reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ আগস্ট, ২০২২

শিক্ষার্থীদের আয়ের গল্প

তারা সবাই কলেই পড়াশোনা করে। পড়াশোনর গন্ডি পেরোতে বাকি এখনো অনেক সময়। অথচ এরই মধ্যে তারা খুঁজে নিয়েছে আয়ের পথ। ছবি আঁকা, ক্যালিগ্রাফিসহ নানা রকম সৃজনশীল কাজ করছে তারা। এসবে তাদের আয় হচ্ছে ভালোই। এমনকি শখের কাজকে কেউ কেউ পেশা হিসেবে নেওয়ার কথাও ভাবছেন। শখের কাজ এবং পড়াশোনা দুটোতেই সফল এমন কয়েকজন নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

নুসরাত জাহান যুথী

পড়াশোনা করছেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষ বোটানি ডিপার্টমেন্টে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে তার ছবি আঁকা শুরু। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার আঁকার পরিধি শুধু স্কেচ আর হিউম্যান পোর্টেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। করোনাকালে তিনি আরো কয়েকটি নতুন মাধ্যমে আর্ট শুরু করেন। অনেকটা শখ করেই ফেসবুকে ‘Nusrat's Art Land’ নাামে পেইজ খুলেন। এখানে তিনি পোর্টেট পোস্ট দেন। অনেকেই তার আঁকা ছবি দেখে প্রশংসা করে। নিজের ছবি আঁকিয়ে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। যুথী প্রথম আয়ের টাকায় শিল্প সরঞ্জাম আর রং ক্রয় করেন। এ পর্যন্ত তিনি অ্যাক্রেলিক কালার অন ক্যানভাস, ওয়াটার কালার, কাচের গ্লাস পেইন্টিং, আরবি ক্যালিগ্রাফি, ডিজিটাল আর্ট, ক্লথ পেইন্টিং, পেনসিল কালার পোর্টেট, স্কেচ, থ্রিডি আর্ট, মান্ডালা আর্ট ইত্যাদি মাধ্যমে আর্ট করেছেন। অয়েল পেইন্টিং নিয়েও তার কাজ আছে অনেক। তার আঁকা ছবির সংখ্যা একশর ওপরে। হিউম্যান পোর্টেটে বিক্রি করে সর্বোচ্চ ১২ হাজার আর ক্যালিগ্রাফি বিক্রি করে ২০ হাজারের বেশি টাকা তার আয় হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কাস্টমাইজড অর্ডার আর নিজের পছন্দমতো আর্ট উভয়ই করে থাকি। ফ্রেমসহ ছবি আর্ট করি। নরমালি হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকি, তবে মাঝে মধ্যে নিজেই ডেলিভারি করে আসি। তার জনপ্রিয় আর্টগুওেলা হচ্ছে- “The wonderland”, “Aytul Kursi calligraphy”, “3D 500 taka”, “3D hand watch sketch”,

বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিয়েছেন। ২০২০ সালে ‘বন্দিপাঠশালা’র রংমশাল প্রতিযোগিতায় স্কেচে ১ম স্থান অধিকার করেন। ২০২১ সালে 1st creatix official national carnival - এ “3D hand watch sketch” আর্টটি স্কেচে পুরুস্কার পেয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় জার্জ ছিলেন একজন তুর্কিশ আর্টিস্ট। ছবি আঁকলে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তিÍ কাজ করে তাই শখ হিসেবে ছবি আঁকাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। সম্প্্রতি ২০২২ দুবাই Annual student Art shwo in Dubai- October 2022 exhibition এ তার আর্ট ‘Waterland’ নির্বভচিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১৫ জন নির্বাচিতদের মধ্যে তিনি একজন।

মাহফুজা ফারিহা

ছবি কিংবা আলপনা যেটাই হোক। তার তুলির ছোঁয়ায় অনন্যরূপ ধারণ করে। মানুষজন দেখে মুগ্ধ হয়। এই চিত্রশিল্পীর নাম মাহফুজা ফারিহা। রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সে। ছোটবেলা থেকেই তার ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ। তিনি সাধারণত জল রং, অ্যাক্রেলিক, পেন্সিল, প্যাস্টেল এবং চারকোলে ছবি আঁকতে পছন্দ করেন। তবে মাঝে মাঝে কফি তার ছবি আঁকার মাধ্যম হয়ে উঠে। এ পর্যন্ত প্রায় একশ দশটি ছবি এঁকেছেন তিনি।

হিউম্যান ফেস আঁকতে সব থেকে বেশি ভালোবাসেন তিনি। “Childhood” শিরোনামে তার ছবি obscure Artist গ্রুপের প্রতিযোগিতায় স্থান পেয়েছে। এই ছবিটি অনলাইন ম্যাগাজিনেও ছাপা হয়েছিল বলে তিনি জানান। ছবিটির বিষয়বস্তু ছিল শৈশবকাল। “Living Loneliness”- তার আরেকটি জনপ্রিয় ছবি। তার ফেসবুক পেজের নাম হলো “Shipra's Artistic Universe” ছবি আঁকায় তার পড়াশোনার ক্ষতি হয় না মোটেও। তিনি বলেন, ছবি আঁকলে মন মেজাজ ঠান্ডা থাকে এবং পড়াাশোনায় মনোযোগ তৈরি হয়। নিজের ছবি সর্ম্পকে তিনি বলেন, আমি চাই ভবিষ্যতে আমার ছবির মাধ্যমে যেন মানুষ শিক্ষণীয় কিছু পায়। শুধু সস্তা পপুলারিটির জন্য নয়, মৃত্যুর পরও যেন আমার ছবির মাধ্যমে মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সেটাই আমার চাওয়া।

মমতাজ জাহান মম

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজী বিভাগে পড়ছেন। ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি, কন্টেট রাইটার, বুক রিভিউ। এ ধরনের নানা রকম সৃজনশীল কাজ করেন তিনি। দুটো ইউটিউব চ্যানেল আছে তার। সেগুলোও বেশ জনপ্রিয়। সৃজনশীল এই শিক্ষার্থীর নাম মমতাজ জাহান মম। অবশ্য ছবি আঁকার অভ্যাসটা তার ছোটকাল থেকেই। যখন তিনি স্কুলে পড়তেন। সময়টা ছিল ২০০৮-২০০৯ সাল। শিশু একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমিতে নানা প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। মা, বাবা তাকে এসব সৃজনশীল কাজে সমর্থন দেন বলে তিনি জানান। মম বলেন, যে বইগুলো ভালো লাগে সেগুলোরই রিভিউ লিখি আমার ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক পেজে। বুক রিভিউ লিখে আমার কিছু পুরস্কারও জমা আছে। তিনি বুকফটোগ্রাফি করেন। সৃজনশীল কাজ করলেও তার পড়াশোনার ক্ষতি হয় না। তিনি বলেন, এক্সামের সময় আর্টের কাজ বন্ধ রাখি। অবসর সময় আর্ট করি। বন্ধুমহলে তিনি বইপড়ুয়া,আর্টিস্ট নামে পরিচিত।

সুমাইয়া ইমা

স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের ‘বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প’ বিভাগ থেকে। শিশুকাল থেকেই তিনি ছবি আঁকায় ভালো করছেন। যখন প্রথম শ্রেণিতে পড়েন। তখন ছবি এঁকে প্রথম পুরস্কার পান। ছবিটি ছিল একটি কিশোর খোলা সবুজ মাঠে পতাকা হাতে দৌড়ে যাচ্ছে, পেছনে রক্তিম সূর্য। সফল এই চিত্রশিল্পীর নাম সুমাইয়া ইমা। এখন অবধি তিনি শতাধিক ছবি এঁকেছেন বলে জানান। ছবি আকার পাশপাশি তিনি গ্রাফিক ডিজাইন নিয়েও কাজ করেন। তিনি ফ্রিল্যান্সার গ্রাফিক ডিজাইনার। ক্যালিগ্রাফিতে তার অনেক সুনাম। ফেসবুকে তার পেইজের নাম Canvastories by Ema. এখানে তার কাজ দেখা এবং অর্ডার দেওয়া যায়। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যালিগ্রাফি ও ডিজিটাল মাধ্যমে বেশি কাজ করা হয়। আমার ছবিতে আমি ফ্লরাল কাজ বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। ছবি আমি আমার নিজের মনের মতো করেই আঁকি, তবে যেহেতু আমার ছবি মানুষ ঘর সাজাতে বা প্রিয়জনকে উপহার দিতে কিনছে সেক্ষেত্রে তাদের মতামত বা চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়েই আমি ছবি এঁকে থাকি।

ইমার সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন ছবি হলো, কাবা শরিফের কালো ও সোনালি রঙের মতো করে আঁকা ক্যানভাসে আয়াতুল কুরসি ও সমুদ্রের থিমে আঁকা ক্যানভাসে সুরা ইখলাসের ক্যালিগ্রাফি। তার আঁকা ছবির সর্ব নিন্ম মূল্য ১৫০০ থেকে শুরু করে ১৭,০০০ পর্যন্ত।

দুটি এক্সিবিশনে তার ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। যেগুলো হলো, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত Color Flwo Art Exhibition 2022, সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত Magic Brush Season-2, এছাড়াও City Islamic Presents “In Search of Islamic Calligraphy” competition 2022 -এ ৭৫০টি শিল্পকর্মের মধ্য থেকে তার আঁকা ক্যালিগ্রাফি সেরা ১০০ তে নির্বাচিত হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close