মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

  ০১ মার্চ, ২০২২

নারী উদ্যোক্তাদের চাওয়া-পাওয়া

‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার বিখ্যাত ‘নারী’ কবিতায় এভাবেই নারীর অবদানের কথা বলেছেন। এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের বোঝা উচিত জাতীয় উন্নয়নে নারীর অংশীদারত্ব প্রয়োজন। নারী শুধুই সংসার সামলাবে। এই চল এখন উঠে গেছে। সংসারের পাশাপাশি নারীরা উপার্জনের পথও বেছে নিয়েছেন। গৃহিণীরা যেমন, তেমনি স্টুডেন্টরাও। অনেকের সৌখিন কাজ এখন আয়ের পথ সুগম করেছে। তৈরি হয়েছে অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা। ভিন্ন পরিচয়ে নারীরা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা শুধু তার নয়। পরিবারে সচ্ছলতায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

যদিও নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা মোটেও মসৃণ নয়। পদে পদে কাঁটা বিছানো। তবু নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। কোনো বাধাই তাদের আটকাতে পারেনি। অনলাইনে কাপড়ের, পেইন্ট, জুয়েলারি, খাদ্যদ্র্রব্য, কসমেটিকস কী নেই। যার ব্যবসা নারী করছেন না। এখন আর দোকান দিয়ে বসতে হয় না। ঘরে বসেই ব্যবসা সম্ভব। সিলেটের রোজিনার কথাই ধরা যাক। চা পাতা, আচার, মণিপুরী কাপড়ের জমজমাট ব্যবসা তার। ব্যাপক পরিচিতি। পাশাপাশি পড়াশোনাও চলছে সমানতালে। বাবা নেই। পরিবারে অর্থনৈতিক টানাপড়েন তো আছেই। সেখানেও এখন তিনি ভূমিকা রাখছেন। পরিবারকে সাহায্য করছেন। নিশাত আনজুম সন্ধি। পড়াশোনা করে। আবার সুন্দর ছবি আঁকে। সে ছবি বিক্রিও হয়। তার ক্যানভাস, পেপার, কাচের জিনিস, কাঠের গহনা, মাটির জিনিসের ওপর কাজগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

রোখসানার কথাই ধরা যাক। অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা তার। আয় হয় ভালোই। তিনি আয়ের টাকা কিছুটা ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। কিছুটা পরিবারের পেছনে। আরেক নারী উদ্যোক্তা জাকিয়া শারমিন। ইনডোর প্লান্ট বিক্রি করেন। তিনিও ইনকামের টাকা পরিবারের পেছনে খরচ করেন। আবার টুকটাক নিজের চাহিদাও মিটান। নারী উদ্যোক্তারা যা আয় করেন। তা দিয়ে নিজের স্বাদণ্ডআল্লাদ পূরণ করেন। পরিবারের পুরুষ সদস্যের দিকে তাকে মুখিয়ে থাকতে হয় না। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একজন পুরুষ সদস্য হন। তার ওপর খরচের চাপ কিছুটা হলেও কমে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক ইসরাত জাহান ইভা বলেন, দৃশ্যপট এখন পাল্টে গেছে। আগে নারী উদ্যোক্তাদের খারাপভাবে দেখা হতো। নারীরা ব্যবসা করবেন। এ কেমন কথা। এখন নারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে দাঁড় করেছেন। সফলতা দেখিয়েছেন। ফলে অনেক পরিবারই নারী সদস্যদের কাজকে সমর্থন দেয়। যারা কটাক্ষ করতেন। তারা প্রশংসা করেন। কাঁচামাল সংগ্রহ, প্যাকেজিং, কুরিয়ারে পণ্য পাঠানো। মোটা দাগে এই তিনটি জায়গায় নারী উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়েন। যখন-তখন কোথাও যেতে পারেন না। প্যাকেজিংয়ের ওপর তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কুরিয়ার কোম্পানিগুলো অনেক সময় পণ্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে নারী উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হন। মূলধনের সমস্যা তো আছেই। যতই সমর্থন দিক। পরিবারের পুরুষ সদস্য নারীকে মূলধন দিতে আগ্রহী হন না। কারণ ঝুঁকি নিতে চান না। তবে নারী যখন সফল হন। তখন ঠিকই তার পাশে দাঁড়ান।

উদ্যোক্তা মায়মুনা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের বিনা সুদে লোন দেওয়া দরকার। ব্যবসা করতে হলে লাইসেন্স লাগে। এখানেও তারা বহুবিধ সমস্যায় পড়েন। এ দপ্তর থেকে ও দপ্তরে ঘুরতে হয়। সহসা লাইন্সেস পান না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তো এরা পণ্যের প্রচার করেন না। অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালান। অর্ডার নেন। অনলাইনে কীভাবে সুন্দর করে পণ্যের প্রচার করা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারে। জেলা পর্যায়ে হলে আরো উত্তম হয়। বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা কতজন। এমন কোনো ডেটাবেইস কোথাও নেই। তাদের সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজন করে। নারী উদ্যোক্তাদের সাহায্য করতে চায়। বেসরকারি ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো লোনের সহজ প্যাকেজ দেয় না। যদিও তারা নারী উন্নয়নে অংশীদারত্বের ব্যাপারে মুখরোচক কথা বলে। লোন নিয়ে পরিশোধ করেন না। এমনটা নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য যাতে তারা আরো ভালো করতে পারেন। এসব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে সরকারি সাহায্য তারা প্রত্যাশা করেন।

অর্থনীতিতে নারীর অংশীদারত্ব যদি বাড়ে। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে। এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। নীতিনির্ধারকরা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা যতটাই কথার খই ফোটান। ঠিক তার অর্ধেকও যদি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করেন, তাহলে নারী উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন, পরিবারগুলোতে দূর হবে অর্থনৈতিক টানাপড়েন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close