reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ এপ্রিল, ২০২২

সাইক্লিংয়ে এক নারী স্বাধীনতার গল্প

মেয়েরা একটু ভিন্ন কিছু করতে চাইলেই সেটা নিয়ে হয় আলোচনা-সমালোচনা। একটা মেয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, রাস্তায় পাশ দিয়ে যাওয়া বাস থেকে দুটো অরুচিকর কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। এর মানে কি বলতে পারবেন? এর মানে একটাই স্বাধীন দেশে মেয়েরা এখনো স্বাধীন নয়

‘মেয়ে হয়েও আবার সাইক্লিং করবে! ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলাবে কী করে?’- এমনই সব কটুকথা প্রতিনিয়তই শুনতে হয় রাজধানীর সাইকেলিস্ট তাসলিমাকে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে পাল্টেছে জীবনযাত্রার ধরন। এখন ছেলেমেয়ে উভয় চাকরি করছে, দায়িত্ব নিচ্ছে পরিবারের। এ ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিতি এখন চোখে পড়ান মতো। যেটা গত কয়েক বছর আগেও ছিল না। বলা হয় ছেলেমেয়ের সমান অধিকার। এ রকমই একটা স্বাধীন দেশ সবাই প্রত্যাশা করে। তবে এখনো মেয়েরা ছেলেদের থেকে আলাদা এবং দুর্বল করে উপস্থাপন করে দেখা হয় বেশ কিছু ক্ষেত্রেই। মেয়েদের কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে বেশির ভাগ জায়গায়।

মেয়েরা একটু ভিন্ন কিছু করতে চাইলেই সেটা নিয়ে হয় আলোচনা-সমালোচনা। একটা মেয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, রাস্তায় পাশ দিয়ে যাওয়া বাস থেকে দুটো অরুচিকর কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। এর মানে কি বলতে পারবেন? এর মানে একটাই স্বাধীন দেশে মেয়েরা এখনো স্বাধীন নয়। কিন্তু তাই বলে মেয়েরা থেমে গেছে বা তাদের কাজ থেকে পিছিয়ে এসেছে?

একদমই না, এখনকার সময়ের মেয়েরা লড়তে জানে, লড়াই করে টিকে থাকতে জানে, দুটো অরুচিকর কথার পাল্টা জবাব দিতে জানে।

রংপুরের মেয়ে তাসলিমার কথাই ধরা যাক। সাইক্লিং করছে প্রায় ৩ বছর হলো। পড়াশোনার পাশাপাশি তার শখের সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে নিয়মিতই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদেরই বেশি আদিপত্য দেখা যায়। এরমধ্যে মেয়েরা যে সাইক্লিলং করছে না তা নয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই সাইক্লিং করতে গিয়ে তাকে শুনতে হয়েছে সমাজের সাধারণ মানুষের অনেক কথা। তাই তার মতে বাংলাদেশে মেয়েরা এখনো স্বাধীন নয়। কিন্তু তার মধ্যে রয়েছে উদ্যম আর চেষ্টা। আর এই চেষ্টা থেকেই গত ২৫ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তার কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সাইকেল চালিয়ে ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার মতো এক চ্যালেঞ্জের পরিকল্পনা করে।

গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় চারজনের একটি টিম নিয়ে ঢাকা ভিসি চত্বর থেকে শুরু হয় তাদের এই যাত্রা। তাসলিমা ছাড়াও বাকিরা হলেন মিসাম, সিজান এবং ইমরান। তাদের পরিকল্পনায় যাত্রার রুটটা ছিল ঢাক-কুমিল্লা-ফেনী। একই পথে তারা ফিরে আসে। তবে যাত্রাপথে কয়েকটি স্থানে তাদের বিরতি নিতে হয়েছে রাতের খাবার, দুপুরের খাবার আর বিশ্রামের জন্য। এই যাত্রায় তারা যথাক্রমে কাঁচপুর, কুমিল্লা শহর আর চৌদ্দগ্রামে বিরতি নেয়। ফেনীতে খাওয়া-দাওয়া পর্ব সেরে ঢাকা ফিরে আসার আগে ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে নেয় তারা। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে রাত ১০টায় তারা ঢাকা ফিরে। তাদের এই পুরো যাত্রাপথে মোট ১৬ ঘণ্টা সাইকেল চালায় তারা। তবে সব মিলিয়ে সময় নেয় এক দিনেরও বেশি।

পরিকল্পিত এ যাত্রা শেষ করে তাসলিমা ছিল দারুণ উচ্ছ্বসিত। যাত্রাসঙ্গীদের সহযোগিতা আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি না থাকলে এই যাত্রা কখনোই সম্ভব হতো না বলেও জানায় সে। সমান অধিকারের সমাজে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীরা আজও উপেক্ষিত। তবে তাসলিমার মতো উদ্যমী তরুণীরাই দেখাবে সামনে বিজয়ের পথ- এমনটিই আশা নারী সমাজের।

তথ্যসূত্র : সংগৃহীত

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close