reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

রাজকন্যা ও রাক্ষস

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

একদা এক রাজ্যে বাস করত রাজা রামমোহন। তার রাজ্য সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখত রাজকন্যা মেঘমালা। এক দিন রাজকন্যা মেঘমালা বাগানে খেলতে গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ করে এক রাক্ষস উদয় হলো। মেঘমালা ও তার সাথিরা রাক্ষসকে দেখে ভয়ে যে যার মতো পালিয়ে গেল। কিন্তু এক মাত্র মেঘমালা সেখান থেকে পালিয়ে যায়নি।

-রাক্ষস মেঘমালার কাছে এসে বলে, কী গো মেয়ে তোমার নাম কী? মেঘমালা বলে তার আগে বলো তুমি কেন আমাদের রাজ্যে এসেছো? রাক্ষস বলে আমি একজন নিষ্পাপ ও নিরহংকারী রাজ্যকন্যার সন্ধানে এসেছি। সাত সাতটা রাজ্য প্রাসাদ ঘুরে তোমার সন্ধান পেলাম।

-রাজকন্যা বলে, ‘তোমার এই কুৎসিত দেহ দেখে তো সবাই ভয় পায়? কিন্তু তোমার চালচলন অন্য রাক্ষসের থেকে ভিন্ন। তুমি ব্যতীত অন্য কেউ হলে আমাকে এতক্ষণে খেয়ে ফেলত। রাক্ষস বলে, আমি জানি না আমি ভালো কি-না, তবে আমি বিনাকারণে কারো ক্ষতি করি না। আমি সব সময় মানুষের কাছাকাছি থাকতে চাই।

-কিন্তু আমার এই কুৎসিত চেহারা দেখে কেউ কাছে আসে না, সবাই ভয়ে দূরে দূরে থাকে। মেঘমালা বলে, তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমাকে ভয় পাবো না, তুমি সারাক্ষণ আমার কাছাকাছি থাকবে। রাক্ষস বলে তোমার বাবা যদি আমাকে তাড়িয়ে দেয়? রাজকন্যা মেঘমালা বলে, আমার বাবা খুব ভালো, সে আমার জন্য সবকিছু করতে পারে।

-রাজকন্যা মেঘমালা বলে, এবার আমি আসি, তুমি এই বাগান ছেড়ে কোথাও যেও না। আমি আগামীকাল আবার তোমার কাছে আসব। পরদিন সকালে রাজকন্যা মেঘমালা এসে দেখে রাক্ষসটা নেই। সে মৃদুস্বরে ডাকছে, রাক্ষস তুমি কোথায়? কোথাও রাক্ষসের সাড়া পেল না।

-রাজকন্যা মেঘমালা মন খারাপ করে পদ্মপুকুর ঘাটে বসে রইল। হঠাৎ একটা ব্যাঙ রাজকন্যাকে ডেকে বলে, তুমি আমাকে খুঁজছো? মেঘমালা বলে, আমি রাক্ষসকে খুঁজছি। তুমি কোথাও ওকে দেখেছো? ব্যাঙ বলে আমিই সেই রাক্ষস। আমি ছয় মাস রাক্ষস রূপে আর ছয় মাস ব্যাঙ হয়ে থাকি। গতকাল আমার রাক্ষস রূপের শেষ সময় ছিল।

-মেঘমালা বিস্মিত হয়ে বলে, কেন তোমার সঙ্গে এমন হচ্ছে? তুমি আমাকে সব খুলে বলো। ব্যাঙ বলে, সময় হলে তুমি সব জানতে পারবে। রাজকন্যা মেঘমালা ব্যাঙটা কোলে নিয়ে রাজপ্রাসাদে চলো গেল। তারপর রাজকন্যা ব্যাঙটিকে পায়েসের স্যুপ খেতে দিল। দুজন বিকালবেলা বাগানে খেলা করে সন্ধ্যায় রাজপ্রাসাদে চলো এলো।

-দুজন রাতে একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল, সকালে নাশতার টেবিলে ব্যাঙটিকে নিয়ে গেল নাশতা করানোর জন্য। রাজকন্যার হাতে ব্যাঙ দেখে রাজা রামমোহন খেপে গিয়ে ব্যাঙকে ছুড়ে ফেল দিল। মেঘমালা দৌড় গিয়ে ব্যাঙকে হাতে নিয়ে দেখে সে মরে গেছে। রাজকন্যা মেঘমালা কাঁদতে লাগল। যেই রাজকন্যার চোখের পানি ব্যাঙের গায়ে পড়েছে, তখন এক অলৌকিক শক্তিতে ব্যাঙটি এক রাজপুত্রের রূপ ধারণা করল।

-এমন দৃশ্য দেখে সবাই অবাক! রাজপুত্র মেঘমালাকে বলল, তুমি জানতে চেয়েছিলে না কীভাবে আমার এই অবস্থা হয়েছিল। তাহলে শোনোÑ আমি এক দিন শিকারে গিয়েছিলাম। তখন এক বাঘকে শিকার করতে গিয়ে এক ঋষির গায়ে তীর বিঁধিয়ে দিয়েছিলাম। ওই ঋষির অভিশাপে আমি এত দিন রাক্ষস আর ব্যাঙ হয়ে অভিশাপের জীবন কাটাচ্ছিলাম।

-তখন ওই ঋষি আমায় বলেছিল, আমাকে ব্যাঙ জেনেও যদি কোনো রাজকন্যা আমার মৃত্যুতে তার চোখের পানি আমার অঙ্গে ঝরায়, তাহলেই আমি আগের রূপ ফিরে পাব। আজ তুমি আমাকে সাপমুক্ত করলে।

-রাজা রামমোহন রাজপুত্রকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছিল। তাই সে রাজপুত্রের সঙ্গে মেঘমালার বিয়ে দিয়ে দেয়। তারপর থেকে তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close