reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হাঁস পালনে স্বাবলম্বী কুড়িগ্রামের ময়না

জেসমিন নাহারের বাড়ি উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের রোশন শিমুলবাড়ী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক সামসুল হকের স্ত্রী। সঙ্গে ২০০২ সালে জেসমিন নাহার ময়না ও সামসুল হকের বিয়ে হয়। জেসমিন নাহার এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি তিন কন্যাসন্তানের জননী। তার বাবার বাড়ি রংপুর শহরে হওয়ায় জেসমিন বিয়ের আগেই ২০০১ সালে পোলটি, ডেইরি, মৎস্য রংপুর বিসিই ট্রেইনিং সেন্টার ও রংপুর যুব উন্নয়ন থেকে বেইজিং হাঁস পালনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ ছাড়া করোনাকালে তিনি অনলাইনে এক নারীর হাঁস পালন দেখেন। স্বামীর সংসারে অভাব না থাকলেও তিনি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের যথাযথ প্রয়োগের সুযোগ কাজে লাগান।

স্বামীর দেওয়া টাকা ও নিজের জমানো টাকা দিয়েই ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি বিভিন্ন প্রজাতির ৪২০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়েই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনের যাত্রা শুরু করেন জেসমিন। ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যে এক দিনের ৪২০টি হাঁসের বাচ্চা ও খামার তৈরিতে ঘর নির্মাণ, মাটি কাটাসহ প্রায় এক লাখ টাকা। ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করেই হাঁসের খামারের যাত্রা শুরু করেন তিনি। এর আগে বাড়িতে কাপড়ের ব্যবসা করে সাফল্যের মুখ দেখতে না পারলেও করোনাকালে হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করেছেন।

বর্তমানে জেসমিন নাহার ময়নার খামারে ১০টি রাজ হাঁস, ১৫টি চীনা হাঁস, ১০টি বেইজিং হাঁস, ১৫টি রুপালি হাঁস, ১০০টি নতুন জাতের কাকলি হাঁস রয়েছে। এই হাঁসগুলো প্রতিনিয়ত ডিম দিচ্ছে। এ ছাড়া তিনি হাঁস বিক্রির টাকায় ৪০টি কবুতর ও ৫০০টি লেয়ার মুরগির বাচ্চা নতুন করে পালন করছেন। এক মাসের মধ্যে লেয়ার মুরগির ডিম দেওয়াও শুরু করবে। স্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তার স্বামী সামসুল হক স্ত্রীর কাজে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। মাঝেমধ্যে স্বামী সামসুল হকও হাঁসের খামার দেখাশোনাও করেন। এ ছাড়া দুই মেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের কাজে সহযোগিতা করেন। খামারের শুরু থেকে ৫ হাজার টাকা বেতনে একজন নারীশ্রমিক নিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সফল নারী উদ্যোক্তা জেসমিন নাহার ময়না।

নারীশ্রমিক আনোয়ারা বেগম জানান, ময়না ভাবির খামারে ১৩ থেকে ১৪ মাস কাজ করছি। হাঁস-মুরগি, লেয়ার ও কবুতর পালন-পালনের জন্য প্রতি মাসে আমাকে ৫ হাজার টাকা বেতন দেন এবং পাশাপাশি হাঁস-মুরগি লালন-পালন করাও শিখছি। ভবিষ্যতে যাতে আমিও ময়না ভাবির মতো খামার দিতে পারি সেই ইচ্ছা আছে।

জেসমিন নাহার ময়নার স্বামী সামসুল হক জানান, জেসমিন খুবই মেধাবী একজন নারী। তার ইচ্ছা সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া। আমার সংসারে অভাব নেই। আল্লাহর রহমতে ১৪ বিঘা জমি আছে। ভালোই চলছি। তবে স্ত্রীর ইচ্ছা সে নিজে কিছু করবে। আমি তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছি এবং তাকে টাকাও দিয়েছি। প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে আলোর মুখ দেখতে না পারলেও হাঁস পালনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। সে সংসার দেখাশোনার পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালনে কঠোর পরিশ্রম করছেন- এটা আমার কাছে খুবই আনন্দের। আমি তার সাফল্য কামনা করছি।

নারী উদ্যোক্তা জেসমিন নাহার ময়না জানান, আমার ইচ্ছা ছিল নিজের পায়ে দাঁড়াব। প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু কাপড়ের ব্যবসায় সফল হতে না পারলেও হাঁস পালনে ভালো লাগায় সংসারের ঘানি টেনেও স্বামী ও ভাইয়ের সহযোগিতায় ৪২০টি হাঁস দিয়েই খামারের যাত্রা শুরু করি। হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করেই ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করেছি। আয়ের টাকায় অন্যান্য প্রজেক্ট যেমন গরু-ছাগল, মৎস্য, পোলট্রি ও কবুতর বাড়াচ্ছি। এখন আমার আত্মনির্ভরশীল হতে হবে এবং আমাকে দেখে গ্রামের আরো আট-দশজন নারী আত্মকর্মস্থানের সৃষ্টি করবেন- এটাই আমি চাচ্ছি। কোনো ব্যাংক অথবা সংস্থা থেকে বড় ধরনের ঋণ সহায়তা পাওয়া গেলে ১০-২০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে- এটা আমার চাওয়া।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ময়না একজন সফল নারী খামারি। করোনাকালে তিনি নিজ বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। তার খামারে ৬ প্রজাতির হাঁস রয়েছে। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তাও। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ভেকসিন, ওষুধসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এ পর্যন্ত ২ থেকে ৩ লাখ টাকার হাঁস ও ডিম বিক্রি করেছেন। তার সফলতা দেখে এ উপজেলার অন্য নারী-পুরুষ অনুপ্রোণিত হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন বলে আমার বিশ্বাস।

তথ্যসূত্র : সংগৃহীত

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close