reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ জুন, ২০২২

কণ্ঠ দিয়ে সংসার চলে বন্যার

নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে নানা পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের সামাজিক সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেন শাহনাজ আক্তার। ভিন্ন পেশায় যুক্ত এই নারীর গল্প নিয়ে লিখেছেন আজাদ রহমান

‘সুখবর! সুখবর! সুখবর! ঘর সাজানোর অফার মাত্র দুই হাজার টাকা ডাউন পেমেন্টে। চল যাই চরচালা, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জে। আকর্ষণীয় সব পণ্যের জন্য চল যাই বেলকুচিতে।’ এটি একটি বিজ্ঞাপন। মাইকে হরহামেশা প্রচার করা হয় এমন বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপনে সাধারণত পুরুষ কণ্ঠ বেশি শোনা যায়। কিন্তু ঝিনাইদহ শহরে বিজ্ঞাপন প্রচারে একটি নারীকণ্ঠ বেশি শোনা যায়।

কণ্ঠের মালিক শাহনাজ আক্তার ওরফে বন্যা (২৬)। নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে নানা পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের সামাজিক সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন- সবখানেই কণ্ঠ দেন তিনি। সুললিত কণ্ঠ ও সুন্দর বাচনভঙ্গির জন্য এসব বিজ্ঞাপন ঝিনাইদহের গ-ি ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও মাইকে প্রচার হয়। বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেওয়াই শাহনাজের পেশা। ছয় বছর ধরে এই করেই চলছে তার পাঁচ সদস্যের সংসার। শাহনাজ ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মাঠ-আন্দুলিয়া গ্রামের ওলিয়ার রহমান ও চামেলী রহমানের মেয়ে। থাকেন ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ায় ভাড়া বাসায়। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ তার বাবা-মা। বাড়িতেই থাকেন তারা। একমাত্র ছোট ভাইও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। নিজ আয়ে মা-বাবার ওষুধ, ভাই ও ছেলের পড়ালেখাসহ সংসারের সব খরচ চালান তিনি। শাহনাজ বলেন, ২০১১ সালে তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছরই তার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর সংসারে পড়ালেখা আর হয়নি। ২০১৩ সালে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন শাহনাজ। ২০১৮ সালে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গেই আছেন। আবার পড়ালেখা শুরু করে ২০১৮ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন শাহনাজ। স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আসার পরপরই বাবা অসুস্থ হয়ে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে যান, বলেন শাহনাজ। তখন থেকেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। এরপর বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেওয়াকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এমনিতেই তার কণ্ঠ মিষ্টি। উচ্চারণও শুদ্ধ। এ কারণে শহরে মিজানুর রহমানের স্টুডিওতে তাকে নিয়ে যান এক আত্মীয়। ‘মেলোডি অ্যাড’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানে মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিতে শুরু করেন তিনি। সেই থেকে ওই পেশাতেই আছেন।

মিজানুর রহমানের সঙ্গে এখন যৌথভাবে কণ্ঠ দেন শাহনাজ। সব ধরনের বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেন এ জুটি। প্রতিদিন সকালটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজের জন্য তৈরি থাকতে হয়। কাজ এলেই বসে পড়েন মাইক্রোফোনের সামনে। দিনে গড়ে পাঁচণ্ডছয়টি বিজ্ঞাপন রেকর্ডিংয়ে অংশ নেন তিনি। এ থেকে আয় হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

কথা প্রসঙ্গে শাহনাজ জানান, বিজ্ঞাপনের কাজ করতে হলে কণ্ঠের যত্ন দরকার। প্রতিদিন সকালে উঠে একটু রেওয়াজ করে নেন। যাতে ঠান্ডা না লাগে, সেদিকে নজর রাখতে হয়। মাঝেমধ্যে চা খেতে হয়। গরম পানি দিয়ে গার্গল করতে হয় নিয়মিত। এসব করে পেশাটি ধরে রেখেছেন তিনি।

প্রতিবেশীদের মুখেও শাহনাজের প্রশংসা শোনা গেল। প্রতিবেশী আবদুল আজিজ বলেন, মেয়েটি খুব ভালো। বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেওয়ার মতো কঠিন কাজ করে গোটা পরিবার বাঁচিয়ে রেখেছে।

শাহনাজের কাজে মিজানুর রহমানও খুশি। তিনি বলেন, তারা দুজন মিলে কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ঝিনাইদহের সাইদুর রহমান বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের জন্য কাজ এনে দেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন সাইদুর। পাশাপাশি বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে মেলোডি অ্যাড থেকে রেকর্ডিং করান। সাইদুর বলেন, মিজান-বন্যার কণ্ঠ সব এলাকায় জনপ্রিয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close