reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ অক্টোবর, ২০২১

ইতিহাস কাঁপানো নারী

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে বলা হয় আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত। তিনি একই সঙ্গে একজন লেখিকা এবং একজন পরিসংখ্যানবিদ। তাকে আধুনিক নার্সিংয়ের জননীও বলা হয়। ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা কেটেছে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ায়। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় নার্সিংয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি। রাতের আঁধারে আহত সেনাদের সেবা করার জন্য ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে ডাকা হয় তাকে। গণিতেও ছিলেন পারদর্শী। তিনিই প্রথম পরিসংখ্যানগত তথ্য উপস্থাপনের জন্য ডায়াগ্রামের ব্যবহার করেন।

সাবিহা গকসেন

আকাশ জয়ের গল্প রয়েছে নারীর। যুগে যুগে যুদ্ধ ময়দানে পুরুষের পাশাপাশি লড়েছেন নারী। আকাশপথে যোদ্ধা নারীর কথা এলে বলতে হয় সাবিহা গকসেনের কথা। ১৯ শতকে শংরস্ক দেখেছিল নারী যোদ্ধা পাইলট সাবিহাকে। বিভিন্ন সূত্র মতে, সাবিহা পৃথিবীর প্রথম নারী যোদ্ধা পাইলট। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি ইস্কিসিরের সামরিক বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। যদি অন্যান্য ভূমিকায় তার আগে ম্যারি মারভিন্ত ও ইহিনি মেখেইলোভনারকে দেখা গিয়েছিল। সাবিহা মোস্তফা কামাল আতাশংর্কের পালিত আট সন্তানের মধ্যে অন্যতম। তবে তার নাগরিকত্ব নিয়ে ছিল বিতর্ক।

এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েল

এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী চিকিৎসক। তিনি ১৮২১ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে জন্মগ্রহণ করলেও ১১ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েল শুরুতে শিক্ষকতা করলেও মনস্থির করলেন তিনি চিকিৎসক হবেন। ১৮৪৯ সালে জেনেভা মেডিকেল কলেজ থেকে এলিজাবেথ ‘ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি’ অর্জন করেন। তিনি ফ্রান্সের এক হাসপাতালে ও পরে লন্ডনে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ১৮৯৫ সালে এলিজাবেথ ডাক্তারি শাস্ত্রের ওপর একটি বই প্রকাশ করেছিলেন।

ওয়াঙ্গারি মাথাই

প্রথম শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নারী অধ্যাপিকা ওয়াঙ্গারি মাথাই। ১৯৪০ সালের ১ এপ্রিল কেনিয়ার নায়েরি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কেনীয় নাগরিক হিসেবে তিনিই প্রথম নোবেল শান্তি পদক পেয়েছিলেন। এ ছাড়া পূর্ব এবং মধ্য আফ্রিকায় তিনিই প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনকারী নারী। ১৯৭৭ সালে গ্রিন বেল্ট মুভমেন্ট নামের পরিবেশবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে আজীবন পরিবেশ রক্ষায় সংগ্রাম করেছেন মাথাই। এ ছাড়া নাগরিক ও নারী অধিকারের জন্যও আজীবন লড়াই চালিয়ে গেছেন এই সংগ্রামী নারী ওয়াঙ্গারি মাথাই।

মাদার তেরেসা

মহীয়সী নারী মাদার তেরেসার জন্ম ১৯১০ সালেন ২৫ আগস্ট। তিনি আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত ভারতীয়। মাদার তেরেসা ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। কিন্তু দেশ বা কালের সীমানা ডিঙ্গিয়ে আর্ত মানবতার সেবায় ছুটেছেন আজীবন। দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের অবলম্বন হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অব চ্যারিটি নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ভারত থেকে শুরু হয়ে সমগ্র বিশ্বে তার এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। আর ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। তিনি বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে এইচআইভি-এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মার চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম এবং বিদ্যালয়সহ মিশনারিজ অব চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র নির্মাণে অবদান রেখেছেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অব লোরেটো সংস্থায়। সারা বিশ্বের জন্য মাদার তেরেসা ছিলেন এক অনুপ্রেরণীয় নারী।

মার্থা গেলহর্ন

মার্থা গেলহর্ন বিশ্বের প্রথম যুদ্ধ সাংবাদিকতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। নারীরাও যুদ্ধ সাংবাদিকতায় পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, মার্থা গেলহর্নই প্রথম এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দীর্ঘ ৬০ বছরের সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরত ছিলেন এই প্রথিতযশা সাংবাদিক। সর্বপ্রথম যুদ্ধ সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৩৬ সালে ঘটে যাওয়া স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার কভার করার মধ্য দিয়ে। তারপর কভার করেছেন একে একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতো দুনিয়া কাঁপানো যুদ্ধগুলোর তরতাজা সব ঘটনা।

সিলভিয়া প্লাথ

সিলভিয়া প্লাথ বিখ্যাত একজন আমেরিকান কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখিকা। তিনি ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে জন্মগ্রহণ করেন। স্মিথ কলেজ, নিউনহাম কলেজ এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার শিক্ষা সম্পন্ন করেন। সিলভিয়া ১৯৫৬ সালে তার সমসাময়িক কবি টেড হিউজেকে বিয়ে করে ইংল্যান্ডে চলে আসেন। প্ল্যাথ তার প্রকাশিত দ্য কলোসাস অ্যান্ড আদার পোয়েট্রি এবং এরিয়েল কাব্য সংকলনে স্বীকারোক্তিমূলক কাব্যধারার সূচনা করেছিলেন। তিনি ১৯৮২ সালে কবিতায় মরণোত্তর পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেছেন।

ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা

ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা বিশ্বের প্রথম নারী যিনি মহাশূন্যে পরিভ্রমণ করেন। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন মহাকাশযান ভস্তক-৬ এ করে ৭১ ঘণ্টায় ৪৮ বার কক্ষপথ পরিভ্রমণ করেন। চার শতাধিক আগ্রহী নারীর মধ্য থেকে তিনি মহাশূন্য অভিযানের জন্য সুযোগ পেয়েছিলেন।

নভোচারী দলে যোগদানের ফলে সোভিয়েত

বিমানবাহিনীতে প্রথম বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশ গমনের সৌভাগ্য অর্জন করেন। ভস্তক-৫ এর নভোচারী ভ্যালেরি এফ বাইকোভস্কিকে সঙ্গে নিয়ে ১৯ জুন পৃথিবীতে অবতরণ করেন।

জোয়ান অব আর্ক

পূর্ব ফ্রান্সের এক সামান্য কৃষকের ঘরে জন্মেছিলেন জোয়ান। ফরাসি সেনাবাহিনীর হয়ে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই ফ্রান্স জিতে নেয় তাদের বেহাত হয়ে যাওয়া ভূমি। তিনি সপ্তম চার্লসের ক্ষমতা আরোহণের পেছনেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশের জন্য গৌরবময় লড়াই করলেও তাকে বারগুনডিয়ানরা আটক করে ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ফরাসি বীর কন্যা জোয়ান অব আর্ককে ১৯ বছর বয়সে ১৪৩১ সালের ৩০ মে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। অনেকের ধারণা ছিল ভবিষ্যৎ দেখার ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল তার।

মেরি ক্যুরি

প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। মেরি ক্যুরি ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর পোল্যান্ডের ওয়ার্সাতে জন্মগ্রহণ করেন। অসম্ভব মেধাবী এই ফরাসি বিজ্ঞানী ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার ওপর গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার পান। তিনিই ১৯১১ সালে রসায়নেও নোবেল পুরস্কার জয় করে প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী হিসেবে বিজ্ঞানের দুটি ভিন্ন শাখায় দুবার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ইতিহাস তৈরি করেন। তিনিই ছিলেন প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা অধ্যাপক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close