এস এম আরিফুল আমিন

  ২৬ জুলাই, ২০২২

বানভাসি নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাহানারা আক্তার

‘শিক্ষার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও’। ছোট বেলা থেকেই রাজধানী ঢাকার আগারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলা নগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের খাতাণ্ডডায়েরি সবকিছুর মনোগ্রামের ওপরে এই ট্যাগ লাইনটি ছিল।

নিজ বিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিংয়ের এই ট্যাগলাইনটি খুবই ভালোবাসতেন জাহানারা আকতার, একজন নারী উদ্যোক্তা। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেন শিশু ও নারীদের জন্য ড্রেস লাইন ‘অনঙ্গ’। দীর্ঘ এক যুগ ধরে কাজ করে এসেছেন মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি, আইটি ফার্ম এবং এনজিও ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশানে।

শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুস্পষ্ট বচন, স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনধারার ব্যাপারে অনবদ্য সাহসী পদক্ষেপের জন্য বন্ধুমহলে সুপরিচিত। জন্মগতভাবে মধুমতী পাড়ের মেয়ে, ঢাকায় মায়ের কোলে চড়ে এসেছিলেন ১৭ দিন বয়সে। তারপর থেকে ঢাকার বাসিন্দা, এখানেই বাকি জীবন কাটছে। চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল মার্কেটিং, মিডিয়া ও আউটরিচ দেখছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি স্বনামধন্য ও উন্নত প্রযুক্তির হাসপাতালের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পার্টনার হিসেবে। শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা রিসোর্টের মার্কেটিং অ্যাডভাইজার হিসেবেও কাজ করেছেন।

সেই সুবাদে সিলেট বিভাগের মানুষের সঙ্গে সখ্য। এ বছর সিলেটে বন্যার আগ্রাসন আমরা সবাই জানি। তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম নিয়ে সিলেটের আঞ্চলিক যে ব্যক্তিবর্গ কাজ করে চলেছেন তাদের সঙ্গে ত্রাণকার্যে যোগ দেন। ঢাকা থেকে ফান্ড কালেক্ট করে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে পৌঁছে দেন মানুষের হাতে হাতে। এ বিষয়ে কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমাদের দেখে কিশোরীদের মায়েরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, আমাদের খাওন লাগব না, আগে পুরী তাইনের লজ্জা বাঁচান। সুনামগঞ্জের প্রায় প্রতিটি থানাতেই অবস্থা ছিল শোচনীয়। রাস্তাঘাট ভেঙে পড়েছিল আর বন্যার পানি এমনকি রাস্তার ওপরেও ওঠে এসেছিল। গবাদিপশু বন্যার পানিতে প্রথমে তলিয়ে যায় পরে খাদ্যাভাবে মারা যায়। মানুষ আক্ষরিক অর্থেই গৃহহীন হয়ে পড়ে। রাস্তায় তেরপাল, পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তেকোনা শেড/ছাউনি দিয়ে মানুষ ও গবাদিপশুদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। উঁচু বাঁধ ও ব্রিজগুলোকেই মানুষ বাঁচবার জন্য বেছে নিয়েছিলেন অস্থায়ী আবাস হিসেবে।

পানি এতটাই বেশি ছিল যে, ঢাকা থেকে আসা ত্রাণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ মাঝি নিয়ে যাওয়ার পরও বন্যার্তদের কাছে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। কারণ বন্যার পানিতে সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় ল্যান্ড মার্ক বোঝা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে রাত্রে বহু নৌকা পথ হারিয়ে সারা রাত এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে। এমন নজিরও দেখা গেছে।

সুরমা নদীর কূলে কূলে মানুষজনকে দেখা গেছে ত্রাণের জন্য সারা দিন দাঁড়িয়ে থাকতে। হাঁটু বা কোমর পানিতে সারা দিন মানুষ ঘণ্টার ঘণ্টার অপেক্ষায় থেকেছে একমুঠো খাদ্যের আশায়। নৌকা, ট্রলার বা হেলিকপ্টারের শব্দ তাদের কাছে বয়ে আনে আশার বাণী।

সুরমা নদীর কূলে কূলে যতদূর সম্ভব জাহানারা ও তার ভলান্টিয়ার টিম কাজ করে। স্থানীয়দের মধ্যে সিলেটের বিনয় দা, সুনামগঞ্জের বাপ্পী, দীপংকর ও আনাস সার্বক্ষণিকভাবে তাদের সঙ্গে থেকে সার্বিক নিরাপত্তাদান করেন।

বর্তমানে জাহানারা আক্তার কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত এলাকার নারীদের জন্য ফান্ড রেইজিং করছেন। এ মাসের শেষের দিকে তারা সাহায্যসামগ্রী নিয়ে কুড়িগ্রাম যাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close