মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২১

রাক্ষস রাজা

অনেক দিন আগের কথা। হরিপুর রাজ্যের বর্তমান রাজা ছিল কেতাব আফতাব। তার রাজ্যের শাসনমালা ছিল অন্য রাজ্যের রীতিনীতি থেকে অনেকটা ভিন্ন। সেই রাজ্যের প্রজারা থাকত রাজপ্রাসাদে আর রাজা ও রানি থাকত ছোট্ট কুঁড়েঘরে। এই রাজ্যের কে রাজা আর কে প্রজা সেটা অন্য রাজ্যের মানুষ বুঝতেই পারত না।

রাজা ও প্রজাদের সঙ্গে মাঠে-ঘাটে কাজ করত। প্রজারা বারণ করলেও রাজা কেতাব আফতাব বলতেন, ‘কাজ করলে কেউ ছোট হয় না’, বরং কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকে। রাজার এমন মিষ্টি আচরণে সবাই মুগ্ধ হতো। হরিপুর রাজ্যের প্রজারা রাজা কেতাব আফতাবকে খুব শ্রদ্ধা করত।

হরিপুর রাজ্যের আরেকটা প্রথা প্রচলিত ছিল, সেটা হলো এই রাজ্যের রানির ধারা এই রাজ্যের কর্মধারা চলত। রানি যা বলত সেটা অনুযায়ী রাজা ও প্রজারা কাজ করত। হরিপুর রাজ্যের প্রতি বছর একটা সাঁতারের আয়োজন করা হয়তো। সেই সাঁতারে যে প্রথম স্থান অর্জন করত। তাকে সবাই এক বছরের জন্য এই রাজ্যের রাজা মানত। এমন প্রথা দেখে অন্য রাজ্যের রাজা ও প্রজারা বিস্মিত হয়ে যেত। সবাই বলত আজব রাজার আজব দেশ। এই আজব রাজ্যের আজব প্রথা জীবনে কখনো কেউ শোনেনি। তবে এটা ভেবে সবাই খুশি হতো যে এই রাজ্যের রাজা আর প্রজার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রতি বছর কেউ না কেউ এই রাজ্যের রাজা হওয়ার সুযোগ পেত।

এক দিন হঠাৎ করে এই রাজ্যে অশান্তির ছায়া নেমে এলো। এক দুষ্টু রাক্ষস মানুষের বেশে এসে এই সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে এই রাজ্যের রাজা হয়ে গেল। কিন্তু সে রাজা হয়ে সব রীতিনীতি নিজের মতো করে সাজাল। রাজ্যের প্রজাদের ওপর খুব অত্যাচার করত। এজন্যই কেউ ভয়ে কিছু বলার সাহস দেখাত না। রাজ্যের লোকজন বাধ্য হয়ে এই রাক্ষসের দাস হয়ে রাক্ষসের কথামতো কাজ করত। যেহেতু রাক্ষস এখন রাজ্যের রাজা। রাক্ষস রাজা হওয়ার বেশ কিছুদিন পর থেকে আবার মানুষের মতো মাংস-পোলাও খেতে লাগল। যত দিন যায় ততই রাক্ষস মানুষের সঙ্গে ওঠবস করতে শুরু করল। একসময় রাক্ষসের রাক্ষসী ভাব ধীরে ধীরে বিলোপ হয়ে যেতে লাগল, এটা সবাই লক্ষ করল। একসময় রাক্ষস সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে শুরু করল। প্রজাদের খোঁজখবরও নিত। অনাহারির মুখেও খাবার তুলে দিত।

রাক্ষস মনে মনে ভাবতে লাগল আমি তো রাক্ষস তাহলে আমি মানুষের প্রতি এত উদারতা কেন দেখাচ্ছি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে সে ক্লান্ত। রাক্ষসকে এখন সবাই মনেপ্রাণে রাজা মেনে নিতে লাগল। রাজা কেতাব আফতাবও রাক্ষসের এমন পরিবর্তন দেখে সে নিজে খুশি হয়ে রাজমুকুট পরিয়ে রাক্ষসকে রাজা স্বীকৃতি দিল। এক দিন রাক্ষসের খুঁজে তার সঙ্গী উদ্ভর রাক্ষস এলো। সে দেখে তার সঙ্গী কর্কট রাক্ষস মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করছে। উদ্ভর রাক্ষস কর্কট রাক্ষসকে ডেকে বলে, কী রে কোন আজব দেশে আসলাম। যেখানে রাক্ষসের সামনে মানুষ আসতে ভয় পায়, সেখানে তোকে দেখেও ভয় পায় না, ব্যাপার কী?

কর্কট রাক্ষস উদ্ভর রাক্ষসকে দেখে বলে, কী রে এখানেও চলে এলি? সে বলে, আমি আসতে চাইনি তোর মা আমাকে তোর খুঁজে পাঠিয়েছে। কর্কট রাক্ষস বলে, ‘এসে ভালোই করেছিস আয় আমার রাজ্যে! উদ্ভর রাক্ষস বলে, ‘তোর রাজ্য মানে? তোর রাজ্য তো মোঘল রাজ্যে’। কর্কট বলে, ‘এটাও আমার রাজ্য। উদ্ভর বলে, কীভাবে কী হয়েছে বলো তো কর্কট?’ কর্কট রাক্ষস তার বন্ধু উদ্ভর রাক্ষসের কাছে সব খুলে বলল। কর্কট রাক্ষস বলে, দেখ না বন্ধু আমি জানি কেমন পাল্টে গিয়েছি। আমি মানুষদের ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। তাদের কথোপকথন শুনে রাজ্যের রাজ প-িত বলল, ‘এই পরিবর্তনের কারণ সঙ্গ। তুমি যদি অসৎসঙ্গের সঙ্গে চলাফেরা করো, তাহলে অসৎকাজের দিকে তুমি বেশি মনোযোগী হবে। আর সৎসঙ্গের সঙ্গে চলাফেরা করলে সৎকাজের দিকে তোমাকে বেশি আকর্ষণ করবে। তুমি ভালো মানুষের সঙ্গে থাকতে থাকতে মানুষের প্রভাব তোমার ওপর পড়েছে, তাই তুমি বদলে গিয়েছো। কথায় আছে

সৎসঙ্গে স্বর্গবাস,

অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।

কর্কট রাক্ষস এখন মানুষের সঙ্গেই থাকতে চায় বলে রাজ প-িতকে জানিয়েছে। রাজ প-িত খুশি হয়ে কর্কট রাক্ষসের নাম পরিবর্তন করে ‘আলাদীন’ রাখল। কর্কট রাক্ষস আলাদীন নামে সবার কাছে পরিচিত লাভ করল এবং রাজ্যের সবাই কর্কট নামের আলাদীনকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close