reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

বিশ্বের ৭ নারী বিজ্ঞানী

নানা রকম বাধা সত্ত্বেও সৃষ্টিশীল ও উদ্যমী মেয়েরা সব সময়ই নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে উতরে গেছেন এবং নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেছনে মেধা ও শ্রম দিয়েছেন। তাদের কাজের মাধ্যমে তারা প্রতিনিয়ত চেনা পৃথিবী বদলাতে ভূমিকা রেখেছেন। অচেনা সব গল্প সামনে এনেছেন অথবা নতুন করে বলেছেন। আজ রইল সাতজন নারী বিজ্ঞানী এবং তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কিছু কথা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে ভাষান্তর করেছেন রাজনীন ফারজানা

টু ইউইউ

চায়নিজ ওষুধ রসায়নবিদ ইউইউ প্রাচীন চায়নার ম্যালেরিয়ার ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেন। তার আবিষ্কৃত আর্টেমিসিনিন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর রক্ত থেকে প্ল্যাজমোডিয়াম জীবাণুর পরিমাণ কমায়, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়। ফার্মাকোলজির ছাত্র হিসেবে তার গবেষণার বিষয় ছিল বিভিন্ন ঔষধি বৃক্ষের রাসায়নিক উপাদান ও গঠন। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ম্যালেরিয়ার প্রকোপ নিয়ে পড়াশোনা করেন। সে সময় থেকেই তিনি প্রাচীন আমলের চিকিৎসাবিষয়ক বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন ও চীনের বিভিন্ন রেইন ফরেস্টে ঔষধি বৃক্ষের খোঁজ করেন।

বেশ কয়েক বছরের গবেষণার পর ইউইউ ও তার গবেষক দল চীনের রেইন ফরেস্টে এক ধরনের সুইট ওয়ার্মউডের খোঁজ পান। এই গাছ আজ থেকে ৪০০ বছর আগে প্রাচীন চীনে ম্যালেরিয়ার অন্যতম লক্ষণ একটানা জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো। তারা এই গাছ থেকে আর্টেমিসিনিন নামক সক্রিয় উপাদান পরীক্ষা করে তার ফলাফল প্রকাশ করেন। এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার প্রথম প্রতিষেধক হিসেবে আর্টেমিসিনিন কম্বিনেশন দিয়ে চিকিৎসা করতে পরামর্শ দেন। ইউইউ বলেন, সব বিজ্ঞানীই এমন কিছু আবিষ্কার করতে চান, যার দ্বারা বিশ্ববাসী উপকৃত হবে। ২০১৫ সালে ইউইউ এবং তার দুই সহকর্মী প্রথম চাইনিজ হিসেবে ফিজিওলজি এবং মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এমনকি তিনি চায়নার প্রথম নারী নোবেল লরিয়েট।

কিয়ারা নির্ঘিন

‘ছেলেবেলা থেকেই আমি এই বিশ্ব কীভাবে চলে, সেটি জানতে বেশি আগ্রহী’, বলছিলেন ২০১৬ সালে গুগল সায়েন্স ফেয়ারে পুরস্কার বিজয়ী ১৯ বছর বয়সি কিয়ারা নির্ঘিন। সেই মেলায় কিয়ারা অধিক শোষণক্ষমতা সম্পন্ন পলিমার আবিষ্কার করেন, যা তার আকারের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি তরল শোষণ করতে পারে। খরার সময় ফসলের জন্য পানি ধরে রাখতে কাজে লাগবে এই পলিমার। কমলা ও অ্যাভোকাডোর খোসা দিয়ে বানানো এই পলিমারের খরচও কম আর বায়োডিগ্রেডেবল অর্থাৎ যা মাটিতে মিশে যাবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়ে নির্ঘিন ২০১৫ সালে তার দেশে খরার নিদারুণ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। চোখের সামনে পানিভর্তি কূপকে শুকিয়ে যেতে দেখেন। সেই অভিজ্ঞতাই তাকে এই পণ্যটি বানানোর অনুপ্রেরণা জোগায়।

ক্যাথেরিন জনসন

গণিতবিদ ক্যাথেরিন জনসন। পৃথিবীর কক্ষপথে এবং মহাশূন্যে যাওয়া প্রথম নভোযানের জন্য তিনি ট্র্যাজেকটরিজ, লঞ্চ উইন্ডোজ এবং এমার্জেন্সি রিটার্ন পাথ ইত্যাদি হিসাব করেন। অসম্ভবকে সম্ভব করার এই জার্নি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার ছিল অসীম কৌতূহল। কী ঘটছে, কেন ঘটছে তার সব জানতে চাইতাম আমি।’

প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে তিনি গ্র্যাজুয়েট স্কুলে যান এবং নাসার স্পেস প্রোগ্রামে যোগ দেন। লিঙ্গ, জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও গায়ের রঙের জন্য বৈষম্যের শিকার হলেও তার আত্মবিশ্বাস কমেনি কখনোই। নাসার সেই গবেষক দলে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী সদস্য। তিনি সব সময় মেয়েদের স্বপ্নপূরণের জন্য উৎসাহ দেন। মেয়েদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিজের স্বপ্ন খুঁজে বের কর এবং সেটি পূরণে কাজ কর। কারণ পছন্দের কাজ করলে, সেটিতে ভালো করতে পারবে।’

ম্যারি কুরি

একাধারে পদার্থবিদ এবং রসায়নবিদ ছিলেন দুবার নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী ম্যারি কুরি। রেডিও অ্যাকটিভিটি নিয়ে তার গবেষণাই আধুনিক পারমাণবিক বিজ্ঞানের নানা গবেষণার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত এক্স-রে থেকে শুরু করে রেডিওথেরাপি আবিষ্কার তারই অবদান। প্রথম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তিনি এবং প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিজ্ঞানের দুটি আলাদা বিষয়ে নোবেল পান।

মার্সিয়া বারবোসা

ব্রাজিলিয়ান প্রকৃতিবিদ মার্সিয়া বারবোসা পানির অনুর জটিল কাঠামো নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত। বারবোসার মতে পানি এলে ভীষণ অদ্ভুত। তিনি মনে করেন, পানির অণুর ব্যতিক্রমী গঠন নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে সাহায্য করতে পারবেন। বারবোসা পানির বৈশিষ্ট্যগুলোর একাধিক মডেল তৈরি করেছেন, যা বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের বোঝার পরিধি বাড়াতে পারে। যেমন : কীভাবে ভূমিকম্প হয়, কীভাবে প্রোটিন সংগঠিত হয়, ক্লিন এনার্জি বা পরিষ্কার শক্তি উৎপাদিত হয় এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হয় ইত্যাদি বুঝতে সাহায্য করেছে। ২০১৩ সালে তাকে বিজ্ঞানে অবদানের জন্য তাকে ল’রিয়েল-ইউনেসকো পুরস্কার দেওয়া হয়।

সেগেনেট কেলেমু

আণবিক উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদ সেগেনেটের গবেষণার বিষয় অল্প জমির মালিকরা কীভাবে আরো ফসল উৎপাদন করতে পারবে, তাই নিয়ে গবেষণা করছেন। সেগেনেট বলেন, ‘আমার জীবনের চালিকাশক্তি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা এবং আফ্রিকার কৃষির উন্নয়ন ঘটানো।’

কেলেমুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইথিওপিয়ার একটি দরিদ্র পরিবারে। সেখানে এতটাই অভাব যে, মানুষ খাবার কিনবে, না কলম কিনবে, তাই বুঝে উঠতে পারে না। এলাকার প্রথম মেয়ে হিসেবে কলেজ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তার ভাষ্য মতে, ‘আমার গ্রামে মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমি এতটাই প্রতিবাদী ছিলাম যে, কেউ আমার জন্য বিয়ে ঠিক করার সাহস পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলাম আমি।’

মারিয়াম মির্জাখানি

ইরানের তেহরানে বেড়ে ওঠা মারিয়ামের স্বপ্ন ছিল লেখক হওয়ার। হাইস্কুলে উঠে তিনি গণিতের প্রতি ভালোবাসা আবিষ্কার করেন ও এই ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতা ও মেধা দেখানোর সুযোগ পান। ১৯৯৪ সালে প্রথম ইরানি নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ৪২-এর মধ্যে ৪১ পয়েন্ট পেয়ে সোনার পদক অর্জন করেন মারিয়াম। ২০১৫ সালে একই প্রতিযোগিতায় শতভাগ স্কোর করতে সক্ষম হন তিনি।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জটিল পৃষ্ঠের গতিবিদ্যা ও জ্যামিতির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এ বিষয়ে একজন শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত। ২০১৪ সালে প্রথম নারী হিসেবে গণিতে সবচেয়ে নামি পুরস্কার ফিল্ডস মেডাল অর্জন করেন। নিজ গবেষণা সম্পর্কে মারিয়াম বলেন, ‘গণিতে যত সময় দিই, তত বেশি উত্তেজনা অনুভব করি আমি। নতুন কিছু আবিষ্কারের ও বোঝার যে উত্তেজনা এবং আনন্দ তার সঙ্গে পর্বতচূড়ায় দাঁড়িয়ে সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পাওয়ার আনন্দের তুলনা করা যায়।’

২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করা মারিয়ামের অবদান মেয়েদের জন্য গণিতের মতো বিষয়ে আরো মনোনিবেশ করতে উৎসাহ দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close