হৃদয় তালুকদার
সুগন্ধি ভালোবেসে সফল উদ্যোক্তা কৃত্তিকা
কাজের সঙ্গে ভালোবাসার যোগসূত্র না থাকলে নাকি সেই কাজে সফল হওয়া যায় না! সফলতার পথে বাধা আসে কিন্তু কাজের সঙ্গে ভালোবাসার যোগসূত্র থাকলে সেই কাজ এগিয়ে যায়, সফল হয়- এমনটাই মনে করেন উদ্যোক্তা কৃত্তিকা হালদার
কৃত্তিকার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনায়। পড়াশোনা করেছেন রসায়ন বিভাগে। কিন্তু ভালোবাসতেন সুগন্ধি। নানা ধরনের পারফিউম সংগ্রহ করা তার শখ। যাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন সেই বিপ্লবও সুগন্ধি ভালোবাসেন। তার সংগ্রহে আছে নানা ব্র্যান্ডের সুগন্ধি আর সুগন্ধি অয়েল।
কৃত্তিকা জানতে পারেন, পারফিউম বিষয়ে বিপ্লবে আগ্রহ আর জানাশোনাও আছে বিস্তর। শুধু পারফিউম সংগ্রহের জন্য বিপ্লবের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ইম্পোর্টারদের সঙ্গে। ইম্পোর্টাররা সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, তুর্কি, স্পেনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পারফিউম স্প্রে এবং অয়েল ইম্পোর্ট করেন। কৃত্তিকা ভাবতে লাগলেন পারফিউমের ব্যবসা করবেন। তখন খুলনায় পারফিউম অয়েল বা স্প্রে উই অনলাইনে বিক্রি শুরু করেননি। সে ক্ষেত্রে তার মনে হতে লাগল, সে যদি খুলনায় পারফিউম অয়েল অ্যান্ড স্প্রে সহজলভ্য করতে পারে- তাহলে সেটা খুলনার মানুষদের উপকারে আসবে এবং নিজেও কাজ করতে পারবে তার প্রিয় জিনিস নিয়ে।
এরপর ভাবতে লাগলেন, কীভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবেন তার প্রিয় পারফিউম। কারণ পারফিউমের কনটেইনার কাচের হয়, যা ডেলিভারি করাটা বেশ কষ্টসাধ্য।
কৃত্তিকা বলেন, ‘খুলনা থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে ডেলিভারি দিতে বেশ খানিকটা সময় প্রয়োজন। পারফিউম স্প্রে এবং অয়েলের কনটেইনারগুলো কাচের হওয়ায় প্যাকেজিং নিয়েও একটু যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। সেভাবেই আমরা আমাদের প্যাকেজিং ও প্রিমিয়ামভাবে ডিজাইন করি, যাতে করে কোনো পণ্য নষ্ট না হয়।’
এভাবে অনেক দিনের বিভিন্ন প্ল্যান প্রিপারেশন স্টাডির পর কৃত্তিকা ও বিল্পব যেসব পারফিউম অয়েল এবং স্প্রে ব্যবহার করেছেন- সেগুলো থেকে বেস্ট কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে তারা ছেলে এবং মেয়েদের জন্য ১০টি করে মোট ২০টি ফ্রাগ্রান্স স্টকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
কৃত্তিকা জানান, বর্তমানে প্রায় ৫০ রকমের সুগন্ধি আছে এসেন্স ফ্রাগান্সে। এখানে বিভিন্ন ফেমাস ব্র্যান্ডের এ গ্রেড রেপ্লিকা প্রোডাক্টসগুলো সেল করা হয়। কারণ ইচ্ছা থাকলেও সবাই অরজিনাল এফোর্ড করতে পারে না এবং রেপ্লিকা হলেও এগুলোয় কোনো ক্ষতিকর ইনগ্রিডিয়েন্স নেই। যেকোনো প্রোডাক্ট সেলের জন্য স্টক করার আগে এবং পরে দীর্ঘদিন অবজার্ভে রাখা হয় যে প্রোডাক্টটা কতখানি ইউজার ফ্রেন্ডলি। ভালো মানের প্রোডাক্ট দেওয়ার ফলে দেশের সর্বত্র পরিচিত ও গ্রাহক জনপ্রিয়তা পেয়েছে
এসেন্স ফ্রাগান্স।
খুলনাভিত্তিক অনলাইন পেজ হলেও তাদের অধিকাংশ কাস্টমারই এখন খুলনার বাইরের। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অনেকেই রেগুলার কাস্টমার।
কৃত্তিকা বলেন, ‘আমার সব থেকে আনন্দের মুহূর্ত ওটাই যখন একবার নেওয়ার পর ক্লায়েন্টরা অনলাইনের হাজার হাজার পেজের মধ্য থেকে খুঁজে আমাদের থেকে সেকেন্ডটাইম পারচেজ করে। এটা আমার জন্য আনন্দের এবং সম্মানেরও। তখন আসলেই মনে হয়, সংসারের হ্যাসেল সামলে Esessens Fragrance-কে সময় দেওয়া একদম ভুল ছিল না।’
নিজের ব্যবসার অগ্রগতির জন্য কৃত্তিকা এই বিষয়ে নানা ধরনের কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন যেন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায়।
তিনি আরো বলেন, ‘বিজনেস করতে করতে প্রতিনিয়ত শিখছি। নিজেদের পণ্য এবং সেবা ভালো করার জন্য অবজারভেশন চলমান রয়েছে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়াই হওয়া উচিত, নয়তো পিছিয়ে যাব। এর মধ্যে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করেছি। পারফিউম মেকিং নিয়ে জ্ঞান বাড়াচ্ছি। কীভাবে নিজেদের ব্যবসার পরিচিতি বাড়ানো যায়, পণ্যের প্রসার ঘটানো যায়, সেসব নিয়ে ভাবছি। নিজেদের স্বনির্ভরতার পাশাপাশি কীভাবে অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তার সবকিছুই রয়েছে পরিকল্পনায়।’
এখন পর্যন্ত Esessens Fragrance-এর সব কাজ তারা দুজন মিলে করে থাকেন।
স্বামীর প্রশংসা করে কৃত্তিকা বলেন, ‘ও না থাকলে আসলে কিছুই হতো না। এমন কি এই বিষয়ে আমি আগ্রহী শুনে বিপ্লবই সবচেয়ে বেশি ইন্সপায়ার করেছে এবং যখন যা জরুরি প্রয়োজন হয়েছে, সব হেল্প করেছে। এ ছাড়া শুরু থেকে পরিচিত সবাই ব্যবসায়ের প্রচার-প্রসার বাড়াতে বিভিন্নভাবে হেল্প করেছে। আমার নিজেকে সত্যি সৌভাগ্যবতী মনে হয়।’
নিজের গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এসেন্স ফ্রাগ্রান্স বছরখানেকের মধ্যে বেশ ভালো পরিচিতি পেয়েছে, যেটার জন্য আমি সত্যিই ভীষণ কৃতজ্ঞ আমার সম্মানিত ক্লায়েন্টদের প্রতি, যারা নিজেরা আমাদের পণ্য ব্যবহার করেছেন এবং রিভিউয়ের মাধ্যমে অন্যদের ও আগ্রহী করে তুলেছেন। অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশেই আমাদের ক্রেতা রয়েছে এখন। আমার ব্যবসাটা আমাকে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সঙ্গে মানসিক আনন্দ দেয়। কারণ এখানে আমি আমার পছন্দের বিষয়গুলো নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারছি।’
অনলাইন ব্যবসার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো কিছু শুরু করাটা যেমন চ্যালেঞ্জিং, সেটা চালু রাখা আরো বড় চ্যালেঞ্জ। আমি চাই Esessens Fragrance একটি ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করতে। আশা করি একসময় আমরা নিজেদের পণ্য প্রোডাকশন করতে পারব এবং আরো পণ্য আমাদের লিস্টে যোগ করতে পারব। মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড় হয়, এখন Esessens Fragrance নিয়ে আমার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। ধীরে ধীরে আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই আমার ক্লায়েন্টদের আস্থা ও ভালোবাসায়।
কৃত্তিকা জানান, প্রতি মাসেই ভালোই বিক্রি হয়। সব ধরনের খরচ বাদ দিয়ে মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা লাভ থাকে। আয় দিন দিন বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
"