জোবায়ের জুবেল

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২১

শেয়ালপাড়া

গ্রামের নাম জঙ্গলপুর। জঙ্গলপুর হওয়ার কারণ হলো এখানে একটা জঙ্গল আছে, যেখানে বসবাস করে দুই প্রজাতির শেয়াল। এক দলের লেজ আছে আরেক দলের লেজ নেই। লোকরা এটাকে শেয়ালপাড়া বলেই ডাকে। বংশপরম্পরায় তাদের মধ্যে যুদ্ধ, হানাহানি লেগেই আছে। এই সংঘাতের শুরু প্রবীণ দুই শেয়ালের মাধ্যমে। সামান্য ব্যাপার নিয়ে মারামারির কারণে একজনের লেজ কেটে যায়, পরে তার পরিবারের সবাই লেজ কেটে ফেলে। সেই থেকে শেয়ালপাড়ায় দুটি প্রজাতি গড়ে ওঠে এবং যুদ্ধ চলতে থাকে। আজ এ পক্ষের দুজন মারা যায় তো কাল অন্য পক্ষের। কত মায়ের বুক খালি হয়, কত স্ত্রী তার স্বামী হারিয়ে বিধবা হয়; বোন হারায় তার ভাইকে কিন্তু যুদ্ধের সমাপ্তি নেই, চলতেই থাকে। মুরব্বি শেয়াল দুটো খুব চালাক, তারা কখনো মারামারিতে যায় না, শুধু অন্যদের ফুসলিয়ে ঝগড়া লাগায় আর বলে প্রাণের চেয়ে সম্মান বড়। দুদলের মধ্যেই হাহাকার স্বজনহারা আর্তনাদে। একটু উনিশ-বিশ হলেই তাদের সংঘাত শুরু হয়ে যায়। মহিলারা শুধু আড়ালে নিজেদের চোখের পানি ফেলতে থাকে কিন্তু এর শেষ কোথায়? কেউ কোনো সুরাহা খুঁজে পায় না এবং বুঝতে পারে আসলে নাটের গুরু ওই বুড়ো দুটো। সবাই গোপনে একটা মিটিং ডাকে এবং সেখানে আগে থেকেই চুক্তি করা থাকে যে শুধু কথাবার্তা হবে : কোনো মারামারি, হানাহানি হবে না। নির্দিষ্ট দিনে মিটিং বসে। দীর্ঘ আলোচনার পর সবাই বুঝতে পারে যে, এত দিন যা করেছে তা কতবড় ভুল ছিল : নিজেদের প্রজন্মকে নিজেরাই শেষ করেছে। সমাধান একটাই, ওই বুড়ো দুটোকে মেরে ফেলা। তারা চেয়েছিল তাদের বিষয়টা বোঝাবে কিন্তু এদের যতই বোঝানো হোক বুঝবে না বরং যারা অবশিষ্ট আছে তাদের পরিণতিও এ রকম করবে। মিটিং থেকেই সবাই মুরব্বি শেয়ালগুলোর ওপর হামলা করে এবং পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়। পরে তারা খুব সুখে-শান্তিতে বসবাস করে। সমাপ্তি ঘটে বংশীয় যুদ্ধের। পরিশেষে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমরা যদি নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে অন্যের ক্ষতি করতে চাই তাহলে এক দিন সেই ক্ষতিটা নিজের ওপরই ফিরে আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close