চাইবে তাই পাবে।’ ‘আমাকে কেন নিয়ে যাবে?’ স্বপন-বুড়ো বলল, ‘তুমি আব্বু-আম্মু কথা শুনো। স্কুলে যাও। পড়ালেখা করো। তুমি খুব ভালো। যারা তোমার মতো ভালো তাদের আমি সব পেয়েছির দেশে নিয়ে যাই। এক দিনের জন্য সব ইচ্ছা পূরণ করি।’ ‘তুমি আমাকে কীভাবে নিয়ে যাবে? তুমি তো বুড়ো হয়ে গেছো। একদম থুরথুরে বুড়ো। গায়ে শক্তি নেই। পারবে না আমাকে নিয়ে যেতে।’ স্বপন-বুড়ো হেসে বলল, ‘মিরা, এটা তোমার ভুল ধারণা। বয়সে আমি বুড়ো হয়ে গেলেও আমার মনের বেজায় জোর আছে। স্বপ্ন পূরণ করতে হলে শুধু শরীরের শক্তির প্রয়োজন হয় না, মনের শক্তির প্রয়োজন হয়। মন বল না থাকলে তুমি কোনো কাজেই সফল হতে পারবে না। আমার প্রচুর মন বল আছে।’ এই বলে বলল, ‘আমার হাত ধর।’

স্বপন-বুড়ো তার হাতটা বাড়িয়ে দিল। হাত ধরতেই স্বপন-বুড়ো আমায় নিয়ে ছুটল হাল্কা হাওয়ায় ভেসে। মেঘ পাড়ি দিয়ে আরো ওপরে আমায় নিয়ে দিল পাড়ি। এসে পৌঁছালাম এক দেশে। কী চমৎকার এক দেশ! স্বপন-বুড়ো বলল, ‘এই হলো নিদ্ মহল। এই মহলের রাজার আমি। আজকের দিনের জন্য এই মহলের তুমি সব। এক দিনের জন্য এই মহল তোমার। এখানে সব পাওয়া যায়। এজন্য এই দেশের নাম ‘সব পেয়েছির দেশে।’ স্বপন-বড়ো মন্ত্র পড়ল আর ওমনি আমার মাথায় রানির মুকুট আর গায়ে জমকালো রং বাহারি পোশাক হয়ে গেল। এখন আমি নিদ্ মহলের রানি। কী মজা! কী মজা! স্বপন-বুড়ো বলল, ‘কী খাবে হুকুম করো?’ ‘চকলেট খাব।’ আমি বললাম।

ইমা এ যে চকলেটের পাহাড়। চকলেটের পাহাড় থেকে চকলেট গলে গলে পড়ছে। আমি ইচ্ছা মতো চকলেট খেলাম। একটু সামনে যেতেই দেখি মেঘের ঝর্ণা! মেঘের পাহাড় থেকে ঝর্ণা পড়ছে। ঝর্ণায় গোসল করলাম। কত্ত মজা! স্বপন-বুড়ো রসিক মানুষ। কত্ত মজার মজার গল্প শুনাল। আমার যা ইচ্ছা তা বলতেই হাজির হয়ে যাচ্ছে। ‘সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। মা আমাকে ছাদ বাগানে না পেলে কাঁদবে খুব। আমাকে রেখে এস এখনই।’ স্বপন-বুড়োকে বললাম। স্বপন-বুড়োর সঙ্গে সব পেয়েছির দেশ থেকে ফিরে এলাম আমাদের ছাদ বাগানে। ‘ধন্যবাদ স্বপন-বুড়ো।’ আমি বললাম। ‘তোমাকে পেয়ে অনেক আনন্দ করেছি। অনেক খেলা করেছি। এজন্য তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।’ স্বপন-বুড়ো বলল। ‘আবার কবে আসবে তুমি স্বপন-বুড়ো?’ “তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না মিরা। তোমার মতো অন্য কাউকে খুঁজে সব পেয়েছির দেশে নিয়ে যেতে হবে। যারা তোমার মতো আব্বু-আম্মুর কথা শুনে। স্কুলে যায়। লেখাপড়া করে। বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তারাই এক দিন আমার সঙ্গে ‘সব পেয়েছির দেশে’ যেতে পারবে। এটাই আমার কাজ। আসি বন্ধু।”

স্বপন-বুড়ো কথা বলতে বলতে কখন যে চলে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। তোমরা যদি স্বপন-বুড়োর সঙ্গে ‘সব পেয়েছির দেশে’ যেতে চাও তাহলে ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে। বাবা-মায়ের কথামতো চলতে হবে। ভালো মানুষ হয়ে নিজেকে গড়তে হবে। মনে জোর আর বড় হওয়ার স্বপ্ন থাকতে হবে। তাহলে দেখবে হঠাৎ কোনো এক দিন স্বপন-বুড়ো এসে তোমায় ‘সব পেয়েছির দেশে’ নিয়ে যাবে। তখন তুমি যা চাইবে তাই পাবে। ইচ্ছাগুলো সব পূর্ণ হবে। আজ এ পর্যন্তই থাক। স্বপন-বুড়ো আমাকে যে গল্পগুলো শুনিয়ে ছিল সেগুলো অন্য এক দিন শোনাব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close