reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ অক্টোবর, ২০২০

বুলবুলি হবে পাখির সই

মোস্তাফিজুল হক

ছোট্ট মেয়ে বুলবুলি। একেবারে বুলবুলি পাখির মতোই মাথায় চুলের ঝুঁটি বাঁধে। হলদে পাখির মতো লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট রাঙায়। তারপর সে খুব মিষ্টি সুরে গান গায়। গান গাইতে ওর খুব ভালো লাগে। বুলবুলি নামটা ওর দিদিমা রেখেছেন। বাবা ওর গান শুনে ওকে আমাদের সুরের পাখি ফটিকজল বলে ডাকে। ওর তখন খুব আনন্দ হয়। হবেই তো, হলদে পালকের ছোট্ট পাখিটা যে ভীষণ মধুর সুরে গান গায়। ফটিকজল হলুদ রঙের পাখি। আম, আমলকী, জাম ও লিচুগাছের চিকন ডালে ঝুলে পাতার ফাঁকে পোকামাকড় ধরে খায়। থেমে থেমে অনেকটা সময় ধরে গেয়ে চলে ওরা। এতটাই মধুর ওদের গানের গলা, যে কারোর শুনলেই মন ভরে যায়। বাবা বুলবুলিকে বেশ কয়েক দিন আমলকী আর আমপাতার ফাঁকে সোনালি ফটিকজল দেখিয়েছেন। এখন সে নিজেই চেনে। পাখিটার মাথা থেকে ঘাড়ের নিচের পালকের রং উজ্জ্বল সোনালি। পিঠে কালো দাগের সাদা ডানা। মুখ ও পেটের রং উজ্জ্বল হলুদ।

বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে বুলবুলি। ওদের বাড়ির আঙিনায় আম-জাম, পেঁপে-পেয়ারা, লিচু-লটকন, আতাসহ কত ধরনের ফলের গাছ। সেসব গাছে এসে বসে কত ধরনের পাখি। সে দোয়েলকে বলে দুলু, বুলবুলিকে বুলু, হলদে পাখিকে ডাকে নয়াবউ। খুব দয়ালু মেয়ে বুলবুলি। খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করে। সে যেমন মা-বাবাকে ভালোবাসে, তেমনই ভালোবাসে তার বন্ধু ও পাখিদের।

দুলুর গান শুনতে ও খুব পছন্দ করে। যদি ভোরে ঘুম ভেঙে দুলু অর্থাৎ দোয়েলের গান না শুনতে পায়, তবে ওর মন খারাপ হয়। তখন ওর ফিঙের প্রতি রাগ হয়। মনে মনে ভাবে, ফিঙেটা আমার দুলুকে ভয় দেখিয়েছে। তবে ফিঙের রাজসিক ভাবসাব দেখে ওর অন্যদিন রাজাপাখি মনে হলেও, সেদিন দস্যুপাখি মনে হয়। অবশ্য এটিকে রাজা বা দস্যু মনে করার পেছনে ওর কিছু যুক্তিও আছে। ফিঙে যখন মাঠে লাল গাভির পিঠে বসে শিকার খোঁজে, তখন গাভিটাকে তার কাছে ফিঙের ঘোড়া মনে হয়। যখন ছাগলের পিঠে বসে, তখন মনে হয় রাজা তার রাজ দরবারের সিংহাসনে বসেছেন। কিন্তু যখন সে কাক বা চিলকে দাবড়ে বেড়ায়, তখন সে ফিঙেকে নেহায়েত দস্যু ভাবে। ছোট্ট মেয়ে বুলবুলি কখনো কখনো পাখিদের বেশ হিংসুটে মনে করে। করবেই তো, পাখিরা যে ওর কাঁধে এসে বসে না। ওর মুঠ থেকে চাল খায় না! তবে জানালার কার্নিশে চাল রাখলে তা ঠিকই খেয়ে যায়। বুলবুলি পাখির প্রতি ওর রাগটা একটু বেশি। ওর নাম আর পাখিটার নাম এক হলেও কেন জানি পাখিটা ওর মতো নয়। অথচ বুলবুলির মাথায় ওর মতোই ঝুঁটি আর তলপেটে রাঙা ঠোঁটের মতোই লালরঙের আঁচড়। বুলবুলিকে দেখে ওর কত কথা মনে হয়। যখন পাতার আড়াল থেকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়, তখন সে বলে, ‘চুপচাপ হয়ে তুই কী দেখিস রে? কার কথা বলে যাস গান গেয়ে গেয়ে?’

বুলবুলি পাখি ওদের গাছের পাকা ফল ঠোঁট দিয়ে ঠুকে ঠুকে খায় আর নষ্ট করে। কোনো বাধাই মানে না। বড্ড বেয়াড়া পাখি! খুকির প্রিয় আতাফলও ঠোঁট দিয়ে ঠুকে দেয়। এসব দেখে রাগে গজগজ করে বলে, ‘তুই তো গোটা-দুই আমও খেতে দিস না! তোর সঙ্গে আর ভাব রাখব না! আমিও বুলবুলি। আমি কি আর উড়তে পারি? আমি ঘরেই থাকি। তুই গাছের ডাল থেকে একবারও ঘরে আসিস না! স্বভাবটা বদলালে তোকে আমার সই বানাতাম!’

তারপর এক দিন ভোরে হঠাৎ করেই একটা বুলবুলি পাখি উড়ে এসে খুকুর বালিশের পাশে বসল। এরপর বলল, ‘সই, আমি এসেছি। উঠো। আর ঘুমিও না। তোমার যে অনেক পড়া বাকি পড়ে আছে। খুকু ঘুম ভেঙে অবাক হয়ে গেল। ওর মাথার কাছ থেকে ফুড়–ত করে একটা বুলবুলি পাখি উড়ে গেল!’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close