reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

নারী নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে হাফসা

হাফসা তাসনিম। যার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দুটোই খুলনাতে। তার পড়াশোনা শুরু হয় খুলনার একটি সরকারি স্কুলে। পরে খুলনার এমএম সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। তবে এত পরিচয়ের মধ্যে সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন তিনি। সামাজিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং সেসব কাজে তিনি তার নেতৃত্বের গুণাবলি চর্চা করে চলেছেন। তার কাছে নেতৃত্বের কোনো নারী বা পুরুষ রূপ নেই। তার কাছে নেতৃত্ব মানে শুধুই কিছু গুণাবলির চর্চা। সেই চর্চার সূত্র ধরেই বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। গ্রিন ভয়েস বাকৃবি শাখার সভাপতি এবং টিম উৎসবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন হাফসা। নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন তানিউল করিম জীম

আপনার কাছে নেতৃত্ব মানে কী?

লিঙ্গ দিয়ে আলাদা করার সুযোগ নেই নেতৃত্বকে। নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার কোনোই সুযোগ নেই। নেতৃত্ব হলো মূলত কিছু গুণাবলির চর্চা যা সেই ব্যক্তিকে করে তোলে নেতৃত্বদানের অধিকারী। আমাদের সমাজের তথাকথিত পন্ডিতরা বরাবরই নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে নারীদের সক্ষমতায় প্রশ্ন তুলে এসেছে। সমাজের এমন এই উঁচু আসন বা এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায় পাবে এক নারী! সে কি করে পারবে এই শক্ত কাজ? সামাজিক শিকলের এই প্রশ্নের বাধা উপেক্ষা করে নেতৃত্বের সাম্যতা প্রমাণ করে চলেছে এই একমুখী সমাজের মাঝে জন্ম নেওয়া হাফসা তাসনিম।

নেতৃত্বের শুরু কীভাবে?

আমার নেতৃত্বের যাত্রা শুরু হয় স্কুল জীবনে ক্লাসরুমে ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। স্কুল-কলেজ শেষ করে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলাম তখন পরিচিত হলাম গণরুমের সঙ্গে। গণরুমে একসঙ্গে থাকা, অনেকের মধ্যে সবার সমস্যায় সামনে এগিয়ে আসা, দায়িত্ব নিয়ে কোনো কাজ করা, পাশে থাকা এই বিষয়গুলো চর্চা করতে করতে আমার নেতৃত্ব আরো বিকশিত হয়। তাপসী রাবেয়া আবাসিক হলের সেই গণরুম থেকেই শুরু হয় আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নেতৃত্ব দেওয়া। যেকোনো সমস্যায় কে এগিয়ে আসবে? কে হয়ে উঠবে বিপদের মুখে ঢালস্বরূপ? এসব টানাপড়েন উপেক্ষা করে আমি নিজেই সর্বদা সামনে এগিয়ে গিয়েছি। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করা শুরু করি। বাকৃবির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রিন ভয়েস বাকৃবি শাখার সঙ্গে শুরু থেকেই কাজ করেছি ২০১৯ সাল থেকেই। এছাড়া আমি ও আমার মাত্র ১৫ জন বন্ধু মিলে গড়ে তুলি টিম উৎসব নামক আরেকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। কোনোরকম সাংগঠনিক জ্ঞান বা মাথার ওপরে কোনো উপদেষ্টা ছাড়াই গড়ে তোলা সেই সংগঠনে এখন ১১ জন শিক্ষক উপদেষ্টাসহ ৫৬ জনের সদস্যে পরিণত হয়েছে।

কী কী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

নারী ও শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাওয়া বহ্নিশিখার সঙ্গেও কাজ করেছি আমি। কাজ করেছি ইউনাইটেড ন্যাশনসের সঙ্গে ভলেন্টিয়ার হিসেবে। এছাড়াও কাজ করার সুযোগ হয়েছে ইউনিসেফের সঙ্গে। করোনাকালীন যখন সবাই ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল তখন আমার নেতৃত্বে ২০০ পরিবারে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও নারী ও শিশু অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ করেছি যেখানে মেয়েদের কারাতে, শারীরিক কসরতি ও আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করানো হয় এবং মানসিক সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। খুলনা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মোট ১৬টি জেলায় এই প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেন তিনি।

অর্জনসমূহ

তার এসব পরিশ্রমের অর্জন ও কম না। তার প্রথম অর্জন বাংলাদেশ ডিজিটাল সোশ্যাল ইনোভেশন ফোরাম (বিডিএসআইএফ) অ্যাওয়ার্ড। সারা দেশ থেকে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস ভলেন্টিয়ার (ইউএনভি) অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। সারা দেশ থেকে নির্বাচিত ১০ জনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়ে ছিলেন তিনি। টিম উৎসবের কাজের জন্য জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন হাফসা। নেতৃত্বে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই এগিয়ে আসা, বাধা পাওয়া এবং সফলতা পাওয়ার বিষয়ে হাফসা বলেন, ‘নেতৃত্ব আমার কাছে একটি শিল্পের মতো। নিজের কাজগুলো নিজে করার মাধ্যমে অন্যরকম একটি গুণাবলি বিকশিত হয় বলে আমি মনে করি। আমার কাজের সব ক্ষেত্রেই আমাকে প্রমাণ করে আসতে হয়েছে যে আমি আমার দায়িত্বের যোগ্য। গ্রিন ভয়েসের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে শুরু করেছিলাম এবং বর্তমানে গ্রিন ভয়েসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়াও টিম উৎসবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এখন সময়টাই আমাদের এগিয়ে আসার। পুরো পৃথিবী আমাদের ডাকছে। আমাদের শুধু ঘর থেকে বের হয়ে সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে। তবেই আমরা আত্মনির্ভরশীল মানুষ হয়ে বাঁচতে শিখব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close