আলফি শাহরীন

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সফল নারী উদ্যোক্তা তানিয়া

প্রতিটি নারীর সফলতার পেছনে থাকেন তিনি নিজেই। কারণ তার ইচ্ছাশক্তি এবং মনোবল তাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। তেমনি একজন সফল গৃহিণীর পরিচয়ের পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তার পরিচয় গড়ে তুলেছেন নিজের নামের পাশে।

তানিয়া তার এগিয়ে যাওয়ার সেই সুন্দর গল্পটি নিজের মুখেই জানালেন। জেনে নেওয়া যাক তার সংগ্রামের গল্প-

‘আমি তানিয়া চৌধুরী একজন গৃহিণী। বর্তমানে পড়াশোনা করছি মাস্টার্স, বাংলা সাহিত্য নিয়ে লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। পড়াশোনার পাশাপাশি আমার ছোট একটি অনলাইন বিজনেস রয়েছে। যেখানে আমি সাধারণত হোমমেড ফুড ও কেক তৈরি করে সেল করে থাকি।

নারীরা আজ আত্মনির্ভরশীল। আর সেটা প্রমাণ করার জন্যই আমার এই ছোট উদ্যোগ। শুধু একজন সফল গৃহিণী ও মা হিসেবে নয় পাশাপাশি নিজেকে দেখতে চেয়েছি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।

খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় আমার। সেইসঙ্গে খুব তাড়াতাড়িই প্রথম বেবি কনসিভ করি। অল্প বয়সেই সংসারের সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম খুব সহজেই। কিন্তু ঘর সামলানোর পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে চেয়েছিলাম সব সময়। যেহেতু ঘর আর ছোট বাচ্চা সামলানোর পাশাপাশি বাইরে গিয়ে কিছু করা আমার পক্ষে তেমন সম্ভব হচ্ছিল না তাই চিন্তা করলাম ঘরে বসেই কিছু করার।

আমি নানা রকম মজাদার রান্না করতে বেশ পছন্দ করি। এছাড়া আমার মেয়ে আনিশা কেক খেতে বেশ পছন্দ করে। তাই হরেক রকমের কেকও বানাতাম ঘরের সবার জন্য। আমার কেক খেতে সবাই খুব পছন্দ করতেন এবং প্রশংসাও করতেন। সে থেকেই মাথায় আসল আমি আমার রান্নার স্কিলকে কাজে লাগিয়ে একটি অনলাইন হোমমেড ফুড সার্ভিস খুলতে পারি। এর ফলে যারা বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পছন্দ করেন না এবং হোমমেড স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খুঁজে থাকেন তাদের জন্যও উপকারী এবং আমার জন্য বেশ সহজ ও আনন্দময়ী একটি কাজ হবে।

স্বাবলম্বী হওয়ার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে শুরু করি আমার একটু একটু করে পথচলা। Anishas Homemade Foods and Cake Shop নামক একটি অনলাইন পেজ খোলার মাধ্যমেই আমার বিজনেসের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। পেজ খোলার পর আমার রান্নার ও কেকের নানা রকম ছবি আমি শেয়ার করতে থাকি। কিছুদিন পরেই অর্ডার চলে আসতে থাকে। এত স্বল্প সময়ে এত সারা পাব আমি কখনো ভেবে উঠতে পারিনি। আমার প্রথম কাস্টমার ছিলেন আমারই প্রতিবেশী এক ভাবি।

আমার এই কাজে আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে আমার পরিবার। তারা আমাকে উৎসাহ দেয় আমার কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। বিজনেস শুরু করার আগে তাদের উৎসাহে আমি ছোট একটি কেক বানানোর ওপর কোর্সও করে থাকি। তারা আমার পাশে না থাকলে আমি সাহস পেতাম না এত দূর এগিয়ে যাওয়ার।

সবাই যেহেতু আমার পাশে ছিল তাই আলহামদুলিল্লাহ বিজনেসে আমার তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সব বেশ ভালো যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই আমি দ্বিতীয়বার কনসিভ করি। এতে একটু কষ্ট হলেও আমি থেকে থাকিনি। ছয় মাসের প্রেগনেনসি নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছিলেন সেই সময়। তাই আমাকে আর পিছিয়ে পড়তে হয়নি। সবচেয়ে বেশি পাশে ছিল আমার ননদ জলি। ও বাবুদের না দেখলে এত সুন্দরভাবে সবকিছু সামলানো অনেক কষ্টসাধ্য ছিল।

আব্বু-আম্মুর দোয়া ও আমার কাস্টমারদের সাপোর্ট, ভালোবাসায় এখন আমি স্বাবলম্বী। এখন আমি আমার অনলাইন বিজনেসের পাশাপাশি নিজেই বেকিং বিষয় নিয়ে কোর্স করিয়ে থাকি। যা আবার বিজনেসের পাশাপাশি আরো একটি নতুন উদ্যোগ। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি একজন সফল উদ্যোক্তা। এখন আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই আমার এই হোমমেড ফুড বিজনেজের সঙ্গে আমার এই নতুন উদ্যোগটিকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া। শেখার কোনো শেষ নেই, তাই শিখতে চাই আরো অনেক কিছু।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close