আকতারুজ্জামান

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

ঘরে ঘরে কুমড়োবড়ি তৈরির ধুম

মেহেরপুরে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা

মেহেরপুরে ঘরে ঘরে কুমড়োবড়ি তৈরির ধুম, স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা। মেহেরপুরে প্রতিটি পরিবারে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা। চলছে কুমড়োবড়ি তৈরির ধুম। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছেন অনেকেই। আবার অনেকে কুমড়োবড়ি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, মাষকলাইয়ের ডাল করার পর তা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর সেই ডাল ভালো করে পরিষ্কার করে শিলপাটায় বেটে কিংবা মেশিনে ভাঙিয়ে তার সঙ্গে চাল কুমড়োর পুর মিশিয়ে সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়। গ্রামীণ ৮০ ভাগ নারী পালা করে বড়ি দেওয়ার কাজ করে থাকেন। মেহেরপুরের পিরোজপুর গ্রামের গৃহবধূ বুলবুলি খাতুন বলেন, আমার স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তিনি কুমড়োর বড়ি খুব পছন্দ করেন। তাকে নিয়মিত কুমড়োবড়ি পাঠাতে হয়। বিদেশিরাও কুমড়োবড়ির তরকারি খেয়ে সুনাম করে। অনেকেই আবার কিনে নিতে টাকা পাঠান। আমি গ্রাম থেকে কিনে বিদেশে পাঠিয়ে দেই।

ভাটপাড়া গ্রামের ছবি খাতুন বলেন, আমার স্বামী পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। সংসার চালাতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম। পরে কুমড়োবড়ি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। ছেলেমেয়েকেও লেখাপড়া করাচ্ছি। চালকুমড়ো পাওয়া না গেলে পেঁপে, লাউ ছাড়াও বিভিন্ন সবজি ও কলাই দিয়ে বড়ি তৈরি করি। গাংনীর শিমুলতলা গ্রামের জরিনা বেগম বলেন, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চালকুমড়ো ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহি করে রাখতে হয়। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। পরে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হয়। এরপর ডালের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হবে। খুব ভালো করে মেশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়। তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে। বড়ি তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। হেমায়েতপুর বাজারের ব্যবসায়ী আনারুল জানান, মুদি ব্যবসার পাশাপাশি শীত এলেই কুমড়োর বড়ি বিক্রি করি। শীতকালে বড়ি তৈরির জন্য অনেকেই চাল কুমড়োর আবাদ করেন। গেল বছর এক ডজন বড়ি ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা। বড়ি তৈরির উপকরণ ও শ্রমমূল্য বৃদ্ধির কারণে বড়ির দামও বেড়েছে। গাংনী মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রমজান আলী বলেন, গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের মধ্যে কুমড়োর বড়ি অন্যতম। শীতকালে কুমড়োর বড়ি তৈরি না করলেই যেন নয়। এটি যেমন মুখরোচক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। নারীরা পালা করে বড়ি তৈরি করে থাকে। এতে প্রতিবেশীদের মধ্যে যেমন সম্পর্ক দৃঢ় হয়, তেমনি বড়ি উপহার দিয়েও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট থাকে।

মেহেরপুর জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নাসিমা খাতুন বলেন, নারীরা বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আয় করছেন মোটা অঙ্কের টাকা। বিশেষ করে শীত এলেই মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়িতে কুমড়োবড়ি তৈরির উৎসব চলে। একসময় পরিবারের প্রয়োজনে কুমড়োবড়ি তৈরি করা হলেও এখন বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। জেলায় বেশ কয়েক হাজার পরিবার সারা বছর কুমড়ো বড়ি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে। আবার এখন নারীরা অনলাইনের মাধ্যমে শহরে কুমড়োবড়ির অর্ডারের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close