reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম

১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন পুরস্কার পান তিনি। এরপরই বাংলাদেশে আলোচনায় আসেন

শুরু ১৩-১৪ বয়সে। এ বয়সে বই ও খেলাধুলায় সময় বয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি এ সময় হাতে তুলে নিলেন ক্যামেরা। বলা হচ্ছে, সাইদা খানমের কথা, যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও লাইব্রেরি সায়েন্সে মাস্টার্স করেন। বাবা আবদুস সামাদ খান, মা নাছিমা খাতুন। পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙায় হলেও জন্ম পাবনায়, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৩৭ সালে। স্থিরচিত্রী হিসেবে শুরু করেন কাজ। সেই সময় পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) তিনিই ছিলেন একমাত্র ও প্রথম নারী আলোকচিত্রী।

‘বেগম’ পত্রিকার মাধ্যমে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার ছবি ছাপা হয় ‘অবজারভার’, ‘মর্নিং নিউজ’, ‘ইত্তেফাক’, ‘সংবাদ’সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন তিনি।

১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন পুরস্কার পান তিনি। এরপরই বাংলাদেশে আলোচনায় আসেন। এরপর ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার বেশকটি প্রদর্শনী হয়। জাপানে ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি পান তিনি।

১৯৬২ সালে ‘চিত্রালী’ পত্রিকার হয়ে একটি অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলে সমাদৃত হন সাইদা খানম। পরে সত্যজিতের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেন তিনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী ঢাকার আজিমপুর এলাকায় অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণরত নারীদের ছবি তোলেন। ১৬ ডিসেম্বরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (পরে শেরাটন, রূপসী বাংলা ও বর্তমানে আবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) সামনে পাকিস্তানি সেনারা গোলাগুলি শুরু করে। খবর পেয়ে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেখানকার ছবি তুলতে যান তিনি। প্রচণ্ড গোলাগুলির কারণে সেদিন অবশ্য ছবি তুলতে পারেননি। সেদিন একজন নারী আলোকচিত্রী হিসেবে তার সাহস দেখে সবাই বিস্মিত হন। ক্যামেরার ক্লিকের পাশাপাশি লেখালেখি করতেন সব সময়। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ধুলোমাটি’, ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’, ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’, ‘আলোকচিত্রী সাইদা খানমণ্ডএর উপন্যাসত্রয়ী’। তিনি বাংলা একাডেমি ও ইউএনএবির আজীবন সদস্য। একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট সোমবার ইন্তেকাল করেন। তার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

* জাহিদুল করিম

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close