reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ মে, ২০২২

দরিদ্রতা বিমোচনে তৃষা

মানুষের বিপদে পাশে থাকতে চান আজীবন। এটাই তার ধ্যান, জ্ঞান। এরই মধ্যে সে অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গড়ে তুলেছেন ওয়ার্কস ফর হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন। টাকা-পয়সা দিয়ে সাময়িক মানুষকে সাহায্য করা যায়। কিন্তু এতে সমস্যা থেকেই যায়। টাকা শেষ হলে মানুষটি হাত পাতে অন্যদের কাছে। কিন্তু যদি এমন কিছু করে দেওয়া হয়; যাতে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নিজের আয়ে চলতে পারে। তাহলেই মিলবে স্থায়ী সমাধান। এমনটিই তিনি ভেবেছেন। সেভাবেই কাজ করছেন। অদম্য এই সমাজকর্মীর নাম তাহমিনা তৃষা। তাকে নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

মা-বাবা থেকেই

গরির, দুঃখী, অসহায় যারা। তৃষার মা-বাবা তাদের সাহায্য করতেন। বিভিন্ন সময়, বিভিন্নভাবে। কাউকে ফেরাতেন না। মা-বাবার এই কাজ তৃষার মনে জায়গা করে নেয়। বড় হয়ে তিনিও ভাবলেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। গতানুগতিক নয়। একটু ব্যতিক্রম তার ভাবনা। তিনি বলেন, কেউ সাহায্য চাইলে ৫০-১০০ টাকা দেওয়া সহজ। টাকা শেষ হলে সে আবার হাত পাতবে। কিন্তু এমন কিছু তাকে দেওয়া হোক। যাতে সে নিজের আয়েই চলতে পারে। এই ভাবনা থেকে ২০১৪ সাল থেকে তার কার্যক্রমের শুরু। ছুটে বেড়িয়েছেন দেশময়। উদ্দেশ্যে হলো অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো।

মানবকল্যাণই তার ধ্যান

১৬ জুলাই, ২০১৬ সালে তাহমিনা তৃষা ওয়ার্কস ফর হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৃষা। পরে তার সঙ্গে কো-ফাউন্ডার মেসবাহ মুন্না, ফয়সাল হোসেন নুরুল ইসলাম, সৌরভ শেখ, সুজন পাটোয়ারী, কাওসার খানসহ অনেকেই যুক্ত হন। কাজটাই তৃষার কাছে মূল বিষয়। কাজগুলো এবং টিমের নাম দেওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই সাংগঠনিকভাবে রূপ দেন। তৃষা বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে কোনো সংগঠনের প্রয়োজন নেই। সংগঠন ছাড়াও কাজ করা যায়। তবে বৃহত্তরভাবে রূপ দিতে চাইলে একটি প্রাতিষ্ঠানিক নামের প্রয়োজন হয়।

পথ মসৃণ নয়

মুখে মানুষ অনেক কিছুই বলে। সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখির শেষ নেই। প্রশংসাও করেন অনেকে। তবে যারা সমাজের জন্য কাজ করছেন। তাদের পাশে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে দাঁড়াচ্ছে কম মানুষই। তৃষা বলেন, ওয়ার্কস ফর হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন যখন যাত্রা করে, সেসময় স্পন্সরশিপের জন্য আমরা একটি কোম্পানিতে যাই। তারা তখন আমাদের মিটিং শিডিউল দিতেই রাজি হননি। তিন বছর পরের ঘটনা। ওই প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে স্পন্সরশিপ চায়। তৃষার কাছ্ েজানা গেল, অনেক ফাউন্ডেশন করপোরেট সাপোর্ট পাওয়ার মতো কাজ করছে। কিন্তু তাদের পাশে যেভাবে থাকার কথা, ঠিক সেভাবে নেই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।

জুটেছে স্বীকৃতিও

তারুণ্যের আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল তৃষার ওয়ার্কস ফর হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির সদস্যরা মানবকল্যাণে কাজ করেন। পুরস্কার পাওয়া তাদের উদ্দেশ্যে নয়। ওয়ার্কস ফর হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন বেস্ট ইউথ অ্যাওয়ার্ড-২০১৬, জুম বাংলাদেশ বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড-২০১৭, জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ পেয়েছে। কাজের জন্য তাহমিনা তৃষা পেয়েছেন ক্যানসার রোগী স্বজন সমাজ কর্তৃক সম্মাননা পদক-২০১৭।

মানুষ মানুষের জন্য

ভালো কাজ শুধু টাকা-পয়সাই দিয়েই নয়।

বিভিন্নভাবে করা যায়। তৃষা বলেন, ওয়ার্কস ফর হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন যখন পুরোনো সামগ্রী (জামা, জুতা, ব্যাগ) বিতরণ করে। দরিদ্র মানুষগুলোই আমাদের মাথার ওপর ছাতা ধরেন। বন্যায় যখন চরাঞ্চলে ত্রাণ দিতে যাই। হাঁটুজলে নিমজ্জিত ঘর। সেখানে আমাদের বসার জায়গা করে দেন। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক যার সাংসারিক খরচ জোগাতেই কষ্ট হয়। তিনি ছাত্রদের থেকে কলম সংগ্রহ করেন। সেগুলো আমাদের কাছে কুরিয়ার করে পাঠান দরিদ্্র শিক্ষার্থীদের জন্য। টাকা বা সময় দেওয়ার সামর্থ্য তার ছিল না। এমন এক স্টুডেন্ট সাইকেলে করে বই পৌঁছে দিতেন পাঠকের বাসায়। সমালোচনা নয়। তৃষার মতে, মানুষের জন্য কতটুকু করা সম্ভব। সেটাই ভাবা উচিত সবার আগে।

অর্থায়ন যেভাবে

সংগঠনটি স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের চাঁদা নেয় না। তবে কমিটি মেম্বার যারা তারা মাসিক অনুদান দেন। এ ছাড়া নিয়মিত দাতারা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অঙ্ক ডোনেট করেন। সেটা যেকোনো পরিমাণ হতে পারে। যে কেউ যেকোনো সময় যেকোনো পরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে পাঠাতে পারেন। সংগঠনটির ডেটা ম্যানেজমেন্ট টিম রয়েছে। যারা অনুদান ও খরচের সব হিসাব লিপিবদ্ধ রাখে। কেউ অনুদান পাঠালে তাকে অফিশিয়ালি কনফার্মেশন পাঠানো হয়। স্বচ্ছতার ব্যাপারে সংগঠনটি বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না। বলেন তাহমিনা তৃষা।

ঢাকার বাইরে

তৃষা বলেন, কাজের ক্ষেত্রে ঢাকার চেয়ে বরং অন্যান্য জেলায় কাজ করা অনেক সহজ। সে তুলনায় ঢাকায় কাজ করা বেশ কঠিন। ঢাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ হলে অনুমতি পেতে বেগ পেতে হয়। মফস্বলে বরং সবাই এগিয়ে আসে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহায়তা করে। ঢাকার বাইরের কাজে খরচ কম। সামাজিক কাজ করার জন্য ঢাকার চেয়ে বরং অন্যান্য জেলাতেই সুযোগ-সুবিধা বেশি। ঢাকার বাইরে সংগঠনটির কাজের সংখ্যা বেশি বলে তৃষা জানান। বই বাড়ি লাইব্রেরি, ত্রাণ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এগুলো মূলত গ্রামাঞ্চলে করা হয়। যদিও সংগঠনটি ঢাকা বেইসড। প্রজেক্ট ত্রিবেণি, তাও ঢাকার বাইরে চলছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ওয়ার্কস ফর হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনকে এমন উচ্চতায় পৌঁছানো; যাতে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষেরও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরণে কাজ করে যেতে পারে। তাই আমাদের থিমই হচ্ছে- ‘spread happiness over the world’ আমরা বিশ্বব্যাপী সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সুখ, আনন্দ ও শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। বলেন তাহমিনা তৃষা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close