reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ মার্চ, ২০২৩

তারুণ্যের ভাবনায় নারী দিবস

বর্তমান সমাজে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে নারীর অবদান ঈর্ষণীয়। তবু নারীরা আজ ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়, দিন দিন বেড়েই চলেছে নারীর প্রতি সহিংসতা। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের ওপর হওয়া বৈষম্য, নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাদের জাগ্রত করাই নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের প্রশংসা, ভালোবাসা প্রকাশ করে এই দিনটি পালন করা হয়। নারী দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

নারীর উন্নয়নেই মিলবে মুক্তি

সমাজের উন্নয়নে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। তবু সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীকে হতে হচ্ছে হেয়প্রতিপন্ন, নির্যাতনের শিকার, ধর্ষণের শিকার। সমাজে নারীর প্রতি সব বৈষম্য-অসম্মান বোধ দূর করতে প্রয়োজন নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন পুরুষের হাত ধরে নয়, প্রকৃত ক্ষমতা নিজেই গড়তে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। নারীর কর্মসংস্থান ও সামাজিক অবস্থান ঠিক করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি দেশের-সমাজের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। নারীর পূর্ণাঙ্গ মর্যাদায় জাতি-ধর্মণ্ডবর্ণ-পেশা-শ্রেণি-নির্বিশেষে সবার গণতান্ত্রিক সমণ্ডঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সাফা আক্তার নোলক

শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ

নারীর প্রতিটি মুহূর্ত হোক নিরাপদ

স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরও নারীরা আজ নিরাপদ নন। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই দেখা যায় ধর্ষণ, খুন, নারীর প্রতি সহিংসতা কতটা বেড়ে গেছে। প্রায়ই শোনা যায় রাস্তাঘাটে এমনকি ক্যাম্পাসেও উত্ত্যক্ত হচ্ছেন নারীরা। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই বখাটে ছেলেরা নারীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এসব কুকর্ম করে যাচ্ছে। সবকিছু দেখেও আমাদের চুপ করে থাকাটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের মনুষ্যত্ব ও বিবেকের জোরে নারীর প্রতি এমন অন্যায়কে প্রতিহত করতে হবে। কঠোর আইন প্রণয়ন করে প্রতিটি মুহূর্ত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যেন নারীরা পান চলার পূর্ণ স্বাধীনতা। নারীকে নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, সমাজ, প্রশাসন ও জনসমাজ সবাইকে একযোগে ভূমিকা পালন করতে হবে।

মাহরুমা আক্তার শিফা

শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ

বীরত্বের সঙ্গে হোক নারীর পথচলা

পুরুষতন্ত্র নারীকে যুগ যুগ ধরে যন্ত্রের মতো ব্যবহার করেছে। নারীর চিন্তা, সুখণ্ডদুঃখ বা স্বাধীনতা নিয়ে ভাবেনি কেউ। তবু পুরুষতান্ত্রিক বা সামাজিক কোনো নিয়ম, দুঃশাসন, অবিচার দাবিয়ে রাখতে পারেনি তাদের। নারী বসন্তের কচি কিশলয় হয়ে শীতের রুক্ষতাকে জয় করতে শুরু করেছে, ফুল হয়ে ফুটছে বিস্তীর্ণ বিরাণ ভূমিতে। যে সাহিত্য-সংস্কৃতি একসময় শেক্সপিয়ার, জন কিটস কিংবা রবীন্দ্রনাথেই সীমাবদ্ধ ছিল সেখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ভার্জিনিয়া উলফ, টনি মরিসন, বেগম রোকেয়ার মতো নারীরা। নারী শক্তিতে এগিয়ে চলছে বিশ্ব। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নারীরা এখন দর্পের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। নারীদের সুশাসনে ভেঙে খান-খান হয়ে যাচ্ছে পুরুষতন্ত্রের দুঃশাসন। নারী অধিকার আদায় একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জয় তখনই সম্ভব যখন নারীরা নিজেদের পরিপূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবে।

শতাব্দী রায়

শক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

নারীর সব অধিকার পূর্ণতা পাক

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা আজ পৌঁছে গেছেন বিমানের ককপিট থেকে পর্বতশৃঙ্গে। দশভুজা নারী ঘরে-বাইরে নিজেকে আলোকিত করছেন প্রজ্ঞা আর মেধায়। নারী স্বাধীনতার মূল বিষয়গুলো শুধু গ্রন্থেই বন্দি হয়ে থাকার জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার প্রতিফলন জরুরি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমরা অনেকেই উঁচু গলায় নারী স্বাধীনতার কথা বলে থাকি, কিন্তু আমরা আসলে নারী স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বুঝি না। সমাজকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, নারীর প্রথম পরিচয় হচ্ছে সে মানুষ। তাই নারী জ্ঞান অর্জন, আত্মসংযম, শ্রমনিষ্ঠা, সেবা, দৃঢ়তা, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে মানসিক দাসত্বের কঠিন শৃঙ্খল ভেঙে এগিয়ে চলতে হবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নির্যাতিত সবার আত্মসম্মানবোধের চেতনা জাগ্রত হোক, মানুষ হিসেবে সবাই সম্মানিত হোক, সবার অধিকার পূর্ণতা পাক।

মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক

শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

পূর্ণতা পাক নারীর অধিকার

নারী স্বাধীনতার মূল বিষয়গুলো শুধু গ্রন্থেই বন্দি হয়ে থাকার জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার প্রতিফলন জরুরি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমরা গলা উঁচু করে নির্দ্বিধায় নারী স্বাধীনতার কথা বলে থাকি, কিন্তু আমরা আসলে নারী স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বুঝি না। নারী পরাধীনহেতু সমাজ ও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে দায়ী করা হলেও নিজেদের দুর্বলতাও কম দায়ী নয়। নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তাকে অবশ্যই সংযম হতে হবে। আমাদের সমাজকেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। নারীকে নারীর মতো করেই বাঁচতে দেওয়া উচিত। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, নারীর প্রথম পরিচয় হচ্ছে সে মানুষ। তাই নারী জ্ঞান অর্জন, আত্মসংযম, শ্রমনিষ্ঠা, সেবা, দৃঢ়তা, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে মানসিক দাসত্বের কঠিন শৃঙ্খল ভেঙে এগিয়ে চলতে হবে।

ইকরা ফুরকান ড্যাফোডিল

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পাক নারীরা

নারীরা স্বাধীন দেশের পরাধীন নাগরিক। সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি খুললেই দেখা যায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো হৃদয়বিদারক সব সংবাদ। যে নারী তাদের জন্ম দেয় সেই নারী জাতিকেই অসম্মান করতে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। উল্টো আরো নারীর চলাফেরা, পোশাকে তারা সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তুলে ধরে। আফসোস যে নারী জাতি এত কষ্ট করে জন্ম দেন একটি ফুটফুটে বাচ্চা, আলো দেখান এই সুন্দর পৃথিবীর আজ তারাই নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে প্রতি মুহূর্তে। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি বাসায়ও নিরাপদ নন নারীরা। আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র আছে অথচ নারীর স্বাধীনতা নেই, শুধু নামেই পালিত হয় নারী দিবস। কী হবে নারী দিবস পালন করে যদি নারীর স্বাধীনতাই না থাকে। নারীদের সব ক্ষেত্রে কাজ করার সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। সবার উচিত শুধু নারী দিবসে নারীদের সম্মান না করে নারীরা যেন স্বাধীনভাবে স্বাধীন দেশের সুনাগরিক হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন সে ব্যবস্থা করা।

পাপড়ি রানী

শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

সর্বস্তরে নারীরা প্রাধান্য পাক

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেই যেখানে নারীদের পদযাত্রায় বারবার হোঁচট খেতে হয়, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের নারী হিসেবে বাঙালি নারীদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নারী উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। এসব দূর করতে হবে। কারণ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা আজ শুধু রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নেই, নারীরা পৌঁছে গেছেন বিমানের ককপিট থেকে পর্বতশৃঙ্গে। বর্তমানে সবক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর পদচারণা। তাই নারীর নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা, নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারী-পুরুষ উভয়ের অন্তর্ভুক্তিতেই উন্নয়নের দেখা পাওয়া সম্ভব। এভাবেই নারীরা এগিয়ে যাবেন, তাদের ভবিষ্যৎ হবে কণ্টকমুক্ত।

শ্রেয়সী সিকদার

শিক্ষার্থী

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

নারীদের সম্মানে সবাই হোক সোচ্চার

নারীর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা প্রদর্শন, ও নারীর অধিকার রক্ষায় প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ৮ মার্চ নারী দিবস পালন করা হয়। গত দশকগুলোর তুলনায় নারীর অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে সমাজে নারীরা আজও নানাভাবে অবহেলিত। নারীরা শিক্ষা ও আত্মউন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্ত অনেক নারীর নির্যাতন, অবহেলা সবার অগোচরে। শহর অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলেও ধর্ষণের ঘটনা আমরা শুনতে পাই। শহরে এ বিষয়টি আইনের আশ্রয় পেলেও গ্রামাঞ্চলে নানাভাবে বিষয়টিকে চাপা দিয়ে রাখা হয়। আশপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শুনলে গা শিউরে ওঠে। এসব কিছুর পরও বিশ্বে নারীরা আজ থেমে নেই, লড়াই করেই যাচ্ছেন নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। তাই এই নারী দিবসে নারীর অধিকার, সম্মান রক্ষায় সবাই হোক সোচ্চার।

আকিনা ইসলাম

শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close